মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি দুটি

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান

মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি হলো দুটি। এক. কথার মাধ্যমে দুই. কাজের মাধ্যমে। আজানের সময় চুপচাপ বসে আমি যে উত্তর দিয়েছি তাতে আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে চুপচাপ বসে থাকার দ্বারাও দাওয়াতের কাজ হয়।

যারা দায়ী ও মুবাল্লিগ, তাদের নাম আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তালিকায় ওপরের সারিতে থাকে। অন্তরে যার কালেমা তাইয়িবা আছে তারা সবাই দায়ী হওয়ার যোগ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কালেমা পড়বে সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আমার অবর্তমানে আমার কাজগুলো সে করবে। যদি কেউ বলে যে, আমি আলেম নই, আমি কৃষক বা ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার, তাহলে এটা তার আসল পরিচয় হবে না, তার আসল পরিচয় হলো সে আখেরি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত বা রুহানি সন্তান। পিতা না থাকা অবস্থায় সন্তানের দায়িত্ব হয় পিতার পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান-ফ্যাক্টরি ইত্যাদি পরিচালনা করা। এটা যদি সন্তানের পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে মানুষ বলবে এরা অযোগ্য সন্তান, এরা থাকা না থাকা সমান। বস্তুত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমের ফ্যাক্টরির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো নিজে আলেম হওয়া এবং অন্যকে আলেম বানানো। তদ্রূপ ইলম অনুযায়ী নিজে আমল করা এবং অন্যকে আমলের প্রতি দাওয়াত দেওয়া। মনে রাখতে হবে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ও শরিয়তকে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ ও গাফেল লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব প্রত্যেক সমঝদারের। কৃষক, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসারকে জিজ্ঞাসা করা হবে না যে, তুমি আলেম ছিলে কিনা? বরং জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি শরিয়তের ব্যাপারে যা জানতে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছিলে কিনা? নামাজ পড়া ফরজ, ঘরে-বাইরে পর্দা করা ফরজ, এ ধরনের অনেক বিধানই তো তুমি জানতে। এসব বিষয় অন্যকে জানানোর কী প্রচেষ্টা চালিয়েছ? তোমার অধীনদের এসব শিক্ষা দিয়ে আমলের ওপর ওঠানোর জন্য কেমন ফিকির ও মেহনত করেছ? তাদের পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবনের ব্যাপারে তো দিনের পর দিন ফিকির করেছ, অথচ স্থায়ী জীবনের ব্যাপারে রয়েছ উদাসীন। কাজের মাধ্যমে প্রদত্ত দাওয়াতটাই অধিক ক্রিয়াশীল হয়। আমার চুপচাপ আমলের মাধ্যমে আপনারা যেমন বুঝতে পেরেছেন যে, আমি আজানের উত্তর দিচ্ছি এবং আপনারাও উত্তর দিয়েছেন, ঠিক এভাবে আপনারাও যদি আজানের মুহূর্তে নিজের কর্মক্ষেত্রে এভাবে আমল করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার অধীন কর্মচারীরা আমল করতে শুরু করে দেবে। আপনি যদি নামাজের পাবন্দ হন তাহলে আপনার শ্রমিক যারা নামাজ পড়ে তাদের নামাজের প্রতি উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পাবে আর যারা পড়ে না তাদের অন্তরে এই অনুশোচনা সৃষ্টি হবে যে, আমার ফ্যাক্টরির মালিক নামাজ পড়ে, আজানের জওয়াব দেয়, এভাবেই হয়তো সে আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে কোটিপতি হয়েছে। তাই রবের মর্জি ও নিয়ামত পাওয়ার জন্য আমাকেও নামাজ পড়তে হবে, আজানের জওয়াব দিতে হবে।

লেখক : খতিব, গুলশান

সেন্ট্রাল জামে মসজিদ

সর্বশেষ খবর