রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বিএনপি কতটা সৎ?

কাজী সিরাজ

জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বিএনপি কতটা সৎ?

সাম্প্রতিক কয়েকটি টার্গেট কিলিং বিশেষ করে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের রক্তাক্ত তাণ্ডব এবং শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের প্রবেশপথে বোমা হামলার ঘটনা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে তা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে সব মহল থেকে। সব রাজনৈতিক দলই জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। কারও কথায় কোনো ফাঁক নেই, এক সরকার, সরকারি দল এবং তাদের অনুকম্পাধন্য ১৪-দলীয় জোট সহযোগীরা ছাড়া। সরকার পক্ষ রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি সুচতুরভাবে এড়িয়ে গিয়ে জনগণের ঐক্যের কথা বলছেন। এটা ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো বিষয়। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল জনগণকে যেভাবে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্য ছাড়া জনগণের ঐক্য বা জাতীয় ঐক্যের চিন্তাকল্পনা-বিলাস ছাড়া আর কিছু নয়। সরকার পক্ষ বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যের ব্যাপারে দলটিকে জামায়াত ত্যাগের শর্ত দিচ্ছে। কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডেকে জামায়াত ছেড়ে বিএনপিকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না। ওরকম আমন্ত্রণে সাড়া না দিলে বিএনপিকে অভিযুক্ত করা যেত। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে ২০-দলীয় জোটে আছে। ঐক্যের উদ্যোগে আয়োজিত কোনো সভায় জোটকে না ডাকলেই তো হয়। জামায়াতের ব্যাপারে সরকারি আপত্তির যুক্তিসংগত কারণও আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে একটি রায় প্রদান করেন। জামায়াত সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। আপিল মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। আপিলের রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে দেশের একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকার না করে উপায় নেই। তবে বৈধ একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা পালনের অভিযোগ থাকতেই পারে এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে সে অভিযোগ আছে। আরও একটি কারণে সরকার পক্ষ এবং দেশের প্রগতিশীল গণতন্ত্রীরা জামায়াতের বিরোধিতা করে। সে কারণটি হচ্ছে তাদের ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। যারা জঙ্গি তত্পরতা চালাচ্ছে, ধর্মের নামেই চালাচ্ছে। তাই এই ধরনের তত্পরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে, জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে, বিশেষ করে কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কারও কারও শেকড় ছিল জামায়াতে— এটা বহুল প্রচারিত। তাই জঙ্গি তত্পরতার ব্যাপারে এবং জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান প্রকাশ্যে স্পষ্ট না করলে তাদের ব্যাপারে সরকার পক্ষের সন্দেহ ও আপত্তিকে হাল্কা করে দেখার অবকাশ নেই। প্রশ্নটি বেগম খালেদা জিয়ার সামনেও উত্থাপিত হয়েছে। গত ১৪ জুলাই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তার আলোচনায় তা বেশ জোরালোভাবেই এসেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঐক্য উদ্যোগ থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিতে বলেছেন বেগম জিয়াকে। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘ডান, বাম, প্রগতিশীল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে আগে বিএনপিকে এটা ঠিক করতে হবে যে, তারা জামায়াতের সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় সম্পর্ক রাখবে। ১৯৭১ সালের কৃতকর্মের জন্য জামায়াতকে মাফ চাইতে হবে। তা না হলে জামায়াতকে আলাদা রেখে ১৯৯১ সালের আদলে কাজ করতে হবে’ (প্রথম আলো, ১৫ জুলাই ২০১৬)। দেশের প্রবীণ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। এই ধরনের আলোচনায় সব পক্ষকে খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবাইকে মত দিতে হয়— পক্ষে কিংবা বিপক্ষে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটা খুবই জরুরি। কিন্তু ১৪ তারিখের সভায় জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রক্রিয়া নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া কী বলেছেন বা আদৌ কিছু বলেছেন কিনা তা জানা যায়নি।

জামায়াত সম্পর্কে ‘কিন্তু’ আছে সবার মনে। প্রধান দুই দলের মধ্যেও আছে। কিন্তু দলটির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ের ব্যাপারে কেউ কিন্তু স্পষ্ট করে ‘ইয়েস’ অথবা ‘নো’ বলছে না। আওয়ামী লীগ জামায়াত প্রশ্নে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়, কিন্তু কখনো দলটির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে না বা অতীতে যেমন একযোগে অথবা যুগপৎ কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করেছে তেমন কোনো কাজ করবে না বা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তাদের নিয়ে ভোটের খেলা খেলবে না এটা বলছে না, জাতির কাছে এমন কোনো প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে না। বরং এতদিন জামায়াত নিষিদ্ধকরণ প্রশ্নে তারা যেভাবে সোচ্চার ছিল, সে সোচ্চার কণ্ঠ এখন কেমন জানি ম্রিয়মাণ, ক্ষীণ হয়ে গেছে। সম্প্রতি তাদের পক্ষের ‘তারকা বুদ্ধিজীবীরা’ জামায়াত নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না এমন কথাও বলতে শুরু করেছেন। বিষয়টি একেবারে গুরুত্বহীন নয়। রাজনীতিতে সব বিষয় দমন-পীড়ন চালিয়ে বা রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে সমাধান করা যায় না। কিছু কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে হয়। সরকার ও সরকারি দল জামায়াত নিয়ে যদি তেমন কোনো রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজে এবং বিপথগামিতা থেকে একাত্তরের ‘বেসলাইনে’ আনার চেষ্টা করতে চায় তা করতেই পারে। জামায়াত প্রসঙ্গে এ কথাগুলো এখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। জামায়াত সম্পর্কে শাসক দলের চিন্তায় যদি ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসে তা হলে বর্তমান সময়ের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে বিএনপিকে আগে জামায়াত ছাড়ার শর্তারোপ ঐক্যের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাবেরই পরিচায়ক। শর্ত যদি দিতে হয় তা হলে তা এমন হতে পারে যে, জাতীয় ঐক্য মোর্চায় জামায়াত থাকবে না বা জামায়াতকে রাখা যাবে না। জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক কী হবে তা বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে দেওয়া উচিত। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনাকালে বিষয়টি ইতিমধ্যে উঠে এসেছে। বিএনপির সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে কিংবা যারা বিএনপির ভিতরের খবর রাখেন তারা জানেন, দলের তরুণরা তো বটেই, প্রবীণদের মধ্যেও অনেকে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের অপিনিয়ন হোল্ড করেন। বিএনপি দলের বাইরে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মিত্রদের যদি ধরে রাখতে চায় এবং দলের ঐক্য ও সংহতি যদি অটুট রাখতে চায় তাহলে জামায়াত প্রশ্নে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে এবং সিদ্ধান্তটা হতে হবে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার। প্রথম ২০-দলীয় জোটকে নন-ফাংশনাল করে আগামী তিন বা ছয় মাসের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারে। সভা, সমাবেশ, মিছিল বিক্ষোভ সব হবে বিএনপির দলীয় ভিত্তিতে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে ২০-দলীয় জোটের কোনো সভাও হবে না। বিএনপির নেতৃত্বে কোনো জঙ্গিবাদবিরোধী-ঐক্যজোট হলে তাতে জামায়াতকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাহলেই জামায়াতের সঙ্গে দূরত্বের বার্তাটা যেমন যাবে, জামায়াতের সঙ্গে সরকার ও সরকারি দলের মনোভাব ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ বা পুনঃনির্ণয়ের একটা স্পেসও বহাল রাখা যাবে ২০-দলীয় জোট আপাতত ভেঙে না দিয়ে। অবশ্য ২০-দলীয় জোট ভেঙে দিলেও পরবর্তীকালে কারও সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন বা নির্বাচনের ‘আলাপন’ হতে পারে না তা নয়। এই জামায়াত নিয়ে চিন্তা দুই দলের কারও মাথা থেকেই সরানো যাবে না আপাতত। নির্বাচন নিয়ে দূরবর্তী চিন্তাটা বাদ দিয়ে এখনকার জটিল সংকট মোকাবিলায় জামায়াত ছাড়া সুদৃঢ় গণঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। জরুরি কমন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ঐক্য এবং সমঝোতা হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কোনো দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দল এর বাইরে থাকবে? সরকার ও সরকার পক্ষের অবস্থান এবং বিএনপির সর্বশেষ অবস্থান থেকে বলা যায়, সরকারি অনীহার কারণে কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ার সুযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এ ব্যাপারে তার অবস্থান ঐক্যের পক্ষে পরিষ্কার করলেও জামায়াতের ব্যাপারে অবস্থানটা স্পষ্ট করছে না। আওয়ামী লীগও এটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ঐক্য উদ্যোগের ‘আবেদন’টাকে দুর্বল করছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার হয়তো ভাবছে, বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যজোট বা কোনো ঐক্য মোর্চা করলে সরকারের এই দুর্বলতা প্রকাশ পাবে যে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ। ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হলে কৃতিত্বে ভাগ পাবে বিএনপিও। সরকার তা চায় না। তারাই সব কৃতিত্বের ‘হকদার’ হতে চায়, থাকতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, এরকম হামলা (গুলশান-শোলাকিয়ার মতো) আরও হতে পারে, জাতি তখন তো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার কথা।

প্রধানমন্ত্রী যে শঙ্কার কথা বলেছেন, তেমন ঘটনা রোধ করা একা সরকার বা সরকারি দলের পক্ষে সম্ভব নয়। আক্রমণগুলো সরকার বা সরকারি দলের ওপর হয়নি। এ হামলা হয়েছে রাষ্ট্রের ওপর, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পারে। জনগণের এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এখানে জামায়াত ইস্যু তুলে ঐক্যের ভিত দুর্বল করা অনুচিত। বিএনপি তো ঐক্য মোর্চা হলে তাতে জামায়াতকে রাখতে হবে এমন কোনো শর্ত দেয়নি। দুই পক্ষ এ ব্যাপারে স্ব স্ব অবস্থান স্পষ্ট করে ঐক্য গড়ে তোলা খুবই জরুরি। যত দেরি হচ্ছে ততই ক্ষতি হচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়ার ‘বিশিষ্টজনদের’ সঙ্গে সভাটি দলের হীনমানসিকতা অথবা তাদের প্রতি দেশের বিশিষ্টজনদের অনীহা কিংবা মিসট্রাস্ট প্রকাশ করেছে। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়া অন্য যারা সভায় উপস্থিত ছিলেন তারা তো বিএনপির কর্মী-ক্যাডার স্থানীয় শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী— হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের (বিএনপি-জামায়াতপন্থি) নেতা অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম জিয়ার মনোনীত বা পৃষ্ঠপোষকতাধন্য ভিসি ছিলেন। অধিকাংশই দলের অঙ্গদল-সহযোগী দলের অথবা জামায়াতপন্থি পত্রিকার সম্পাদক ও জামায়াতী পেশাজীবী নেতা। জামায়াতের পত্রিকা নয়া দিগন্ত আর সংগ্রামের সম্পাদক ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো পত্রিকার সম্পাদক নেই? রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, আমানউল্লাহ কবির, নূরুল কবীররা কোথায়? বিশিষ্টজনদের জন্য ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ড. আকবর আলি খান, বদিউল আলম মজুমদার, ড. তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এমনকি অ্যাড. সুলতানা কামালকেও ডাকা যেত। কেউ কেউ আসতেনও। এদের মধ্যে অনেকে আবার আওয়ামী লীগের ডাকা বৈঠকেও হয়তো যাবেন। প্রকৃত বিশিষ্টজনরা তা যেতেই পারেন। এরাই নির্মোহ মতামত দেবেন। যেমন ডাক্তার জাফর এবং বারিস্টার রফিক-উল হক দিয়েছেন। এ ধরনের বিশিষ্টজনদের মতামতই মূল্যবান। ‘দলদাস’দের মত তো নিরপেক্ষ হয় না। দলীয় হীনচিন্তা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না বা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ের বিষয়টা জোরালোভাবে এসে যেতে পারে সেই আশঙ্কা কি দাওয়াত করার সময় গুলশান অফিসের কর্মচারীদের মাথায় ছিল? বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কোনো দলের বৈঠক খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। যেমন বৈঠকে দলের মধ্য থেকেও বিশিষ্ট নেতারা উপস্থিত থাকেন। বেগম জিয়ার সঙ্গেই দলের মহাসচিব ছাড়া থাকলেন কারা? আমীর খসরু মাহমুদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমদ! ব্যারিস্টার মওদুদ, খোন্দকার মোশাররফ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. মইন খান, আবদুল্লাহ আল নোমানরা কোথায়? দল কি তবে নির্দল ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণেই চলে গেল? এমন প্রশ্নও উত্থাপিত হয়েছে বৈঠকটির পর। দলের ভিতর দুর্বলতা রেখে জাতীয় বড় কাজ কী করে করবে বিএনপি? যে দল জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চার মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে অক্ষম, সে দল জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার সময় লজ্জা পাওয়ার কথা। অবশ্য ক্ষমতার কাঙ্গালদের নাকি ওসব লজ্জা-টজ্জা থাকতে নেই। তবে যে কোনো বিষয়ে আন্তরিকতা থাকলে তার মূল্য অবশ্যই আছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলার মাধ্যমে বিএনপিকে আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে হবে। ব্লেম গেম ছাড়তে হবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি তাণ্ডবে সরকার ও প্রতিবেশী দেশের সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ বেগম জিয়া ১৪ জুলাইর বৈঠকে করেছেন তার ভিত্তি কি, কোন তথ্য সূত্রে তিনি এমন অভিযোগ করলেন তার একটা ব্যাখ্যা দরকার। তা না হলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগের জন্য তার আহ্বান মেকি বলে প্রমাণিত হবে। এ ব্যাপারে সরকারি অনিচ্ছার সঙ্গে বিএনপির অনিচ্ছাও তখন এক দৃষ্টিতে দেখবে জনগণ। তা হবে দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। সরকার তার ক্ষমতার স্বার্থে বিএনপিকে নিয়ে ঐক্য গড়তে গড়িমসি করতে পারে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে ভেবে, বিএনপি কী ভেবে একদিকে ঐক্যের কথা বলছে অপরদিকে জঙ্গিকাণ্ডে সরকার ও ভারতকে দুষছে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর