শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইবাদতের স্বর্ণ প্রহর ‘শবেকদর’

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

ইবাদতের স্বর্ণ প্রহর ‘শবেকদর’

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের প্রতি কিছু কিছু রাত উপহার দিয়েছেন ইবাদতের স্বর্ণ প্রহর হিসেবে। তার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত হলো শবেকদর যা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতে হয়ে থাকে। প্রিয় রসুল (সা.) একবার সাহাবায়ে কেরামের কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন, মূসা নবীর যুগে বনি ইসরাইল বংশে একজন ইবাদতকারী ছিল যে একাধারে এক হাজার মাস রাতবেলায় আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, ওই ব্যক্তি দিনের বেলায় জেহাদ করত এবং রাতে ইবাদত করত। এভাবে এক হাজার মাস অতিবাহিত হয়েছে। এ ঘটনা শুনে সাহাবায়ে কেরামের মনে আক্ষেপ হলো যে, অতীত যুগের লোকদের মতো লম্বা হায়াত এ যুগে আমাদের নেই। কারণ, এক হাজার মাস প্রায় তিরাশি বছর চার মাস। এত সময় বেঁচে থাকাটাই তো এ যুগে সৌভাগ্যের ব্যাপার। মহান আল্লাহ সাহাবায়ে কেরামের দীর্ঘ ইবাদতের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করলেন পবিত্র কোরআনে সূরা কদর নামে একটি পৃথক সূরা নাজিল করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন কদরের রাত কি? কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ এবং জিবরাইল তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে দুনিয়ায় নেমে আসে যাবতীয় শান্তি ও কল্যাণসহকারে। তা অব্যাহত থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। সূরা : কদর, আয়াত ১-৫। পারা ৩০। অর্থাৎ শবেকদরের এক রাতের ইবাদত মহান আল্লাহর দরবারে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই সূরা নাজিল হওয়ার পর সাহাবাগণ ভীষণ খুশি হলেন। ইবাদতের স্বর্ণ প্রহর খুঁজে পেলেন। এক রাতের ইবাদতে হাজার মাস ইবাদতের মহাসৌভাগ্যের দেখা পেলেন। হাদিসের কিতাবগুলোতেও শবেকদরের মর্যাদা বারবার উল্লেখ হয়েছে। হজরত সালমান ফারসী (রা.) বলেন, একবার রসুল (সা.) আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মোবারক মাস। এটি এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করে তার আগের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত ইবাদতে কাটাবে তার আগের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি, মুসলিম। বুখারি শরিফের বর্ণনায় রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে শবেকদর তালাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।  মুসলিম শরিফের বর্ণনায় শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর