বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
পাঠক কলাম

ইউপি সচিবদের বদলিতে যথেচ্ছতা

পাবনা জেলা প্রশাসন ইউপি চেয়ারম্যানদের সুপারিশ উপেক্ষা করে ৬১ জন ইউপি সচিবকে বিভিন্ন ইউপিতে একযোগে বদলি করেছেন। ইউপি সচিবদের বদলির কথা জানতে পেরে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বর্তমান ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানরা ১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ও দায়িত্বভার না নেওয়া পর্যন্ত বদলির আদেশ স্থগিতের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাদের আবেদন উপেক্ষা করে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ইউপি সচিবদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন পাবনার জেলা প্রশাসক। এতে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ভাবনাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ৩ জুলাই ’১৫ তারিখের এক আদেশবলে জেলা প্রশাসন তাদের বদলি করেছেন। উপরোক্ত আদেশে বলা হয়েছে— ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাধারণ ও রাজস্ব প্রশাসনে নিয়োজিত তিন বছরের অধিককাল যাবৎ নিয়োজিত কর্মচারীদের বদলি করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ইউপি সচিবদের বেতন রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হয় না। তাদের বেতনের ৭৫% কেন্দ্রীয় সরকারের মঞ্জুরি-সাহায্য খাত থেকে এবং ২৫% ইউনিয়ন পরিষদের খাত থেকে দেওয়া হয়। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী নন। তারা স্থানীয় সরকারের কর্মচারী। সে কারণে তারা ইচ্ছা করলে সরকারের অন্যান্য বিভাগে বদলি হতে পারেন না। তাদের বদলি শুধু ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের চাকরি অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো না হওয়ায় তাদের কোনো পেনশন সুবিধা নেই। ফলে মন্ত্রিপরিষদের উপরোক্ত আদেশ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের এসিআর লিখে থাকেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বেতন বর্ধিত করাসহ বদলি করার নিয়ম রয়েছে। অথচ পাবনা জেলা প্রশাসক আগেকার সব নিয়ম উপেক্ষা করে তাদের একযোগে বদলি করেছেন। জনৈক ইউপি সচিব এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের চাকরি জাতীয়করণের কথা বললে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘তোমরা স্থানীয় সরকারের কর্মচারী। তোমাদের চাকরি সরকারিকরণ হয় কীভাবে!’ অথচ বদলি কিংবা শাস্তির সময় সরকারি চাকরির মতো আচরণ করা হয়। জনৈক ইউপি চেয়ারম্যান অনুরূপ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমলারাই স্থানীয় সরকারের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থানীয় সরকারকে শিকলবন্দী করে রাখতে সচেষ্ট রয়েছে।’ এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তাদের বদলির ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। উন্নত বিশ্বে স্থানীয় সরকারের কর্মচারীদের নিয়োগ-পদোন্নতি স্থানীয় সরকারই করে থাকে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হাত থাকে না।’

আমিরুল ইসলাম হিরু

ঈশ্বরদী বাজার, পাবনা।

সর্বশেষ খবর