পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ২০০ বছরের পুরনো কারাগার এখন ইতিহাসের অংশ। এখান থেকে কারাগার স্থানান্তর করা হয়েছে কেরানীগঞ্জে। স্থানান্তরের প্রাক্কালে সংবাদ মাধ্যমে সমস্যায় আকীর্ণ পুরান কারাগারের বিপরীতে অনেক বেশি খোলামেলা ও সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ নতুন কারাগারের তুলনা করা হয়েছে দোজখ আর বেহেস্তের সঙ্গে। প্রচার মাধ্যমে এ সম্পর্কে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে তাতে মনে হয়েছে নতুন কারাগারে বন্দীদের কারাজীবন অনেক বেশি সহনীয় হয়ে উঠবে। দুর্বিষহ অবস্থার বদলে মানবিক পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ২০০ বছরের প্রতিষ্ঠিত একটি স্থাপনা থেকে নতুন স্থাপনায় কারাগার স্থানান্তরে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সমস্যা ও অব্যবস্থা থাকতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে নতুন কারাগারের হালহকিকত সম্পর্কে যে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে তাতে মনে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজিতে সেখানে স্বস্তির বদলে বন্দীরা বাড়তি দুর্ভোগে পড়েছেন। এ দুর্ভোগের কিছুটা নতুন স্থাপনার ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে ঘটলেও তার চেয়ে বেশি ঘটছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজির কারণে। নতুন কারাগারে বন্দীদের সময়মতো জুটছে না খাবার, মিলছে না পর্যাপ্ত খাবার পানি। নেই রান্নার জন্য গ্যাস সংযোগ। বিদ্যুৎ থাকলেও নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। স্যুয়ারেজ লাইনে উপচে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা। সাক্ষাতের নামে প্রকাশ্যে চলছে ঘুষবাণিজ্য। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ভবনে বন্দীদের থাকার ব্যবস্থা না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের গুটিকয়েক ভবনে তুলেছেন। বন্দীরা সেখানে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কষ্ট করে যারা থাকতে পারছে না তারা পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কারাগারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যে বন্দী মাসে ১০ হাজার করে টাকা দিতে পারছেন তার জন্য কারাগারেও জুটছে আয়েশী জীবন। কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারের অব্যবস্থা এবং দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। অভিযোগগুলো কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবেন আমরা এমনটিই আশা করতে চাই। সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমনটিও কাঙ্ক্ষিত।