বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিচিত্রিতা

নীল আগ্রাসন

শিল্প বিপ্লবের গোড়ার দিকের কথা, যখন ইংল্যান্ডে উন্নত বস্ত্রশিল্প গড়ে ওঠে এবং কাপড়ে রং করার জন্য প্রচুর নীলের প্রয়োজন হয়। নীলের এই বিশাল চাহিদা পূরণের জন্য লুইস বন্ড নামক জনৈক ফরাসি নীলকর ১৭৭৭ সালে অবিভক্ত ভারতের কলকাতার নিকটবর্তী চন্দননগরে সর্বপ্রথম নীলচাষ শুরু করে। পরবর্তীতে ১৭৭৮ সালে জনৈক ব্রিটিশ নীলকর ক্যারল ব্লুম প্রথম বঙ্গদেশে নীলচাষ শুরু করে। অবিভক্ত ভারতে নীলফামারীর উপযুক্ত জলবায়ু এবং সস্তায় নীল উত্পাদনের বিষয়টি বিবেচনায় ব্রিটিশরা নীলফামারীতে নীল চাষ করে। ১৮০১ সালের ১০ এপ্রিল ১৩ জন জমিদার স্বাক্ষরিত অভিযোগ নামায় দেখা যায়, বিজার্স বর্তমান নীলফামারীর চিনিরকুঠি এবং দুরাকুঠি, বাফটন ডিমলায়, আর ব্রাউড কিশোরগঞ্জ ও ডব্লিউ টেরানিক্স টেঙ্গনমারীতে নীলকুঠি স্থাপন করেছিল। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উত্পাদিত হতো, ফলে নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এ অঞ্চলে। আঠারো শতকেই বাংলার অন্য স্থানের মতো নীলফামারীর সর্বত্রই নতুন নতুন নীল Concern-এ ছেয়ে যায়। নীলফামারী থানার দারওয়ানিতে অবস্থিত কুঠিপাড়ার দারোয়ানি কুঠি, সঙ্গলসীর নীলকুঠি, নীলফামারী মহকুমা প্রশাসকের কুঠি (বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব), নীলফামারী সদরের নটখানা, তরণীবাড়ি, কচুকাটা, রামনগর, বাহালীপাড়া, ইটাখোলা, গোড়গ্রাম, রামকলা, খোকসাবাড়ি, চড়াইখোলা, কিশোরগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী নীলকুঠি, পানিয়াল পুকুর, বেরাডাঙ্গা, দলিরাম, সৈয়দপুর থানার কেল্লাবাড়ি লক্ষ্মণপুর, শাসকান্দর, বোতলাগাড়ি, পোড়াহাট প্রভৃতি এলাকায় এখনো নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। নীলফামারীসহ বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগে ছিল Robert Watson & Company. পর্যায়ক্রমে নীলফামারী জেলার সব কৃষিজমিতেই নীলচাষ শুরু হয়। নীলফামারী সদর থেকে ডিমলা, জলঢাকা, টেঙ্গনমারী থেকে কিশোরগঞ্জগামী পথের দুই পাশে একের পর এক নীলচাষের খামার গড়ে উঠতে শুরু করে। ফলে সবুজ জমিগুলো নীলময় হয়ে ওঠে। নীল কারবার পরিচালনার জন্য এ অঞ্চলে একটি বোর্ড ছিল। যে নীলকুঠি থেকে নীল কারবার পরিচালনা করা হতো তাকে বলা হতো সদর কুঠি বা Concern| জনশ্রুতি আছে, নীলফামারী জেলার বর্তমান অফিসার্স ক্লাবটি ছিল সদর কুঠি। এ সদর কুঠিতে অবস্থিত ছিল কারবার পরিচালনা বোর্ড।

এ নীল কারবার বোর্ড প্রতি কুঠিতে একজন করে ম্যানেজার বা অধ্যক্ষ নিয়োগ করত। তাকে বলা হতো বড় সাহেব এবং তার সহকারীকে বলা হতো ছোট সাহেব।  এই পদ দুটি সর্বদা শ্বেতকায় লোকদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বাকি পদ ছিল স্থানীয়দের জন্য।

অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর