রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

লোকসানি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান

এ অকাম্য অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর জাতির ঘাড়ে লোকসানের বোঝা চাপিয়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। জোঁক যেমন মানুষ বা প্রাণিকুলের দেহ থেকে নীরবে রক্ত চুষে খায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোও একইভাবে দেশবাসীর রক্ত চুষে খাচ্ছে। লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতি বছর যে পরিমাণ লোকসান হয়, এগুলো বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে রেখে বেতন দিলেও তা হয়তো কিছুটা হলেও কমবে। দেশবাসীর ঘাড়ে বোঝা হিসেবে চেপে বসা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে ফি-বছর বাজেটে ভর্তুকিও রাখা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। লোকসানের ভারে নুয়ে পড়া অথর্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রমসহ পারফরম্যান্স চুক্তিও করা হচ্ছে। কিন্তু এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো উন্নতিই হচ্ছে না। অর্থ বিভাগ গত বছর জুন পর্যন্ত ১১২টি স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সংস্থার বকেয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। আলোচ্য সময় শেষে এসব অ-আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের নয়টি প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ৩২৬ কোটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ছয় প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৩৪ হাজার ৪৬১ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের চার প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৮ হাজার ৮৯২ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ছয় প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ২ হাজার ৬৬৮ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৪ হাজার ৭৩১ কোটি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তিন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৩ হাজার ৮৭৯ কোটি, অর্থ বিভাগের ১০ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৫ হাজার ১৬৭ কোটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫২ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ১২ হাজার ১৮০ কোটি, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তিন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ২৭৪ কোটি, পিকেএসএফের ১ হাজার ৪৩০ কোটি, বেপজার ৪৫০ কোটি ও বিডব্লিউডিবির ২৭২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। লাগাতার লোকসান সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি যে কোনো বিবেচনায় দুর্ভাগ্যজনক। এ অকাম্য অবস্থা থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যায়, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর