শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভণ্ড নবীদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)

হজরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফত লাভের পর বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে রাষ্ট্রের কাঠামোর ওপর আঘাত আসে। বেশ কিছু আরব গোত্র বিদ্রোহ করে এবং কয়েকজন ব্যক্তি নবুওয়ত দাবি করে। তাদের মধ্যে মুসায়লিমা ছিল অন্যতম প্রধান। বিভিন্ন গোত্রের তরফ থেকে বক্তব্য আসে যে তারা শুধু মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অনুগত ছিল এবং তার মৃত্যুর পর মিত্রতা শেষ হয়েছে। প্রাচীন আরবে এই ধরনের প্রথা প্রচলিত ছিল যার আওতায় গোত্রের নেতার মৃত্যুর পর মিত্রতা সমাপ্ত হতো। বিদ্রোহ গোত্রগুলো জাকাত দিতেও অস্বীকৃতি জানায়। আবু বকর (রা.) তাদের দাবি অস্বীকার করেন এবং বিদ্রোহ দমনে অগ্রসর হন। এসব ঘটনার ফলে রিদ্দার যুদ্ধের সূচনা হয়। মধ্য আরবে মুসায়লিমা ইয়ামামা থেকে ধর্মদ্রোহিতার নেতৃত্ব দেয়। বিদ্রোহের অন্য কেন্দ্রসমূহ বাহরাইন, ওমান, মাহরা, ইয়েমেনে অবস্থিত ছিল। আবু বকর তার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে মুসলিম সেনাবাহিনীকে ১১টি দলে গঠন করেন। সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলক কম শক্তিশালীদের সঙ্গে লড়াইয়ে অন্য সেনাদলগুলোকে নিয়োজিত করা হয়। আবু বকর প্রথমে পশ্চিম ও মধ্য আরবের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, এরপর মালিক ইবনে নুয়াইরাকে মোকাবিলা এবং চূড়ান্তভাবে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ মুসায়লিমার মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করেন। বেশ কিছু সফল ও ধারাবাহিক অভিযানের পর শেষ পর্যন্ত খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসায়লিমাকে ইয়ামামার যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হন। শেষ পর্যন্ত সব বিদ্রোহ দমন করা হলে আরব পুনরায় খিলাফতের আওতায় ঐক্যবদ্ধ হয়। ৬৩২ সালের জুলাই মাসে আবু বকর (রা.) মুহাম্মদ (সা.)-এর নিজ গোত্র বনু হাশিমের সদস্যদের নিয়ে একটি সেনাদল গঠন করেন। আলি ইবনে আবি তালিব, তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ ও জুবায়ের ইবনুল আওয়াম প্রত্যেকে সেনাদলের এক-তৃতীয়াংশের নেতৃত্ব লাভ করেন। তারা জু কিসার যুদ্ধে স্বঘোষিত নবী তুলায়হার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তুলায়হা ও তার অনুসারীরা রিদ্দার যুদ্ধের সময় মদিনা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। এই যুদ্ধে তুলায়হাকে পরাজিত করা হয়।  আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে কোরআন সংকলন করেন। ইতিপূর্বে কোরআনের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে লিপিবদ্ধ ছিল। এ ছাড়াও হাফেজরা কোরআন মুখস্থ করে রাখতেন। ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ শহীদ হলে উমর ইবনুল খাত্তাব গ্রন্থাকারে কোরআন সংকলনের জন্য আবেদন জানান। এই প্রথা মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় ছিল না বলে প্রথমে আবু বকর (রা.) এতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু উমর (রা.) তাকে রাজি করাতে সক্ষম হন। এ জন্য জায়েদ ইবনে সাবিতকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।  এর সদস্যরা সবাই হাফেজ ছিলেন। তারা কোরআনের সব অংশ সংগ্রহ করে একক গ্রন্থ হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন এবং হাফেজদের স্মৃতির সঙ্গে সেগুলো মিলিয়ে দেখা হয়।    এস জাহান।

সর্বশেষ খবর