বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কেরির সফরে চাওয়া পাওয়া

কেরির সফরে চাওয়া পাওয়া

‘কিসিঞ্জারের ধারণা ভুল’ কেরির এই মূল্যায়ন বড় পাওয়া

ওয়ালি-উর রহমান

 

দিন বদলে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব বেড়েছে বাংলাদেশের। পাল্টে গেছে বাংলাদেশ সম্পর্কিত মূল্যায়ন। একসময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র সম্পর্কিত মূল্যায়নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ঢাকায় এসে স্পষ্টতই বলেছেন, কিসিঞ্জার ভুল ছিল। জন কেরির ঢাকা সফর নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— বাংলাদেশ প্রতিদিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিন্নাতুন নূর

 

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এই প্রথম কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সশরীরে সম্মান প্রদর্শন করেছেন— বিষয়টির আলাদা কোনো তাত্পর্য আছে কিনা?

ওয়ালিউর রহমান : বাংলাদেশে কেরিসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তিনজন প্রতিনিধি সফরে এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি কেবল গেলেনই না, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেও পুষ্প অর্পণ করলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, স্মৃতি জাদুঘরের ওপরে গিয়ে সেখানকার দর্শনার্থী বইতে জন কেরির লেখাটি ছিল এই সফরে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এই লেখা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, আর সেটি হলো— তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে নিয়ে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র যে মূল্যায়ন করেছিলেন জন কেরি এবার বাংলাদেশে এসে কিসিঞ্জারের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কেরি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘কিসিঞ্জার ভুল ছিলেন’। কাজেই কেরির এই মূল্যায়ন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে আমি মনে করছি। বাংলাদেশে কেরিসহ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে মোট তিনজন এসেছেন। তারা হলেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাননি। তার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। আমরা সব কিছু ঠিকঠাকও করে রেখেছিলাম। কিন্তু তার যাওয়া হয়নি। হিলারি ক্লিনটন এখানে দুবার এসেছেন কিন্তু তিনিও যাননি। কিন্তু এই প্রথম জন কেরি ৩২ নম্বরের বাড়িতে কেবল গেলেনই না, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে তিনি পুষ্প অর্পণ করলেন। সেখান থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গেলেন। তিনি প্রত্যেক হত্যাকারীর ছবি দেখেছেন। দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে যেখানে হত্যা করা হয় সেই সিঁড়ির উপরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।

প্রশ্ন : জন কেরির এই সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সম্পর্ক আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে কিনা?

ওয়ালিউর রহমান : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা যা চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। বৃহত্তর পরিসরে চিন্তা করলে বলতে পারি দুই দেশ একসঙ্গে আলোচনায় বসেছে। যার আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। এই আলোচনায় নিরাপত্তা বিষয়ে কথা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কি বলেছেন তাও আমরা জানি। কেরির সঙ্গে আমাদের মন্ত্রীদের কথা হয়েছে এবং সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী কি বলেছেন তাও আমরা অবগত আছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর দুজন খুনি আছেন। তাদের একজন রাশেদ চৌধুরী, তার বিচারপর্ব শেষ হয়ে গেছে এবং তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে আছেন। আর আরেকজন খুনি হচ্ছেন আশরাফুজ্জামান। এই সফরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ব্যাপারে কেরি বলেছেন, তিনি ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে তাদের বিচার বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন। আর এ বিষয়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সাহায্য করবেন বলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের নিজেদেরও কিছু কাজ করতে হবে। এই বিষয়টি শুধু আমেরিকান সরকারের হাতে রেখে দিলে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের লিগ্যাল উপদেষ্টা আছেন, লবিস্ট আছেন সেখানে সরকারকে বিষয়টি পরিচালনার জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপনের জন্য একটু কৌশলী হতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় রাখতে সরকারকে তত্পর হতে হবে। কেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে পাঠানোর কার্যক্রম ধীর গতিতে হচ্ছে তার জবাবদিহিতা সরকারকে দেওয়ার জন্য সেখানকার বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বাধ্য করতে হবে। আমাদের যে মন্ত্রীরা আমেরিকা যাচ্ছেন, তারা যাওয়ার আগে বলে যাচ্ছেন, খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বাংলাদেশের মানুষ তা আর শুনতে চান না। আমি নিজেও এই বিষয়ে প্রথম পর্যায়ে জড়িত ছিলাম। ১৯৯৬-৯৮ সালে এ বিষয়ে আমি ছিলাম ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর। আমরা পাঁচজন খুনিকে সিকিউরড করেছি আরও ৬ জন বিদেশে পালিয়ে আছেন। কাজেই খুনিদের দেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন তা না বলাই আমাদের জন্য ভালো হবে। আর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা যে খুব কষ্টসাধ্য আমার তাও মনে হয় না। এ বিষয়ে আমাদের শুধু কৌশলী হতে হবে। আমরা দেখেছি মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত দিয়েছে। বাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে সক্ষম হয় তবে তারা অন্য খুনিদেরও ফেরত পাঠাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কেরির এই আশ্বাসও ছিল আমাদের জন্য বড় পাওয়া। এছাড়া এই সফরে কেরি আওয়ামী লীগ সরকার একটি বৈধ নির্বাচিত সরকার সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন। এটিও আমাদের আরেকটি বড় প্রাপ্তি। 

প্রশ্ন : সফরে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রস্তাবকে কীভাবে দেখছেন?

ওয়ালিউর রহমান : সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ করছি তাতে সহযোগিতা করার ব্যাপারে কেরি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেরির কাছে প্রযুক্তি ও ইনটেলিজেন্স সহযোগিতা চেয়েছেন। কারণ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগাম তথ্য ভালো জানে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনো তত উন্নত হতে পারেনি। আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইলে তারা দেবে বলে মনে করি। তবে জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের বিষয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের কনসালটেন্সি বা বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন নেই। আমাদের নিজস্ব যে নিরাপত্তা বাহিনী আছে তারাই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা?

ওয়ালিউর রহমান :  আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেসব পণ্য রপ্তানি করছি তার জন্য ১৫ শতাংশ ট্যারিফ দিচ্ছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চেয়েছে। ১৫ শতাংশ ট্যারিফ বিষয়ে আমরা তাদের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি। আর এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কী ধরনের সুবিধা দিতে পারে তা জন কেরি তার দেশে ফিরে গিয়ে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন। এ বিষয়ে আমরা যদি তাদের সমর্থন আদায়ে শক্তিশালী কার্যক্রম পরিচালনা করি তবে আমরা এই ট্যারিফ থেকে নিষ্কৃতি পাব। তবে জন কেরির সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর জিএসপি বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে শুনেছি।

 

 

দেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নজর ও বিনিয়োগে আগ্রহ আছে

আফতাব-উল ইসলাম

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য সুবিধা পেতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার অর্থনৈতিক-কূটনীতির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর নজর দিয়েছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ—অ্যামচ্যামের সাবেক সভাপতি আফতাব উল ইসলাম। তার মতে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে বিনিয়োগের পথ সুগম হয়েছে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— রুহুল আমিন রাসেল

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফর নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আফতাব উল ইসলাম : মার্কিন সরকারের এই শীর্ষ নেতার এক দিনের ঢাকা সফর ৯ ঘণ্টার হলেও বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্ব ও তাত্পর্যপূর্ণ। তার এ সফর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে বিশাল পরিবর্তন হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার পথ সুগম ও উজ্জ্বল হয়েছে। যদিও এতদিন বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ কীভাবে দেখছেন?

আফতাব উল ইসলাম : প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও বিশাল সম্ভাবনার। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের সঙ্গেও কাজ করছে। সম্প্রতি জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের ভূমিকায় মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ইতিবাচকভাবে দেখছি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ দেখেছে মার্কিন সরকার ও প্রশাসন। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাও করছে দেশটি। তার চেয়ে বড় কথা হলো জন কেরি তার ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে বাংলাদেশ সফর করে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের অনুরোধে মার্কিন প্রশাসন সাড়া দেবে কি?

আফতাব উল ইসলাম : আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে যে সফর করেছেন, তা বাণিজ্যিক নয়। তিনি এসেছেন— উন্নয়ন, মানবাধিকার, জঙ্গিবাদ, সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের নেতা ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে। সফরে এগুলোই তার এজেন্ডা। আমাদের মনে রাখতে হবে, তার সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসেনি। তার মানে বাণিজ্যিক এজেন্ডাই ছিল না। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যিক এজেন্ডার কিছু দিক জন কেরির সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি কী চাচ্ছেন, তাও জন কেরিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। যদিও এটা জন কেরির এজেন্ডা ছিল না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি এ এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে আবারও বাংলাদেশ যে অনুরোধ করেছে, তাতে ইতিবাচক সাড়া মেলবে কি?

আফতাব উল ইসলাম : আমেরিকার নিজস্ব কিছু আইন-কানুন আছে। মানবাধিকারের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুবই স্পর্শকাতর। যেহেতু তাদের দেশে রাশেদ চৌধুরী আছেন তাই এটা নির্ভর করে তাদের বিভিন্ন রকম আইন-কানুন জন কেরির আগামী দুই মাসের মেয়াদের মধ্যে সমাধান করতে পারে কিনা, তার ওপর। তবে ভবিষ্যৎ মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বাংলাদেশে আসার কারণ হলো, আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। এটা জন কেরি বার বার বলেছেন, তিনি আগ্রহও দেখিয়েছেন। জন কেরি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাজনৈতিক-কূটনীতির চেয়ে অর্থনৈতিক-কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন জন কেরি। এর বাস্তবতা কী?

আফতাব উল ইসলাম : সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব হিসেবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ কিছু পদকও দিয়েছে। সমুদ্র অর্থনীতিতেও এ সরকার সফল হয়েছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে মার্কিন প্রশাসন যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাতে ইতিবাচক পরিবর্তন ও দিকনির্দেশনা আসবে। সমুদ্রে অফশোর কত জ্বালানি আছে, তা আমরা তুলতে পারছি না। যদিও ৩০০ মাইল জয় করেছি। তবে এটুকু মনে হচ্ছে, আমাদের সমুদ্র অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজর ও বিনিয়োগে আগ্রহ আছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জন কেরি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আপনার মূল্যায়ন কী?

আফতাব উল ইসলাম : বাংলাদেশ ৪০ বছরে যা করেছে, আগামী পাঁচ বছরে তার তিন গুণ করবে, এ কারণে আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আছে। বিশ্বের অনেক দেশের ধারণা, আমাদের কেউ ধরে রাখতে পারবে না। আগামী পাঁচ বছরের সঙ্গে তুলনা হবে। এটা আমেরিকারও ধারণা। আমাদের সব রকমের অবকাঠামো তৈরি হলে, বাংলাদেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একটার পর একটা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং হবে। আমাদের এখন যেটা দরকার ধৈর্য, ইচ্ছা ও সুশাসন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শুধু উন্নয়নের অংশীদার (পার্টনার) নয়, বন্ধু হতে চায়— জন কেরির এমন বক্তব্য দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কোন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবে?

আফতাব উল ইসলাম : বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা ও অবস্থা চীন-ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওপরের দিকে এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা চমৎকার ভৌগোলিক অবস্থানে আছি। এখানে বিনিয়োগের ধারা পাল্টে যাবে। সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহও বাংলাদেশে থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে জন কেরির সফর মার্কিন বিনিয়োগে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিএসপি সুবিধা নিয়ে কথা না বললেও অর্থনৈতিক বাজার সম্প্রসারণের অঙ্গীকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আফতাব উল ইসলাম : আমার মনে হয়, জিএসপিতে অর্থনৈতিকভাবে খুব শক্তিশালী অবস্থানে আছি, তা নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের জিএসপি সুবিধা নেই, এটা ভালোভাবে নেয় না অন্যরা। এটা রাজনৈতিক বিষয়। তবে এটা ইতিবাচক হতে পারত। আর না হওয়ার পেছনে রয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক-কূটনীতিতে বাংলাদেশের দুর্বলতা। তৈরি পোশাকপণ্যের চেয়ে এখন ওষুধ রপ্তানিও কম নয়। তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আউটসোর্সিংয়ে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেয় চীন, ভারত ও ফিলিপাইন। এ সুবিধা নিতে হলে ওয়াশিংটনে অর্থনৈতিক-কূটনীতির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাহলে জিএসপি পাব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর