শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এগিয়ে এসো চরিত্র গঠনে

মুফতি আমজাদ হোসাইন

এগিয়ে এসো চরিত্র গঠনে

পবিত্র কোরআনে সূরা মায়েদার ৯০নং আয়াতে নেশা জাতীয় বস্তুকে (রিজসুন) ঘৃণিত বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোনো বিবেকবান সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি বিবেক থাকতে ঘৃণিত বস্তুর সামনে যেতে পারে না বা তা গ্রহণ করতে পারে না, পান করা তো দূরের কথা। আজকাল এই ঘৃণিত বস্তু অর্থাৎ নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করে কত মাতা-পিতা তার আদরের দুলালকে হারাচ্ছে। সমাজ মেধাশূন্য হচ্ছে। পিতা-মাতার পেরেশানির অন্ত নেই। নীরবে নির্জনে বসে তারা চোখের পানি ফেলছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষাও অনেক সময় পাওয়া যায় না।  নেশার টাকা না পেয়ে আদরের দুলাল আপন মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেও চিন্তা করছে না। অথচ এই মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের জান্নাত। মাতাপিতাদের বলব, আপনার আদরের দুলাল কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, আপনি খেয়াল রাখুন এবং ছোটকাল থেকেই তার চলাফেরার ওপর কড়া নজর রাখুন। যাতে কোনোভাবেই অসৎ সঙ্গ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। যদি একবার অসৎ সঙ্গ পেয়ে বসে তখন  চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। বিজ্ঞ মনীষীদের দৃষ্টিতে মানুষের হায়াত তিন ভাগে বিভক্ত। এক. শৈশবকাল, দুই. যৌবনকাল, তিন. বার্ধক্যকাল। শৈশবকালে মাঠে-ঘাটে, মনের আনন্দে, গল্প-গুজবে দিবা-নিশি পার হয়ে যায়। জীবনটা ফুলের মতো পবিত্র, স্বচ্ছ কাচের ন্যায় পরিষ্কার থাকে। শিশুর মুখের নিষ্পাপ হাসি, ঘরের প্রতিটি সদস্যের মনে স্নেহের ঢেউ তুলে। আদর আর সোহাগে শিশুকে কোলে তুলে নেয়। প্রতিটি দায়িত্ববান পিতা-মাতা সন্তানকে আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। শহরে-বন্দরে প্রায় দেখা যায় ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিশিরে ভেজা কনকনে শিতের প্রভাতে শিশুকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। বিদ্যালয় থেকে আবার সময় মতো নিয়ে আসে। খারাপ পরিবেশে যেতে বারণ করে। খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করে। কারণ শৈশবকালে কোমলমতি শিশুদের দিল-দেমাগ আয়নার ন্যায় স্বচ্ছ থাকে। এই স্বচ্ছ দিলে যা প্রবেশ করাবে তাই সারা জীবন দিলের কুঠুুরিতে চিত্রাঙ্কিত হয়ে থাকবে। মেশকাত শরিফে বাবুল ঈমান বিল কদরের ১২ নং হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, প্রতিটি শিশু দুনিয়াতে আগমন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার যোগ্যতা নিয়ে, কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, নাসারা এবং অগ্নিপুজারী বানায়। বস্তুত, পরিবেশের কারণে একজন শিশুর চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র হয়। চরিত্রবান শিশুদের জন্য আদর্শ নায়ক হলেন শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর শৈশবকাল। তিনি কীভাবে চলেছেন, চরিত্র গঠন করেছেন। প্রতিটি দায়িত্ববান পিতা-মাতার উচিত নিজেরা অধ্যাপনা করে তদানুযায়ী নিজের শিশুর জীবন গঠন করা। শৈশবের পূর্ণাঙ্গ প্রভাব পড়ে কৈশোর ও যৌবনকালে। মানুষের পূর্ণাঙ্গ হায়াতের মাঝে যৌবনকালই হলো গুরুত্বপূর্ণ। পরকালে তার হিসাবও বেশি। হে যুবক! তোমাকে মনে রাখতে হবে তুমি তো সাহাবায়ে কেরামদের  উত্তরসূরি। তারা এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কত কিছুই না করেছেন। আর আল্লাহপাক তাদের যেমন দিয়েছিলেন মেধা, স্মৃতি, শক্তি, তেমনি দিয়েছিলেন আমলের জযবা। এক কথায় তারা ছিলেন আত্মশুদ্ধির জগতে পরিশুদ্ধ এক মানব। প্রতিটি মুহূর্তকে মহামূল্যবান মনে করেছেন। কাজে লাগিয়েছেন। হেলায় খেলায় অতি মূল্যবান সময় নষ্ট করেননি। হে যুবক! তোমার হাতে কেন থাকবে মদ আর সর্বনাশা নেশা জাতীয় দ্রব্য? তুমি কি কখনো চিন্তা করেছ, তুমি কে? তোমার পরিচয় কি? তোমার পূর্বসূরিদের মধ্যে কারও কি এমন সর্বনাশা নেশার অভ্যাস ছিল? যদি না থাকে তাহলে তুমি কেন এই ধ্বংসাত্মক পথে পা বাড়াচ্ছ? সাবধান! সাবধান!! এখনো সময় আছে, ফিরে এসো, তোমার হাতে থাকবে মানব সেবার বস্তু। মাথায় থাকবে দেশ ও দশের সেবা করার কলাকৌশল। হে তরুণ! তুমি তোমার জীবনকে মূল্য দিতে শিখ। তোমার সুন্দর ও আদর্শ জীবনের দিকে যেমনিভাবে তাকিয়ে আছে তোমার পিতা-মাতা, তেমনিভাবে তাকিয়ে আছে দেশ ও লক্ষ জনতা। তুমি কেন সময়ের মূল্য দিচ্ছ না কেনইবা অযথা সময় নষ্ট করছ? পাড়ায়, মহল্লায় এবং বেহুদা-আড্ডায় সময় পার করছ। আল্লাহর দেওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, দিল দেমাগ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় কর। আল্লাহও তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, ফলে তোমরা পাবে সময়, হায়াত ও রিজিকে বরকত। হে তরুণ! তুমি কি কখনো খবরের কাগজ খুলে দেখেছ? নিশ্চয় দেখেছ, তবে ভেবে দেখনি, এমন সংবাদ কেন প্রত্যহ ছাপা হচ্ছে, যা দেখে মানবাত্মা কেঁপে ওঠে। ব্যথায় চক্ষুযুগল ভারী হয়ে যায়। ভবিষ্যতের কাণ্ডারি ১৪ থেকে ১৫ বছরের যুবক বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে,  মাত্রাতিরিক্ত নেশাদ্রব্য পানাহারের কারণে কিংবা এয়ারফোন কানে পুরে রাখার কারণে এক্সিডেন্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। হে তরুণ! যৌবনকালে শরীরে থাকে শক্তি, মনে আছে হিম্মত ও সাহস, আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতগুলোকে কাজে লাগাও। এখনো সময় আছে, সমাজের প্রতিটি বিবেকবান, বিচক্ষণ ব্যক্তিরা যদি এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা না করেন। পরিণামে এক সময় দেখা যাবে সুনামি ও সিডরের মতো ঝড়ো হাওয়ায় মানুষের চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

চরিত্র বলতে কিছুই থাকবে না। মানুষের মাঝে পশুত্বের স্বভাব চলে আসবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আদর্শবান মানুষ হওয়ার তাওফিক দান করুন।  আমিন

     লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর