রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্নতা

ইউরোপে ভাঙনের অশনি সংকেত

ব্রিটিশদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ প্রতিষ্ঠার ধারণা বড় ধরনের মার খেয়েছে। ঐতিহাসিক গণভোটে যুক্তরাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রক্ষণশীল ও লেবার পার্টির শীর্ষ নেতারা ইউরোপীয় ঐক্যের পক্ষে প্রচার চালালেও ব্রিটিশদের জাত্যাভিমানী মনোভাবের কাছে ঐক্যের ধারণা হার মেনেছে। গণভোটে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হওয়ার পক্ষে রায় দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য যুক্ত হয়েছিল অন্য দেশগুলোর তুলনায় দেরিতে। গণভোটের মাধ্যমে অভিন্ন ইউরোপের পথে যাত্রা শুরু করে তারা। চার দশক পর বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত হলো গণভোটের মাধ্যমে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়ী হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা। যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ সে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটিশরা এ ঝুঁকির কথা মনে রেখেই স্বতন্ত্রভাবে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সাহসী সিদ্ধান্ত তাদের জন্য অশনি সংকেত হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে। ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দাম কমেছে ব্যাপকভাবে। শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এমনকি যুক্তরাজ্যের ঐক্যেও ভাঙনের আলামত দেখা যাচ্ছে। গণভোটে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে থাকার ভোট দিয়েছে। এ দুই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার জন্যও গণভোটের দাবি জানাচ্ছে। যুক্তরাজ্য ভেঙে গেলে তা ব্রিটিশ জাত্যাভিমান আরও উস্কো দিতে পারে। যুক্তরাজ্যের গণভোটের ফলাফলে ফ্রান্স ও জার্মানিতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। এ দুই দেশেও আলাদা অস্তিত্ব রক্ষার দাবি উঠতে পারে এমনটিও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেমনটি হলে তা ইউরোপীয় ঐক্যের জন্য সমাধি রচনা করবে। যুক্তরাজ্যের গণভোটের ফলাফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা গণভোটের রায়ে খুশি বলেই মনে হচ্ছে। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বাঙালিরা এ ফলাফলে নাখোশ। নাখোশ অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরাও। যুক্তরাজ্য ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের সঙ্গী হবে না আলাদা চলবে এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। আমরা আশা করব, কমনওয়েলথ দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধন অক্ষুণ্ন থাকবে। ভবিষ্যতে  আরও নিবিড় হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।

সর্বশেষ খবর