মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

অমুসলিমদের নিরাপত্তা সম্পর্কে ইসলামী নির্দেশনা

আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে আরাফার ময়দানে যে খুতবা দেন তা আজ সাড়ে চৌদ্দশ বছর যাবৎ শুধু মুসলমান নয়, অমুসলিমরাও অনুসরণ করে আসছে। এ খুতবায় তিনি বলেন, ‘ও আমার সাহাবারা! তোমাদের রক্ত তোমাদের জীবন, তোমাদের মালামাল ও ইজ্জত আজকের দিনের মতো এ মাসের মতো ও এ শহরের মতো সম্মানীয় ও দামি। তাই বিনা কারণে একে অন্যের জানমাল ও ইজ্জত নষ্ট করতে পারবে না। করলে হারাম হবে, যেমন এ মাসের এ শহরের এ দিনের ইজ্জত এহতেরাম নষ্ট করা অবৈধ ও হারাম। যেসব মুশরিক নিরাপত্তা নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রে এসেছে তারাও এ হুকুমের আওতাভুক্ত (মুসলিম)।

অতএব, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম অনুযায়ী একজন মুসলিম বিনা অপরাধে আরেকজন অমুসলিমের জীবন কেড়ে নিতে পারে না। আমাদের মুসলিম ভাইয়ের জানমাল, ইজ্জত যেমন আমার কাছে ইজ্জত এহতেরামের পাত্র আর মূল্যবান, একজন নিরাপত্তাগ্রহীতা ভিন্নধর্মাবলম্বীর জীবনও একই রকম। বিনা কারণে তার জীবন কেড়ে নেওয়া যাবে না।

তাদের ইজ্জত-আবরু, তাদের সম্মান আমাদের ইজ্জত-আবরুর সমান। শরিয়তে গিবত-শেকায়েত-কুৎসা রটানো হারাম, কবিরা গুনা। এতে আরেকজনের ইজ্জত নষ্ট হয়, এ অধিকার আমার নেই। বরং আরেকজনের ইজ্জত কীভাবে ঠিক থাকে, আরও বাড়ে এটা আমার দায়িত্ব। আরেকজনের  ইজ্জত বাড়ার জন্য যদি আমি সচেষ্ট হই তাহলে আমারও ইজ্জত বাড়বে, তাদের ইজ্জত-আবরু আমাদের ইজ্জত-সম্মানের মতো। বিনা কারণে এটা নষ্ট করা যাবে না।

মুসলিমদের অর্থসম্পদ আমাদের অর্থসম্পদের মতো, কারোর অর্থসম্পদ বিনা কারণে নষ্ট করা যাবে না, একজনের সম্পদ আরেকজন জোর-জবরদস্তি করে কেড়ে নিতে পারবে না, গছব করতে পারবে না, দখল করতে পারবে না। চাই জোর করে হোক, জুলুম করে হোক, চুরি করে হোক, ডাকাতি করে হোক, যেভাবেই হোক, সবই অবৈধ।

এ রকম যারা নিরাপত্তাধীন অমুসলিম তাদের সম্পদও গছব ও দখল করা যাবে না। মুসলমানের সম্পদের হেফাজত এবং সংরক্ষণ যেমন আমাদের দায়িত্ব, অমুসলিমদের সম্পদের হেফাজত ও সংরক্ষণও আমাদের দায়িত্ব।

ইসলামের এ বিধান দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে, একজন মানুষ চাই মুসলিম হোক বা নিরাপত্তাধীন অমুসলিম হোক তার নিরাপত্তার গুরুত্ব ইসলামের দৃষ্টিতে কত বেশি। বিনা কারণে মানুষের জীবন, ইজ্জত, সম্মান কেড়ে নেওয়ার অধিকার আরেকজন মানুষের নেই।

লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি বোর্ড। খতিব, মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স, মিরপুর-১, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর