তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ইবাদত। তাহাজ্জুদ নামাজ স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধ রচনা করে। তাহাজ্জুদের ফলে বান্দা আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী হয়। বান্দার সব পাপ ও গোনাহ ক্ষমা প্রার্থনার উপযুক্ত মাধ্যমও এই তাহাজ্জুদ নামাজ। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতের শেষাংশে দুনিয়ার আকাশে বিরাজমান হন এবং ঘোষণা দেন যে, কোনো প্রার্থনাকারী আছ কি? যার প্রার্থনা আমি কবুল করব। প্রয়োজন প্রার্থনার কোনো লোক আছ কি? যার প্রয়োজন আমি পূর্ণ করে দেব। এবং কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। আল্লাহ রাব্বুল হাশরের দিন সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপস্থিতিতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী প্রিয় বান্দাদের মহান সম্মানে ভূষিত করবেন। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহপাক পূর্ববর্তী মানবসমাজকে একত্রিত করবেন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী (যার আওয়াজ সমগ্র সৃষ্টিকুল শুনতে পাবে) দাঁড়িয়ে আহ্বান করবেন—হাশরের মাঠে সমবেত মানবসমাজ! আজ তোমরা জানতে পারবে যে, আল্লাহপাকের কাছে সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী কে? পরপর সে ফেরেশতা ‘যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে’ এরূপ গুণের অধিকারী লোকদের দাঁড়াতে আহ্বান করবেন। এ আওয়াজ শুনে এসব লোক (তাহাজ্জুদগুজার) দাঁড়িয়ে পড়বেন, যাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। এদের হিসাব গ্রহণ ব্যতীতই বেহেশতে প্রেরণ করা হবে। অতঃপর অন্য সব লোক দাঁড়াবে এবং তাদের হিসাব নিবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, মাজহারি, মা’আরিফুল কোরআন)। তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ’ (তাহাজ্জুদের নামাজ)। হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে এমন কক্ষ থাকবে যার ভিতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভিতর থেকে দৃষ্টিগোচর হবে।’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.) এসব কক্ষ কার জন্য? উত্তরে রসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি সালাম করে, ক্ষুধার্তকে আহার করায় এবং রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। (মুসনাদে আহমদ)।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।