শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক আমলই নেক আমল

মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

হাকীমুল উম্মত হজরত থানবী (রহ.) এক বুজুর্গের ঘটনা নকল করেছেন যে, সে তার বাগানের দারোয়ানের স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয় এবং কৌশল করে দারোয়ানকে দূরে কোথাও কাজের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারপর দারোয়ানের বাসার ভিতরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে বলল, সব দরজা-জানালা বন্ধ করে এসো, কাজ আছে। দারোয়ানের স্ত্রী মালিকের মতলব বুঝে ফেলল। যা হোক দরজা-জানালা বন্ধ করে এসে হাজির হলো। মালিক জিজ্ঞেস করল, সব দরজা বন্ধ করছ? সে বলল হ্যাঁ, একটি দরজা ছাড়া সব বন্ধ করেছি। মালিক বলল, সেটাও বন্ধ করে এসো। দারোয়ানের স্ত্রী বলল, সেটা বন্ধ করতে পারি না। মালিক বলল, সে আবার কোন দরজা? দারোয়ানের স্ত্রী বলল, যে দরজা দিয়ে আল্লাহপাক তাকিয়ে আছেন সে দরজা বন্ধ করতে পারি না। মহিলার কথা শুনে মালিকের মনে ঝড় বয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি ও তওবা করতে শুরু করে দিল। এ ধরনের হাজারো ঘটনা রয়েছে। এখান থেকে বুঝে আসে, সহিহ-শুদ্ধ আমল মানুষকে গোনাহ থেকে বিরত রাখে। আমাদের বুঝে আসে না যে, আমরা নামাজ পড়ি, অন্যান্য নেক আমলও করি, সঙ্গে সঙ্গে গোনাহও করি কেন? হজরতে সাহাবায়ে কেরাম নামাজ পড়তেন আমরাও নামাজ পড়ি। সাহাবায়ে কেরামের নামাজকে আল্লাহপাক আমাদের জন্য মাপকাঠি বানিয়েছেন। এখন বলুন, আমাদের নামাজ কি তাদের নামাজের মতো হয়? না হওয়ার একটি কারণ হলো আমরা চেষ্টা করেও তাদের মতো পারি না। তখন আল্লাহর ফয়সালা হলো, চেষ্টা করেও যখন তোমরা সক্ষম না হও তখন আমি তোমাদের পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করব। কিন্তু অবহেলা ও অলসতা করার কারণে যদি তোমাদের নামাজ পরিশুদ্ধ না হয়, তাহলে এর  বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। দুনিয়াতে বিভিন্ন বালা-মসিবত আসবে আর আখেরাতের মসিবত তো পরে আসবেই। আমি নামাজ পড়ছি আবার আমার দ্বারা গোনাহও হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আমার নামাজ পরিশুদ্ধ হচ্ছে না। আলেমদের কাছে গিয়ে প্রাক্টিক্যাল অনুশীলন করা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের তাওফিক দান করুন।

মোট কথা পরিশুদ্ধ আমল করতে হবে, পরিশুদ্ধ আমলকেই নেক আমল বলে। যে আমল এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক হয় সেটাই নেক আমল। আমি বলি পরিশুদ্ধ হওয়াটা হলো আমলের জন্য রুকন। যেমন নামাজের মধ্যে রুকু, সেজদা, কেরাত রুকন। এগুলো ছুটে যাওয়ার পর সেজদায়ে সাহো দিলেও নামাজ হবে না। ঠিক আমলেরও দুটি রুকন আছে। তা হলো, এখলাস ও সুন্নত। যে কোনো আমল এখলাসপূর্ণ ও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। কোনো আমলে এ দুটি না থাকলে ফলাফলও উল্টো হবে। কেয়ামতের দিন আমল শুদ্ধ না অশুদ্ধ, ইমানওয়ালা না কুফরওয়ালা, এগুলো যাচাই করা হবে। সে জন্য একটি দিন নির্ধারণ করেছেন। কোরআনে পাকে বলা হয়েছে— কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার কৃতকর্মের ফল দেওয়া হবে। হয়তো পুরস্কৃত হবে, নয়তো সাজাপ্রাপ্ত হবে।  এর কোনো বিকল্প নেই। আমল ভালো হলে পুরস্কৃত হবে, অনন্তকাল জান্নাতে থাকবে, আর মন্দ হলে সাজাপ্রাপ্ত হবে।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ।

সর্বশেষ খবর