শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মসজিদের প্রতি সম্মান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান

মসজিদ আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর যত ঘর আছে সবই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ঘর; তবে মানুষ সেগুলোকে নির্মাণ করে, তাই নিজের ঘর বলে মনে করে। লোকে নির্মাতার নাম উল্লেখ করে বলে অমুকের ঘর। এমনিভাবে মসজিদ আল্লাহর ঘর। মহান রব্বুল আলামিন পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মসজিদ বায়তুল্লাহ নির্মাণ করিয়েছেন। তখন পৃথিবীতে কোনো মানুষ ছিল না। তাই কোনো মানুষ বায়তুল্লাহর মালিকানা দাবি করে না। কিন্তু মালিকানার ভাব দেখায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মসজিদকে নিজের বসতঘর ও ফ্যাক্টরি মনে করো না। যখন যেভাবে মনে চায়, সেভাবে আলাপ-আলোচনা ও গল্প-গুজব করো না। যদি কোনো জরুরি কথা থাকে, যা না বললেই নয়, তাহলে মসজিদের বাইরে গিয়ে বলতে হবে।

দুনিয়ায় হাজারো ঘর রয়েছে, আল্লাহতায়ালা কোনো ঘরের ফজিলত বর্ণনা করেননি, ফজিলত বর্ণনা করেছেন একমাত্র মসজিদের। অথচ বাহ্যিক দৃষ্টিতে মসজিদ থেকে বহুগুণে দামি ও উন্নত ঘরের উপস্থিতি পৃথিবীতে রয়েছে, সেগুলোকে আল্লাহর ঘর বলা হয়নি। হাদিসে বলা হয়েছে, মসজিদগুলো জান্নাতের অংশে পরিণত হবে। তাই আশা করা যায় যে একটা মসজিদের মালিক হবে সে জান্নাতের একটা অংশের মালিক হবে। মৃত্যুর পর সে সেখানে পরম আনন্দে বসবাস করবে।

মসজিদের প্রতি সম্মান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যদিও তার দিকে আমাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। মসজিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অনেকেই সমাসীন হয়েছেন অনেক উঁচু পদে, আবার তার বিপরীতটাও হয়েছে। যারা মসজিদের সম্মান রক্ষা করতে পারেনি বরং বেয়াদবি করেছে তারা তাদের জীবনে ডেকে এনেছে চরম অধঃপতন। অনেক হাদিসের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রদান করা হয়েছে মসজিদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য। যারা মসজিদের সম্মান রক্ষা করতে পারেনি, যারা মসজিদের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখে, তাদের প্রতি চরম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

যে ব্যক্তি যে জিনিসের যত বেশি সম্মান করবে, আল্লাহতায়ালা সে ব্যক্তিকে সে বিষয়ে তত বেশি বরকত দান করবেন। কেউ যদি কিতাবের বেশি সম্মান করে, তাহলে সে ইলম পাবে, এটাই স্বাভাবিক। তেমনই যে মসজিদের সম্মান করবে আল্লাহতায়ালা তাকে মসজিদের বরকত বেশি দান করবেন। মসজিদে বেশি বেশি নামাজ পড়ার সুযোগ আল্লাহতায়ালা তাকেই দান করবেন। আল্লাহর এ ঘরকে সম্মান করলে ইলমে তরক্কি হয়। এ ব্যাপারে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।

সাইয়্যিদ আহমাদ (রহ.)-এর ঘটনা। একদা তিনি কাফিয়ার ইবারত মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে সোজা জঙ্গলে চলে যান। ওখানে গিয়ে দেখতে পেলেন জনমানবশূন্য এলাকায় একটি মসজিদ গাছের পাতা ও আবর্জনায় নোংরা হয়ে আছে। কেউ তা পরিষ্কার করছে না, আবাদ করছে না। আল্লাহর ঘর মসজিদের এ অবস্থা! এটা দেখে সাইয়্যিদ আহমাদ (রহ.) ঠিক থাকতে পারলেন না। কাফিয়ার পড়া মুখস্থ করা স্থগিত রেখে লেগে গেলেন মসজিদ পরিষ্কার করার কাজে। অনেক সময় ধরে মসজিদ পরিষ্কার করলেন। ফলে কাফিয়ার ইবারত মুখস্থ করা হলো না। সন্ধ্যা হলে স্বীয় উস্তাদ হজরত আবদুুল আজিজ দেহলভি (রহ.)-এর কাছে গেলেন সবক শোনাতে। সারা দিন মসজিদের কাজে ব্যস্ত থাকায় পড়া মুখস্থ করা সম্ভব হয়নি, তাই কী পড়া শোনাবেন? তবু গেলেন, হয়তো দেখেই শোনাবেন। সামনে গিয়ে কিতাব বের করলেন পড়া শোনাতে, কিন্তু একি! পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ সাদা, কোনো অক্ষর নেই। অক্ষরগুলো যেন কিতাব থেকে উধাও হয়ে গেছে। এবার উস্তাদকে বললেন, আমি কিতাবের কোনো অক্ষর দেখতে পাচ্ছি না। উস্তাদ মহাচিন্তায় পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর উস্তাদ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি সারা দিন কোথায় ছিলে? সাইয়্যিদ আহমাদ (রহ.) মসজিদ পরিষ্কার করার ঘটনা সবিস্তার বর্ণনা করলেন। উস্তাদ গভীরভাবে বিষয়টা চিন্তা করে বললেন, কষ্ট করে তুমি ইলম শিখবে, আল্লাহ এটা চান না। তোমার আর কষ্ট করতে হবে না, তুমি ইলম পেয়ে যাবে। মসজিদের খিদমতের বরকতে আল্লাহতায়ালা তোমাকে ইলমে লাদুন্নি দিয়ে দেবেন। বাস্তবেও তাই হলো, সে যুগে তিনি অনেক বড় আলেম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ।

সর্বশেষ খবর