শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার

কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙুক

বৈধ হোক আর অবৈধ হোক অস্ত্র ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার অধিকারী। অস্ত্রের বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পেছনে এর পেছনের মানুষটির অশুভ ইচ্ছা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। দেশের আইনশৃঙ্খলার বিড়ম্বনায় হাজার হাজার অবৈধ অস্ত্র যে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে তা সহজেই অনুমেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এ ক্ষেত্রে তথাকথিত বৈধ অস্ত্রের অংশীদারিত্বও কম নয়। নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সুনাগরিকদেরই এ লাইসেন্স পাওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও উেকাচের জোরে সন্ত্রাসী ও পেশাদার অপরাধীরাও বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স পায়। মানুষ শকুন নামে অভিহিত এরশাদ শিকদারের মতো পিলে চমকানো সন্ত্রাসী ও সমাজবিরোধীও ছিল বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী। প্রতিটি সরকারের আমলে অসংখ্য ব্যক্তিকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলেও দেশে বৈধ অস্ত্রধারীর সংখ্যা কত এ পরিসংখ্যানই নেই কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে। বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার অস্ত্রটি নিয়মনীতি মেনে ব্যবহার করছে কিনা বা এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কিনা— তা নিয়েও মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের। আগ্নেয়াস্ত্রের মতো এমন স্পর্শকাতর মারণাস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েই কেবল দায়িত্বমুক্ত থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে বৈধভাবে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর ব্যানারে নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে আদায় করে নেওয়া হচ্ছে অস্ত্রের লাইসেন্স। আর এ বৈধ অস্ত্র তারা খুনখারাবি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার মতো অপকর্মেও ব্যবহার করছে। এমনকি ভাড়ায়ও পাওয়া যায় কথিত বৈধ অস্ত্র। গত সাত বছরে নতুন ১০ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেক দাগী অপরাধীও রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার লাইসেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও বাতিল করা হয়েছে মাত্র ১৫৬টি লাইসেন্স। তদন্ত হচ্ছে আরও ১৬২টির বিরুদ্ধে। রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের জানমাল হেফাজতের জন্য অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও তা যে ভিন্ন খাতে ব্যবহার হচ্ছে এটি একটি ওপেন সিক্রেট। দেশের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এ ব্যাপারে সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর