ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ মূলত প্রকৃত ইসলাম ও মুসলমানদের বিপাকে ফেলেছে। জিহাদের নামে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে তারা যখন তাদের মতাদর্শ বহির্ভূতদের হত্যা করছে এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাজে সংঘটিত করছে তখন এর কুফল ও ক্ষতিকারিতা মুসলমানদের ওপরেই বর্তাচ্ছে। এর ক্ষতিকারিতা হতে নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরা হলো : ১। প্রকৃত ইসলাম ও ইসলামী দাওয়াতী সংস্থাসমূহ কোণঠাসা হয়ে পড়ে, ২। এতে করে প্রকৃত ইসলামী জাগরণ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, ৩। ইসলামী শিক্ষার পাঠক্রমকে ত্রুটিযুক্ত বলে দোষারোপ করা, ৪। ইসলামবিদ্বেষী মাধ্যমগুলো প্রকৃত ইসলামী সংগঠনের বিকৃত রূপ প্রচারের সুযোগ পায়, ৫। প্রভাবশালী অমুসলিম দেশ কর্তৃক প্রভাব বিস্তার ও আগ্রাসনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়, ৬। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পায়।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদসহ যাবতীয় অপরাধ প্রতিকারের একমাত্র উপায় পবিত্র কোরআনের ব্যবস্থাপত্র। এর বিকল্প কোনো পন্থা চিন্তাই করা যেতে পারে না। বিশ্ব ইতিহাস সাক্ষী, যে কোনো দেশ ও জনপদে এ ব্যবস্থাপত্র বাস্তবায়ন করেছে, তারাই যাবতীয় অপরাধ প্রতিকার করতে পেরেছে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস তথা মানব সমাজের যাবতীয় অপরাধ-অকল্যাণের প্রতিকারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে— ‘তোমরা নেক (কল্যাণ) কাজের প্রতি লোকদের উদ্বুদ্ধ কর এবং পাপ কাজ (পাপাচার ও অকল্যাণ) সীমা লঙ্ঘনের প্রতি উদ্বুদ্ধ কর না’। (সূরা মায়েদা-৩)। সূরাতুল আসরের মধ্যে আল্লাহপাক কালের (সময়ের) শপথ করে বলেন, ‘সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত শুধু তারা ব্যতীত যারা ইমান গ্রহণ করেছে এবং সৎকর্মশীল, হকের (সত্যের) এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়’। বস্তুত এ কর্মসূচিটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিশ্ব মানবতা ক্ষতির মধ্যেই নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতির ভিতরেই আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। মুসলিম কিংবা অমুসলিম; দুর্বল কিংবা পরাশক্তি, বাংলা-ভারত; মক্কা-মদিনা, আমেরিকা-ব্রিটেন কেউ নিশ্চিন্ত ও শান্তিতে নেই। সর্বস্তরের সর্ব সাধারণ নিরাপত্তাহীনতা এবং উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। এ মুহূর্তে যারা দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা কামনা করে তাদের উচিত চিরশাশ্বত, সভ্যতা-সংস্কৃতির উৎস মানবতার একমাত্র মুক্তির বিধান, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হাতে নিয়ে মাঠে নামা। জাতির প্রত্যেকটি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া পবিত্র কোরআন। এ আলোকে ব্যাখ্যামূলক কিছু প্রস্তাবনা নিম্নে পেশ করা হলো— ১। পিতা-মাতা কর্তৃক সন্তানদের মাঝে অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলা। তাদের হাতে পবিত্র কোরআন তুলে দেওয়া। যাতে তাদের অন্তরাত্মা অপরাধের অন্ধকার মুক্ত হয়ে আল-কোরআনের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। পবিত্র কোরআনের বক্তব্য— ‘এটি (কোরআন) একটি কিতাব (জীবনবিধান) তোমার প্রতি নাজিল করেছি। যাতে তুমি লোকদের অন্ধকার থেকে আলোয় বের করে আনতে পার’। (সূরা ইব্রাহিম-১)। আমি আশা করি, এর সুফল হিসেবে কম সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত হারে অপরাধমুক্ত মানুষ গড়ে উঠবে এবং একটি নিরপরাধ আলোকিত সমাজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়ে পড়বে। ২। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারি দল ও সব বিরোধী দলের মাঝে জনগণকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। ৩। সব আলেম ওলামা ও জ্ঞানীজন এবং প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দেশে কোনো নতুন মতাদর্শের অনুসারীদের আবির্ভাব হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে সরকারি তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী মনিটরিং কমিটি গঠন করা।
৪। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক হারে জনপ্রিয় অভিজ্ঞ আলেমদের অংশগ্রহণে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে সন্ত্রাসবিরোধী আলোচনার মাধ্যমে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। ৫। সব প্রকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ এবং মসজিদের ইমামদের নিয়ে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের চিন্তাধারা এবং যুক্তি খণ্ডনকল্পে বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স ও সেমিনারের ব্যবস্থা করা। ৬। বিশেষ করে জুমার খুতবায় সম্মানিত ইমাম সাহেবরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং দেশ জাতির সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা অব্যাহত রাখা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ সর্বপ্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তখনই নির্মূল হতে পারে যখনই মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী জীবন চালাতে মনেপ্রাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
লেখক : খতিব, চৌদ্দগ্রাম থানা জামে মসজিদ, কুমিল্লা।