বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

হজই সর্বোত্তম ইবাদত

মাওলানা আবদুর রশিদ

হজরত ইমাম আবু হানিফা হজের অন্তর্নিহিত কল্যাণ উপলব্ধি করে বলেছিলেন, হজই সর্বোত্তম ইবাদত। কারণ এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহকে উপলব্ধি করার আধ্যাত্মিকতা।

কাবা শরীফকে কেন্দ্র করে হজ আদায় করা হয়। হাজিগণ আল্লাহর এ ঘরকে তাওয়াফ করেন। আল্লাহ কাবাঘর ফেরেশতাদের দ্বারা নির্মাণ করান। ফেরেশতারা সর্বপ্রথম হজ পালন করেন। তারপর বাবা আদম (আ.) এখানে ইবাদত করেন। আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) খানায়ে কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি তার মিল্লাতকে হজ পালনের আহ্বান জানান। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উত্তর পুরুষ আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাবাঘরকে পৌত্তলিকতাবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন এবং হজ পালনে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।

হজ পালনের জন্য প্রয়োজন মূলধন। এ মূলধনের বিষয়ে সূরা বাকারার ১৯৭নং আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— ‘হজের সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাবে। তাকওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম পাথেয়।’ যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য হজ ফরজ। যাদের সে সঙ্গতি নেই আল্লাহ তাদের জন্য এটি ফরজ ইবাদত করেননি। তবে অর্থ থাকলেই হজ হবে না। তাকওয়া হলো এর আসল মূলধন। যার পরহেজগারি বা তাকওয়া নেই তার অর্থ থাকলেও হজ পালনের সার্থকতা নেই।

আর্থিক সঙ্গতি থাকার কথা বলা হলেও বান্দাকে হজ পালনে যেতে হবে সমর্পিতের বেশে। নিজের অহংবোধকে বিসর্জন দিয়ে। হজ পালনের জন্য এহরাম বাঁধতে হয়। এটি একটি বাধ্যবাধকতা। এ এহরাম হলো- সেলাই না করা একটি লুঙ্গি, একটি চাদর এবং সেলাইবিহীন জুতা। হজ পালনকারী দুনিয়াদারির বিচারে যত ধনীই হোক, সব সৃষ্টি ও সৃষ্ট জীবের মালিক আল্লাহর দরবারে তাকে হাজির হতে হবে ফকিরের বেশে। দীনহীন বেশে। তার পোশাকে কোনো আভিজাত্য থাকবে না। অহংবোধও বিসর্জন দিয়ে হাজির হতে হবে। এ সময় কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না, জাঁকজমক চলবে না। এমনকি বৈধ যৌনাচার অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক থেকেও দূরে থাকতে হবে। সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকা শুধু নয়, মনকেও দূরে রাখতে হবে। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। হজ পালন শেষ হওয়ার পর বাকি জীবনেও আল্লাহকে সর্বক্ষণ হাজির-নাজির জানতে হবে। এ সম্পর্কে সূরা আল বাকারার ২০০ নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে— ‘হজের অনুষ্ঠানগুলো যখন সমাপ্তি করিবে তখন আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করিবে যেমন তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের স্মরণ করিতে, অথবা তদপেক্ষা অভিনিবেশ সহকারে’। প্রকৃতপক্ষে হজ পালনের পরও আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখার মানসিকতা যদি হজ পালনের সময় অর্জন করা যায় তবে সেখানেই রয়েছে প্রকৃত সার্থকতা। আল্লাহ হজ পালনকালে আমাদের সে তৌফিক অর্জনের ক্ষমতা দিন।  আমিন।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর