শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাওয়াই : একটি গণআত্মহত্যার কাহিনী

লে. জে মাহবুবুর রহমান (অব.)

হাওয়াই : একটি গণআত্মহত্যার কাহিনী

যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র। দীর্ঘকাল ধরে তার এ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এক মহা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। অর্থ, বিত্ত, তথ্যপ্রযুক্তি, সামরিক শক্তি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, গবেষণা, আধিপত্য সবদিক দিয়ে সে এখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীও তারা। চার বছর পর পর প্রত্যক্ষ জাতীয় নির্বাচন প্রায় আড়াইশ বছর ধরে চলে আসছে। এ ঐতিহ্যের কখনো বিচ্যুতি ঘটেনি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়টি ছাড়া। অতীতের ধারাবাহিকতায় এ বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন হতে চলেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে ঘোষিত এবং প্রচারে লিপ্ত। গোটা যুক্তরাষ্ট্র এখন নির্বাচন জ্বরে আক্রান্ত। হিলারি ক্লিনটন জনমতে ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন America First (আমেরিকা প্রথম) এই স্লোগান দিয়ে। স্লোগানটি মুখরোচক, দৃষ্টিকাড়া, অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অজেয় হয়ে বিশ্ব দাপানো একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হিসেবে এখনো টিকে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বাক্যবাগিস, আক্রমণাত্মক কিন্তু প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন। তিনি বলেছেন America is for only Americans আমেরিকা শুধু আমেরিকানদের জন্যই। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন আমেরিকাকে অভিবাসীমুক্ত করবেন। আর মুসলমানদের জন্য করবেন নিষেধাজ্ঞার দেশ। তিনি আইএসকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করবেন বলে তারস্বরে বলে চলেছেন। ‘আমাদের পারমাণবিক বোমাগুলো সাইলোতে মজুদ রাখার জন্য নয়। এগুলো যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলো সেভাবেই যথাসময়ে ব্যবহৃত হবে।’ একটা American chauvinism দিয়ে ইতিমধ্যে তিনি আমেরিকাবাসীর মধ্যে বিশাল আবেগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি আমেরিকায় অভিবাসন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করবেন। যদিও পুরো আমেরিকাই সৃষ্টি হয়েছে, সমৃদ্ধ হয়েছে অভিবাসীদের দ্বারা। আমেরিকার আদিনিবাসীরা ছিল রেড ইন্ডিয়ানস, তারা আজ তাদের নিজেদের মাতৃভূমিতে অজানা অচেনা দুর্লৎ অদৃশ্য। তারা জীবনযুদ্ধে ইউরোপিয়ান আমেরিকানদের কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়ে প্রান্তসীমায়, অনেকটা যেন জাদুঘরে রক্ষিত তারা। অথচ বিশাল এ মহাদেশের বৃহৎ ভূখণ্ডে তারাই তো ছিল একমাত্র আদিনিবাসী একমাত্র বাসিন্দা। পুরো মহাদেশ ছিল তাদেরই একচ্ছত্র আবাসভূমি।

আজকে আমার লেখার বিষয়বস্তু আমেরিকার রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে নয়। আমার লেখার বিষয়বস্তু আমেরিকার ৫০তম রাষ্ট্র হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস নিয়ে। হাওয়াই এশিয়া প্যাসিফিকে অবস্থিত। সে অর্থে আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের বহুদূরে বরং জাপানের সন্নিকটে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ। US Pacific Command Head Quarter, রাজধানী হনলুলুতে অবস্থিত। এখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তার পুরো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সমরনীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

হাওয়াই এর রাজধানী হনলুলু যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। অপূর্ব সুন্দর নৈসর্গিক নান্দনিক এক দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাওয়াই। প্রধান ও সবচেয়ে বড় দ্বীপ হাওয়াইসহ আছে সাতটি বড় বড় দ্বীপ।

ছোট ছোট দ্বীপ ও অনেকগুলো। সব মিলিয়েই দেশটির নাম হাওয়াই, হাওয়াইসহ গোটা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হনলুলু। প্রশান্ত মহাসাগরের এ অপরূপ সুন্দরী কন্যা, তার সাগরের বেলাভূমি, শ্বেত শুভ্র মিহি বালুরাশি, সুন্দর সমুদ্রসৈকত, সাগরের ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন, জোয়ারের উচ্ছৃঙ্খল আছড়ে পড়া, কল্লোলিত দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের নীল জলরাশি, দীর্ঘ প্রশস্ত ওয়াইকিকি সমুদ্রসৈকত অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনমুগ্ধকর। হাওয়াইকে ট্যুরিস্টদের স্যাংগ্রিলা— স্বর্গভূমি বলা হয়ে থাকে। ফুলের দেশ, সুন্দর তৃণলতার দেশ, ফলের দেশ ও ট্রপিক্যাল বৃক্ষরাজির দেশ হাওয়াই। ফুলে-ফলে সুশোভিত হাওয়াই মনে হয় প্রকৃতির এক বিশাল বিস্তৃত পুষ্পকুঞ্জ। হাওয়াই এর মেয়েরা যেন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। সর্বাঙ্গে ফুলের পসরা সাজানো, মাথায় চুলে, চিবুকে ঝুলানো বিচিত্র রঙের ফুলের মালা। পরনে স্বল্পবাস আবক্ষ আচলি। সত্যি সুন্দর মনোমুগ্ধকর।

১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকের কথা। আমি তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান। যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের চিফ অব স্টাফ জেনারেল ড্যানিশ রেইমারের আমন্ত্রণে হাওয়াই গিয়েছিলাম। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর একটি সিকিউরিটি কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনেক সেনাপ্রধানই (ভারত ও চীন ব্যতীত) যোগ দিয়েছিলেন, জাপান, কোরিয়া, ফিলিপাইনস, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র, ভানুয়াতু, সোলোমন আইল্যান্ড, কিরিবাতি, নউরো, পাপুয়া নিউগিনি, পাউলো, মার্শাল আইল্যান্ড ইত্যাদি। নিরাপত্তাবিষয়ক কনফারেন্সটির বৈশিষ্ট্য ছিল একদিকে নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কয়েকদিন ধরে আলোচনা অন্যদিকে অনেক দ্রষ্টব্য স্থান ভ্রমণ আর বিনোদনমূলক অনেক অনুষ্ঠান ও সমুদ্র বিহার। এ আনন্দ উল্লাসের ভ্রমণে আমার মতো এশিয়া প্যাসিফিক রাষ্ট্রগুলোর সব সেনাপ্রধানের একটি আবেগময় বিষাদৎরা স্মৃতি দীর্ঘদিন পর্যন্ত মনে জাগরূক থেকেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আজও বিচিত্রভাবে আমার হাওয়াই সফরের সে স্মৃতি অনুৎব করি। সুখস্মৃতির পাশে দুঃখ ভারাক্রান্ত স্মৃতিও আছে এবং তা স্মরণ করে শ্রদ্ধায় আমি মাথানত করি।

আমরা এশিয়া প্যাসিফিক রাষ্ট্রের অতিথি সেনাপ্রধানরা হনলুলুর পাঁচতারা সাততারা অনেক হোটেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম। আমার হোটেলটিতে প্যাসিফিক কমান্ড হেড কোয়ার্টারের অনেক উচ্চপদস্থ অফিসারও ছিলেন। কনফারেন্সটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বড় আরেকটি হোটেলের সুন্দর অডিটরিয়ামে। নিখুঁত পরিপাটি পরিবেশে সর্বোচ্চ সামরিক শৃঙ্খলা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভাটি কয়েকদিন ধরে পরিচালিত হয়। সভার শুরুতে জেনারেল রেইমার ছোট্ট করে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কনফারেন্সের শুরুতেই হাওয়াইর অতীত দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন। ইতিহাসটি সত্যিই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী, হৃদয়বিদারক ও অবিস্মরণীয়। আমি তার সেই হাওয়াই পরিচিতির কথাগুলো পাঠকের কাছে তুলে ধরার ইচ্ছা পোষণ করছি।

হাওয়াই ১৯০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অধিকৃত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০তম কনিষ্ঠ রাষ্ট্রের মর্যাদা লাৎ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান হাওয়াই। তার পিতা হুসেইন ওবামা আফ্রিকার কেনিয়া থেকে বৃত্তি নিয়ে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন। মা স্টানলি অ্যান ডানহ্যাম তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পরস্পরের মধ্যে পরিচিতি, প্রেম অতঃপর বিয়ে ও ওবামার জন্ম। যাক সে কথা। বলছিলাম হাওয়াই এর আদি ইতিহাস। আগ্নেয়গিরির উত্থিত লাভা ও সমুদ্রের কোরাল সংমিশ্রণে হাজার বছর ধরে সৃষ্টি হয় হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে এ দ্বীপমালায় আগমনকারী পলিনেশিয়ান নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি ১৭৭৮ সালে হাওয়াই প্রথম আবিষ্কার করেন, তিনি বিখ্যাত নৌ পরিব্রাজক ও আবিষ্কারক ব্রিটিশ নাবিক এডমিরাল জেমস কুক। ইতিপূর্বে হাওয়াই রাজ কামে হামেহা ১৮১০ সালের মধ্যে সমগ্র দ্বীপপুঞ্জকে একত্রিত করে নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষি ও বাণিজ্যে দেশকে সমৃদ্ধিশালী করে তোলেন। আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান বেনিয়া ও ব্যবসায়ীরা হাওয়াই এর সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে আকৃষ্ট হয়ে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসে অনেক দুরারোগ্য জটিল সংক্রামক ব্যাধি যা হাওয়াইবাসীর ওপর বিশালভাবে প্রাদুর্ভাব ফেলে। বেশির ভাগ হাওয়াইবাসী রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। মিশনারি ও আমেরিকানরা হাওয়াইকে তাদের সম্পদের ও আধিপত্যের উর্বর ক্ষেত্র মনে করে ১৯০০ সালে দেশটিকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে। পরবর্তী ইতিহাস ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে আকস্মিক বোমা ফেলে আমেরিকাকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।

পেন্টাগনের চিফ অব স্টাফ ডেনিশ রেইমার তার সূচনা স্বাগত বক্তব্যে হাওয়াই এর পরিচিতি ও অতীত ইতিহাস তুলে ধরতে এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুুত হয়ে পড়েন। তিনি জবরদস্তি ইক্ষু চাষকে কেন্দ্র করে পলিনেয়িশান হাওয়াইবাসীদের সঙ্গে আমেরিকার ব্যবসায়ী ও মিশনারিদের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করেন। তারা হাওয়াইবাসীদের বলপ্রয়োগে ইক্ষু চাষে বাধ্য করে। অনেকটা বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক দীনবন্ধু রচিত সাড়া জাগানো নীলদর্পণের লিখিত করুণ ইতিহাসের মতো। সেখানেও নিশ্চয়ই কোনো লেখক ইক্ষু দর্পণের তেমনি করুণ বিষাদময় কোনো ইতিহাস লিখে থাকবে হয়তো।

হাওয়াই রাজ প্রজাদের স্বার্থে আমেরিকান অভিবাসীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন। দ্বন্দ্ব চরম আকার নিল। কিন্তু আমেরিকানদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, কামান গোলাবারুদের সঙ্গে তারা পেরে উঠলেন না। আত্মমর্যাদাবান হাওয়াই রাজা অবধারিত পরাজয় অনুধাবন করে তার বাহিনীসহ জনগণকে আদেশ দিলেন একটি সুউচ্চ বড় পাহাড়ে জমায়েত হতে। তিনিও সেখানে সবার সঙ্গে আগমন করলেন। তিনি হাওয়াইবাসীদের উদ্দেশে বীরত্বের ও শৌর্যবীর্যের ঐতিহ্য তুলে ধরে গভীর আবেগময় একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের এ স্বর্গভূমিতে দস্যুরা হানা দিয়েছে। আমাদের সুখনীড় ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত করে হত্যা করেছে। আমরা তাদের নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছি। তাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে আমরা পেরে উঠিনি কিন্তু আমরা পরাজয় মানব না, আমরা নতি স্বীকার করব না, আমরা আত্মসমর্পণে বিশ্বাস করি না। মুক্ত সাগরের মুক্ত আকাশের সন্তান আমরা। আমরা এখানে জন্মগ্রহণ করেছি, মানুষ হয়েছি, বড় হয়েছি। আমরা পরাধীনতা কি তা জানি না। আমরা পরাজয় মানি না। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আত্মোৎসর্গ করব।

হাওয়াই রাজ তার এ নাতিদীর্ঘ ভাষণ শেষে দুই হাত প্রসারিত করে তার হাঙ্গরের দাঁতখচিত কমান্ড স্টিক (command stick) সমুদ্রের দিকে নির্দেশ করে সেই সুউচ্চ পাহাড় থেকে নিচে গভীর খাদে উত্তাল তরঙ্গমালার প্রশান্ত মহাসাগরে ঝাঁপ দিলেন, নিজেকে আত্মোৎসর্গ করলেন। আর তখন তার আদেশ মতো সবাই যে যেখানে আছে হাজার হাজার মানুষ হাজার হাজার দ্বীপবাসী মার্চ করে সামনে এগিয়ে এসে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। কোনো প্রাণী থাকল না আত্মসমর্পণ করার জন্য। কোনো মানুষ থাকল না পরাজয়বরণ করার জন্য। বরেণ্য নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ে তার অমর গ্রন্থ Old Man and The Sea এ লিখেছেন man can be destroyed but never defeated. মানুষ ধ্বংস হতে পারে, বিনাশ হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনোই পরাজয়বরণ করতে পারে না। নোবেলবিজয়ী মহান লেখককে হাওয়াইবাসীদের এ অতুলনীয় গভীর বিষাদৎরা কাহিনীই তাকে অমর কথাগুলো লেখতে প্রেরণা জুুগিয়েছিল। তারাই আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ের সেই অমর লেখনীর মূর্ত প্রতীক।

জেনারেল ডেনিশ রেইমার তার সূচনা বক্তব্য শেষ করে তার টেবিলে রাখা সামরিক টুপিটি মাথায় পরে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন এবং আমাদের সবাইকে তেমনি বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করলেন। বিশাল প্রশস্ত বারান্দায় আমরা সবাই সার্ভিস ক্যাপ মাথায় দিয়ে সামনে অদূরে দৃশ্যমান সেই উঁচু পাহাড়ের দিকে তাকালাম।

আত্মোসর্গকৃত বীর হাওয়াইবাসীর উদ্দেশ্যে জেনারেল ডেনিশ রেইমার একটা চৌকস স্যালুট অর্পণ করলেন। আমরাও এশিয়া প্যাসিফিক রাষ্ট্রের সব সেনাপ্রধান ভাবগাম্ভীর্যে সেই সুউচ্চ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে সন্তপ্ত হৃদয়ে ‘আলোহা’ বলে তাকেই অনুসরণ করলাম। (আলোহা হাওয়াই ভাষায় শ্রদ্ধা সম্ভাষণ ও অভিবাদনের অর্থে  ব্যবহৃত হয়)।

লেখক : স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি ও সাবেক সেনাপ্রধান।

সর্বশেষ খবর