শিরোনাম
বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রাম্প কি হিটলারের আমেরিকান সংস্করণ?

তুষার কণা খোন্দকার

ট্রাম্প কি হিটলারের আমেরিকান সংস্করণ?

সহজ যোগাযোগ মাধ্যমের গুণে আজকের দিনে দূর দেশ বলে কিছু নেই। আমরা সব দেশের মানুষ খুব কাছাকাছি বাস করছি। সে কারণে এক দেশের রাজনীতি আরেক দেশের কাছে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে আগেও একবার লিখতে গিয়ে আমি বলেছিলাম, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো চটুল স্বভাবের একজন মানুষ আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী পদে দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি অবাক হব না। দুনিয়াজুড়ে বর্তমান সময়ের অস্থিরতা মাথায় রেখে আমি সেটি বলেছিলাম। আদতে বিষয়টি তাই ঘটে গেছে।  রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরে ট্রাম্প সুস্থির মাথায় তার নিজ দেশের বর্তমান বাস্তবতা এবং দুনিয়ার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে বলে মানুষ আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্পের উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা বরং তার কথাবার্তা যেন আরও লাগামহীন হয়ে গেছে। তার ফলে রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের দূরত্ব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এদিকে হাতে সময় খুব কম। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় আগেও অনেক নাটক হয়েছে কিন্তু আমেরিকার রাজনীতি এবারের মতো এমন কঠিন গাড্ডায় পড়েনি। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী একজন নাগরিক দুই টার্ম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন, তার বেশিবার নয়। আমেরিকার মানুষ বিষয়টি মাথায় রেখে ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান যে কোনো দলের নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টকে পরপর দুবারের জন্য নির্বাচিত করে থাকে। একজন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পরপর দুবার নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে আট বছর কাটানোর পরে সাধারণত দেখা যায় একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে এবং সেও দুই টার্ম পুরো করে নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিচ্ছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে পরাজিত করে ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে তার দুই টার্ম পুরো করেছেন। মানুষ ধরে নিয়েছিল, ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্টের পরে এবার রিপাবলিকান দলের একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন এবং আগামী আট বছর তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের কপাল খারাপ। রিপাবলিকান দলে এমন একজন প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থেকে এখন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যার লাগামহীন, দায়িত্বহীন কথার তোড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতা দূরে থাক, রিপাবলিকান দলের ঐক্য ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় থাকার সময় ট্রাম্প বলতেন, লোকে আমাকে ভোট দেবে কারণ আমি সাড়ে এগার বিলিয়ন ডলারের মালিক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে আমি কারও কাছে চাঁদা চাইব না। বরং দুনিয়াকে দেখিয়ে দিব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কীভাবে লাভজনক ব্যবসা বানিয়ে ফেলা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরও অনেক কথার মতো এটিও ফালতু কথা বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে। তার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের প্রচারণার জন্য যে ওয়েব পেজ খোলা হয়েছে তাতে দেখা যায় তিনি ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৯২ মিলিয়ন ডলার চাঁদা তুলেছেন।

পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে টিকে থাকার জন্য মুখে যা এসেছে ট্রাম্প তাই বলেছেন। সেসব কথা নিয়ে লোকে এতদিন হাসাহাসি করেছে। ট্রাম্পের মতো চটুল স্বভাবের লোক যে গ্রান্ড ওল্ড পার্টি অর্থাৎ রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে যাবে এটি হয়তো অনেকে অনুমান করতে পারেনি। তবুও সে যখন সবাইকে ডিঙিয়ে মনোনয়ন পেয়ে গেল তখন আমেরিকান ভোটাররা তার কাছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আশা করছে। কিন্তু ভোটারদের আশার গুড়েবালি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখানোর পরীক্ষা শুরু হতে ট্রাম্পের মাথা যেন আরও বিগড়ে গেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে প্রতিদিন তার জ্ঞানের থলে থেকে বিচিত্র সব বিড়াল বের হচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি যেমন বিচিত্র রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছেন তাতে হাসতে হাসতে ভোটারদের পেটে খিল ধরে যাওয়ার দশা। এদিকে ট্রাম্পের কথার রকম দেখে রিপাবলিকান দলের নেতাদের দুশ্চিন্তায় পেটের ভাত চাল হচ্ছে। ইলেকশনের তিন মাস বাকি থাকতে তারা এখনো প্রার্থী বদলের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।

ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থা দেখে আমার একটি গল্প মনে পড়ছে। এক দেশে ট্রাম্পের স্বভাবের এক লোক ছিল। লোকটা দিনের অর্ধেক সময় ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থেকে বাকি আধাবেলা সে জ্ঞানী হওয়ার দিবাস্বপ্নে মজে থাকত। রাতে ঘুমের মধ্যে সে অর্ধেক রাত ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখা শেষ করে বাকি অর্ধেক রাত কাটাত জ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নে মজে থেকে। লোকটার দিন-রাতের স্বপ্নের বেহাল অবস্থা দেখে একদিন স্বর্গের এক দেবতার মেজাজ বিগড়ে গেল। ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সেই দেবতা স্বর্গ ছেড়ে ট্রাম্প স্বভাবের লোকটার বিছানার কাছে হাজির। জ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নের ঘোর না কাটতেই লোকটার চোখের সামনে দিব্য জ্যোতি ফুঁড়ে এক দেবতার মুখ ফুটে উঠল। স্বপ্নপাগল লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দেবতার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেবতা বলল, শোন, তোমার স্বপ্নবাজি বন্ধ কর। তুমি যদি বেতালা স্বপ্নের হাত থেকে রেহাই পেতে চাও তাহলে এক্ষুণি এ মুহূর্তে আমার কাছে বর চাও। বর চাওয়ার আগে মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নাও ঠিক কি বর তুমি চাইবে। কারণ আমি তোমাকে একটি মাত্র বর দিব। ধন এবং জ্ঞান দুটো একসঙ্গে পাবে না। যদি ধনী হতে চাও এক্ষুণি অনেক টাকার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি। তুমি ভোগ বিলাসে ভাসতে থাক। আর যদি জ্ঞানী হতে চাও কোনো সমস্যা নেই। আমি তোমাকে অঢেল জ্ঞান দিয়ে যাব। তুমি সক্রেটিসের চেয়েও বেশি জ্ঞানের মালিক হবে। সদ্য ঘুমভাঙা লোকটার মনে তখনও জ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নের ঘোর। সে তেমন কিছু না ভেবে বলল, আমি জ্ঞানী হতে চাই। দেবতা বাম হাত ঊর্ধ্বে তুলে বললেন, তথাস্তু। স্বপ্নবাজ লোকটাকে বর দিয়ে দেবতা তক্ষুণি বাতাসে মিলিয়ে গেলেন। দেবতার বর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নবাজ লোকটির জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল আর সে বুঝল, হায়রে কপাল! দেবতার দেখা পেয়ে ধনী হওয়ার বর না চেয়ে সে কি ভয়ানক ভুল করেছে! তার মনে হলো, সক্রেটিসের আমল সেই কবে শেষ হয়ে গেছে। আজকের দিনে জ্ঞান নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। এখন জ্ঞানের চেয়ে টাকার দাম অনেক বেশি। ট্রাম্প সেই স্বপ্নবাজ লোকটার মতো প্রথম জীবনে দেবতার কাছে অনেক টাকা চেয়েছিল। পৈতৃক ব্যবসার মালিক হয়ে সে থেমে ছিল না। ব্যবসা বাড়িয়ে সে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। টাকার সুখ মিটে যাওয়ার পরে ট্রাম্প আমেরিকার গণদেবতার কাছে জ্ঞানী হওয়ার বর চাইতে বেরিয়েছে। কিন্তু তার কপাল খারাপ। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প মুখ খুললেই তার মুখ থেকে রাজ্যের অজ্ঞানতা বেরিয়ে পড়ছে আর আমেরিকার ভোটার গণদেবতারা বর দেওয়ার বদলে সেটা নিয়ে বেশুমার হাসাহাসি করছে। নির্বাচনে নামার আগে ট্রাম্প জানত না, যেনতেন উপায়ে স্বর্গের দেবতাদের মন জয় করে ধনী হওয়া সম্ভব। কিন্তু আমেরিকার ভোটার গণদেবতার মন জয় করতে হলে বর্তমান দুনিয়ার ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে আরেকটু ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখবে এটা সবাই আশা করে। সাংবাদিকরা যখন ট্রাম্পকে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান সৈন্যের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করল তার জবাবে ট্রাম্প বললেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়ানদের ক্রিমিয়ায় ঢুকতে দেবেন না। ট্রাম্পের জবাব শুনে সাংবাদিকের ভিরমি লাগার অবস্থা, কারণ রাশিয়ানরা ২০১৪ সালে ঘটা করে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। কথাটা ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিতে তিনি আমতা আমতা করে কি বললেন সে কথার মানে বোঝা গেল না। 

নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে তিনি বললেন, মেক্সিকোর লোকজন মাদক ব্যবসায়ী এবং নারী ধর্ষক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্প আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মাঝখানে দেয়াল তুলে দেবেন। খ্রিস্ট জন্মের ৭০০ বছর আগে মোঙ্গলদের আক্রমণে অতিষ্ঠ চীন তার সীমান্তে চীনের প্রাচীর নির্মাণ করেছিল। ট্রাম্প খ্রিস্ট জন্মের দুই হাজার বছর পরে চীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজ দেশের সীমান্তে দেয়াল তোলার কথা বলে তার ভোটারদের হাসির খোরাক হলেন। এরপর তিনি অভিবাসীদের পেছনে লাগলেন। তিনি ভুলে গেলেন রেড ইন্ডিয়ানরা ছাড়া আমেরিকার সব বাসিন্দাই অভিবাসী। কেউ দশ পুরুষ আগে সেখানে বাস করতে শুরু করেছে, কেউ নবাগত। ট্রাম্প নিজেও আধা জার্মান আধা স্কটিশ। ট্রাম্পের দুই পুরুষ আগে তার দাদা জার্মানি থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ট্রাম্পের স্কটিশ মা ১৭ বছর বয়সে স্কটল্যান্ড ছেড়ে আমেরিকায় বাস করতে এসে ১৯৩৬ সালে ট্রাম্পের বাবাকে বিয়ে করেন এবং ১৯৪২ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ট্রাম্প এতদিন তার জার্মান রক্তের উত্তরাধিকার নিয়ে বেশ গর্বিত ছিলেন। আমেরিকায় জার্মান অভিবাসীদের অনুষ্ঠান ভন স্টিউবেন ডের র‌্যালিতে ১৯৯৯ সালেও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তার জার্মান রক্তের উত্তরাধিকার নিয়ে গর্বিত। আমেরিকার নাগরিক মেক্সিকান, অভিবাসী, মুসলমান এবং আমেরিকান মহিলাদের আক্রমণের মধ্য দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচার ভালোই চলছিল। বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় একটার পর একটা আইসিস আক্রমণের মুখে ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারের পালে জোর হাওয়া লেগেছিল। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট পার্টির কনভেনশনে এলেন খিজির খান এবং গাজালা দম্পতি। ইরাকের যুদ্ধে তারা তাদের সন্তান আমেরিকান সেনা অফিসার হুমায়ুন খানকে হারিয়েছেন। ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষকে খিজির খান চ্যালেঞ্জ করতেই ট্রাম্প মাথা গরম করে তেড়ে উঠে হাজারটা ভুল করে বসলেন। একজন আমেরিকান সৈন্য যিনি দেশের স্বার্থে যুদ্ধে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ট্রাম্প তাকে উপহাস করতে গিয়ে আমেরিকার অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন। আমেরিকার মানুষ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। রিপাবলিকান দলের নেতা জন ম্যাককেইন ট্রাম্পের নিষ্ঠুরতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার পরে ট্রাম্প অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো ম্যাককেইনকে আক্রমণ করে বসলেন। বললেন, ম্যাককেইন কিসের হিরো? ও তো ভিয়েতনাম যুদ্ধে বন্দী হয়ে বন্দী শিবিরে আটক ছিল। বুঝুন অবস্থা। আমেরিকার মতো দেশে এমন একটি লোক প্রেসিডেন্ট হতে চাচ্ছে যার চোখে আমেরিকান সৈন্যদের প্রাণদান কিংবা যুদ্ধ করার সময় শত্রুর হাতে বন্দী হয়ে সেখানে নির্যাতিত হওয়ার কোনো মূল্য নেই। আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যদের সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে বাতিল করে বসে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট গভর্নর মাইক পেন্স তার দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের বেসামাল কথাবার্তায় বিব্রত হয়েছেন। আসলে চারপাশের সবাইকে ছোট করে ট্রাম্প নিজেই নিজেকে হিরোর আসনে বসাতে চান। লোকে ভাবছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে হিরো হওয়ার স্বপ্নে মরিয়া ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্রকে খেলনা পিস্তলের মতো ব্যবহার করে বসবেন না তো?

পারমাণবিক অস্ত্রকে খেলনা পিস্তলের মতো ব্যবহার করার আশঙ্কার জোরালো কারণ আছে। বাজারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেখা একখানি বই ‘দি আর্ট অব দি ডিল’ কিনতে পাওয়া যায় যেটি বেশ কয়েকবার বেস্ট সেলার হয়েছে। বইটি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে লেখেননি, তার হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে বইটি লিখেছেন টনি সোয়ার্জ নামের এক ভদ্রলোক। এখন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের নামে ছাপা হওয়া দি আর্ট অব দি ডিল বইটি টনি সাহেব কীভাবে লিখেছেন তার বিশদ বিবরণ টনির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। বইটি লিখতে গিয়ে টনি আঠার মাস ট্রাম্পের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন। তার সেই আঠার মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছেন, ট্রাম্প আদ্যোপান্ত একজন খেলো স্বভাবের মানুষ। অস্থির স্বভাবের ট্রাম্পের বই পড়ার অভ্যাস শূন্যের কোটায়। তার প্রথম স্ত্রী ইভানা বলেছেন, ট্রাম্পের শোবার ঘরে খাটের পাশে শেলফে একটি বই আছে। বইটি হিটলারের নির্বাচিত বক্তৃতা সংকলন ‘মাই নিউ অর্ডার’। ট্রাম্পের এক বন্ধু ট্রাম্পকে ভ্যানিটি ফেয়ার বইটি উপহার দিয়েছিলেন। কিছু দিন পরে সেই বন্ধু ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করলেন বইটি তার কেমন লেগেছে। জবাবে ট্রাম্প বললেন, কোন বইটির কথা বলছেন, ‘মাইন কাম্ফ’? আসলে মাইন কাম্ফ (আমার যুদ্ধ) হিটলারের আত্মজীবনী। ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রীর অভিজ্ঞতা এবং টনির বর্ণনা পড়ে মনে হলো, ট্রাম্প শুধু জাতে জার্মান তাই নয়, তার মনের মধ্যেও হিটলারের জন্য একটি বিশেষ আসন রাখা আছে। হিটলারের জন্য তার মনে যে বিশেষ শ্রদ্ধার আসন রয়ে গেছে এটি আশঙ্কার কথা। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বভাবও হিটলারের মতো রগচটা। ট্রাম্প যদি সব ব্যাপারে হিটলারের অনুগামী হয়ে থাকেন তাহলে সত্যি সেটি ভয়ানক পরিণামের আশঙ্কা জাগায়। তবে আশার কথা ট্রাম্প নিজেই নিজের শত্রু। নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের চটিয়ে দেওয়ায় ট্রাম্প তার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরিয়ে ফেলেছেন। এবারের নির্বাচনের হাওয়া রিপাবলিকানদের অনুকূলে ছিল। অথচ নিজ দল রিপাবলিকান পার্টিসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে চটিয়ে দিয়ে ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্র্যাটদের হাতে তুলে দিয়েছেন।  ট্রাম্পের আদ্যোপান্ত বুঝে ফেলার পরে শুধু আমেরিকাবাসী নয় বরং দুনিয়াবাসী সবাই চায় ট্রাম্পের মতো মানুষের আঙ্গুল যেন পারমাণবিক অস্ত্রের সুইচের কাছে না যায়। পৃথিবী নামের গ্রহটি ধ্বংস হয়ে গেলে ট্রাম্পের সঙ্গে আমরা সবাই মারা পড়ব। আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় আমেরিকাবাসী বিষয়টি মনে রাখবে বলে আশা করি।

     লেখক : কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর