শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংসদের চালচিত্র

রাজনীতিকদের কোণঠাসা অবস্থা দুর্ভাগ্যজনক

বাঙালির দুর্নাম ছিল ব্যবসাবিমুখ জাতি হিসেবে। সেই ব্রিটিশ যুগে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালিদের অংশগ্রহণে উৎসাহ জোগাতে নিজে যেমন নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন, তেমন উৎসাহ জোগাতে কলমও ধরেছেন। বারবার স্মরণ করে দিয়েছেন বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী প্রবচনটি। আচার্য পিসি রায় ব্যক্তিজীবনে দেব-দেবীর পুজারি ছিলেন না। তবে লোকাচারে লক্ষ্মীকে যেহেতু সমৃদ্ধির দেবী বলে ভাবা হতো সেহেতু সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হওয়ার তত্ত্বকে তিনি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কালের বিবর্তনে বাঙালির ব্যবসাবিমুখ বদনামের অনেকটাই অবসান ঘটেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসায়িক মনোভাব। এটি দেশ ও জাতির কল্যাণ যে বয়ে এনেছে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান তারই প্রমাণ। তবে ব্যবসায়িক মনোভাবের উল্লম্ফন যে কোনো ক্ষেত্রে অকল্যাণেরও হাতছানি হয়ে দেখা দিয়েছে সে বাস্তবতাকে অস্বীকার করারও জো নেই। যেমনটি ঘটেছে রাজনীতির ক্ষেত্রে। এ দেশের যা কিছু অর্জন তার প্রায় সব কিছুই এসেছে রাজনীতি থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মতো রাজনীতিকরা এদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতিকে তারা জনকল্যাণের মাধ্যম হিসেবে ভেবেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি দেশের রাজনীতিই এখন রাজনীতিকদের হাতছাড়া হয়ে পড়েছে। সংসদে রাজনীতিকের বদলে ঠাঁই পাচ্ছেন আপদমস্তক ব্যবসায়ীরা। রাজনীতিকেও তারা ব্যবসার মূলধন হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদের এমপিরা প্রায় সবাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অনেকে নিজেদের হলফনামায় রাজনীতিবিদ উল্লেখ করলেও বাস্তবে তারা পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। হলফনামা অনুযায়ী শতকরা হিসেবে সংসদে ব্যবসায়ী এমপির সংখ্যা ৬৯ শতাংশ। আয় বিশ্লেষণ করে পেশা নির্ধারণ করা হলে এ সংখ্যা ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।  রাজনীতিকরা ব্যবসা করলে সেটি অন্যায় কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়।  তবে রাজনীতিকে কেউ ব্যবসা ভাবলে তা রাজনীতির জন্য যেমন বিপর্যয় ডেকে আনে তেমনি ব্যবসার জন্যও। যা বাঞ্ছনীয় হওয়া উচিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর