শিরোনাম
শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

কোরআন মজিদ এবং সুন্নাহর মর্যাদা ও গুরুত্ব

মুফতি এহসানুল হক জিলানী, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

কোরআন মজিদ এবং সুন্নাহর মর্যাদা ও গুরুত্ব

সব প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান (কোরআন) অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। দরুদ ও সালাম তার প্রতি যাকে প্রেরণ করা হয়েছে সব মানুষের প্রতি; প্রেরণ করা হয়েছে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। রহমত বর্ষিত হোক তার পরিবারবর্গের ওপর, তার সাহাবিগণের ওপর এবং সব মানুষের ওপর।

কোরআন আল্লাহর সেই কিতাব যা নিয়ে হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর অনুমতিক্রমে লাওহে মাহফুজ থেকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে অবতরণ করেছেন।

কোরআন মহান আল্লাহর কালাম। সুতরাং আল্লাহর যে শান কোরআন কারীমেরও সেই শান। কোরআন কারীমের শান সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘যদি আমি এ কোরআন পর্বতের ওপর নাজিল করতাম তবে তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ দেখতে’। (সূরা হাশর ২১)।

মহান আল্লাহ কোরআনের মর্যাদা এবং তাঁর অলৌকিকত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেন : ‘বলুন, যদি এ কোরআনের অনুরূপ কোরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কোরআন আনতে পারবে না। (বনি ইসরাইল : ৮৮)।

আল কোরআন কারীমের মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় সন্দেহ নেই। আর কোনো দিক থেকেই মিথ্যা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘এই সেই কিতাব; এতে কোনো সন্দেহ নেই’ (বাকারা : ২)। আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘এটা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। কোনো মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। সামনে থেকেও না, পেছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসাই আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ’। (হামীম আস-সাদজা : ৪১-৪২)।

মহান আল্লাহ এ কোরআন রমজান মাসে অবতীর্ণ করেছেন এবং একে সব মানুষের পথ নির্দেশ করেছেন এবং একে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারীরূপে অবতীর্ণ করেছেন, তাই ইরশাদ হয়েছে : ‘রমজান মাস, এতে মানুষের হেদায়েত এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (বাকারা : ১৮৫)

সুন্নাহ তথা হাদিসও ওহিলব্ধ একটি জ্ঞান। তবে তার শব্দ ও ভাষা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে এবং মর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেমন ইরশাদ হয়েছে এবং তিনি মনগড়া কথাও বলেন না, এটা তো ওহি যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (নাজম : ৩-৪)।

সুতরাং আমাদের উচিত সুন্নাহকেও মজবুতভাবে ধারণ করা এবং তাকে পথ নির্দেশরূপে গ্রহণ করা। যেমনটি আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘রসুলুল্লাহ তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সূরা হাশর : ৭)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা আঁকড়ে থাকবে গোমরাহ হবে না। তা হলো : আল্লাহর কিতাব এবং তার নবীর সুন্নত।’

নবী করীম (সা.)-এর পরবর্তীকালে যখন মতভেদ দেখা দেবে তখন তার সুন্নতই হবে আমাদের জন্য হেদায়েত। যেমন নবী করীম (সা.) বলেন, ‘আমার পর তোমরা প্রচণ্ড মতভেদ দেখতে পাবে, তখন তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার ন্যায়পরায়ণ হেদায়েতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নত গ্রহণ করবে। এটা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে।’

এ মহাগ্রন্থ শিক্ষা করা এবং শিক্ষাদানের ফজিলত বর্ণনা করে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।

অন্যত্র তিনি বলেন : অর্থাৎ যে কোরআন পাঠ করল, তার হালালকে হালাল বলে মান্য করল এবং হারামকে হারাম বলে মান্য করল, আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার আপনজনদের মধ্য থেকে এমন দশজনের ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন যাদের জন্য জাহান্নাম অবধাবিত হয়ে গিয়েছিল।

হে মুমিন ভাইয়েরা আমার! এখন আমাদের উচিত আল্লাহর কিতাব কোরআন কারীম ও রসুলে কারীম (সা.)-এর সুন্নত আঁকড়ে ধরা এবং তার যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা যাতে আমরা উভয় জগতের কল্যাণ ও সফলতা লাভ করতে পারি। আর তেমনিভাবে আমাদের সেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত, যা কোরআন হাদিসের বিরোধী যাতে আমরা সব ধরনের গোমরাহী থেকে হেফাজতে থাকতে পারি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন এবং তিনিই আমাদের রক্ষা করুন।

বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে (সূরা আর-রাহমান : ১-৪)।

এই হলো আমার বক্তব্য। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই আমার জন্য ও তোমাদেরসহ সব জীবিত-মৃত মুমিন-মুমিনাতের জন্য। সুতরাং তোমরা তার কাছে ক্ষমা চাও।  নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাকারী আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা করে থাক।

সর্বশেষ খবর