মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

প্রাচীন আরব কবিতা

প্রাক-ইসলামী যুগে লিখন প্রণালির তেমন উন্নতি হয়নি বলে আরবরা তাদের রচনার বিষয়বস্তুগুলো মুখস্থ করে রাখত। তাদের স্মরণশক্তি ছিল খুব প্রখর। তারা মুখে মুখে কবিতা পাঠ করে শুনাত। কবিতার মাধ্যমে তাদের সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশ পেত। এ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক নিকলসন বলেন, ওই যুগে কবিতা কিছুসংখ্যক সংস্কৃতিমনা লোকের বিলাসিতার বস্তু ছিল না; বরং এটা ছিল তাদের সাহিত্য প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। এ কারণে লোকগাথা, প্রবাদ, জনশ্রুতির ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী সময়ে আরব জাতির ইতিহাস লেখা হয়েছে।

প্রাক-ইসলামী যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্যচর্চায় আবরদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। ওই যুগে কাসিদা বা গীতিকাব্য রচনা করে আরবরা অশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। গ্রিকরা যেমন স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের জন্য গৌরব অনুভব করে, গীতিকাব্য রচনার জন্য আরবরাও অনুরূপ গৌরবের দাবিদার ছিল। পিকে হিট্টি বলেন, কাব্যপ্রীতিই ছিল বেদুঈনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ। ওই যুগে আবরদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উত্কৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। অধ্যাপক হিট্টির মতে, পাক-ইসলামী সময়ে উকাজের মেলা আরবের ‘Academic Franchise’ হিসেবে কাজ করত। এ সাহিত্য সভায় কাব্যচর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিরা নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। কথিত আছে, এ কাজের মেলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাতটি কবিতাকে সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবাগৃহের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। এ ঝুলন্ত সাতটি গীতি কবিতাকে আরবিতে ‘সব’ অ-মু’আল্লাকাত’ বলা হয়। প্রাচীন গীতি কবিতার মধ্যে এটি ছিল শীর্ষস্থানীয়। আজও আরবি ভাষাভাষী বিশ্বে কবিতা রচনার সেরা গ্রন্থ হিসেবে ‘সব’ অ-মু’আল্লাকাত’ সম্মানিত হয়। এ গীতি কাব্যের রচয়িতাগণের মধ্যে ইমরুল কায়েস, তারাফা-বিন-আবাদ, হারিস-বিন-হিল্লিজা, আনতারা-বিন-সাদাত আল-আবসী, লাবিদ-বিন-রাবিয়াহ ও আমর ইবনে কুলসুম প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর