বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দায়িত্ব

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

দেশের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দায়িত্ব

দেশের ক্রান্তিকালে ‘বাকশাল’ সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ও অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে হলে দল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা প্রয়োজন। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশে উষালগ্নেই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, জনগণের প্রত্যাশা ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে চরম আঘাত আসে। স্বাধীন দেশের সংবিধানে চার মূলনীতির মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শুধু ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা, সমাজতন্ত্রের নামে লুটপাটের অর্থনীতি এবং ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার কর্মকাণ্ডে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চার মূলনীতির অন্যতম উপাদান গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। আশাহত যুব সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে সর্বহারা পার্টি, গণবাহিনীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন সৃষ্টি করে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ ও বহুমুখী ব্যর্থতার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে ১৯৭৪-এ দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলাসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশে ‘রক্ষীবাহিনী’ নামে একটি বিশেষ বাহিনী সৃষ্টি করে। বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত রক্ষীবাহিনী দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে জনবিরোধী বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং জনরোষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তৎকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। সরকার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে পদদলিত করে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করে।

‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়। বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে। সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। রক্ষীবাহিনীর গুম, খুন ও নির্যাতন চরম আকার ধারণ করে। সমগ্র জাতি শঙ্কিত ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর কামনায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনায় মগ্ন থাকে। বিভীষিকাময় এমনি এক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ও বিশৃঙ্খলার ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় জীবনে এক মর্মান্তিক ও কলঙ্কময় ঘটনার মাধ্যমে বাকশালের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও তার সহযোগীরা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ এবং দেশে সামরিক আইন ঘোষণা করে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে ১৯৭৫ সালের ১ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে অনিশ্চয়তা ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে    সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জাতির ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারের পতন হয়। অতঃপর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম দেশের    রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২১ এপ্রিল, ১৯৭৭ তারিখে লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার   গ্রহণ করেন।

প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশের শাসনভার গ্রহণ করে সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতার’ পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও সব ধর্মের সমান অধিকার’ এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ সংবিধানে প্রতিস্থাপন করেন। তিনি আমাদের পবিত্র সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ স্থাপন করেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার অনুসৃত নীতি ও দর্শনের ভিত্তিতে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৩০ এপ্রিল, ১৯৭৭ তারিখে অনুষ্ঠিত গণভোটে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি অনুমোদন লাভ করে।

দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে রাজনৈতিক শূন্যতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর যে আঘাত হয়েছিল তা পূরণের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া নতুন দিকনির্দেশনা, নীতি ও দর্শন জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। জনগণ সেই নীতি ও দর্শনকে গণভোটের মাধ্যমে অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদান করে। এমনিভাবে সৃষ্ট প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির স্বার্থে শহীদ জিয়া তার নীতি, আদর্শ ও দর্শনকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বা দল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভব করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে ‘জাগদল’, ১ মে, ১৯৭৮ তারিখে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ এবং পরিশেষে ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির গঠনতন্ত্রের দুই অনুচ্ছেদের ১৭টি উপ-অনুচ্ছেদে দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দলের ঘোষণাপত্রে ২৯টি অনুচ্ছেদে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দলের কয়েকটি মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এ পর্যায়ে উল্লেখ করা হলো। (ক) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদভিত্তিক ইস্পাত কঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও গণতন্ত্র সংরক্ষিত ও সুসংহত করা। (খ) ঐক্যবদ্ধ ও পুনরুজ্জীবিত জাতিকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ ও বহিরাক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা। (গ) উৎপাদনের রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন। (ঘ) জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামে-গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং সার্বিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রচনা এবং বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও দক্ষতা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া। (ঙ) এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় সমাজের মৌলিক স্তরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়। (চ) এমন একটি সুস্পষ্ট ও স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চয়তা দেওয়া, যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারবেন। (ছ) বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং সুষম জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়ন।

উপরোল্লিখিত কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, দেশের অন্যান্য দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ধারা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সম্পূর্ণ আলাদা রাজনৈতিক ধারার ধারক ও বাহক। যখনই ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়েছে, তখনই জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, দেশের জনগণ বিএনপির রাজনৈতিক ধারাকে বিপুলভাবে সমর্থন করে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের ফলে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি) এবং ২০০১ সালের অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি নিরংকুশভাবে নির্বাচিত হয়েছিল এবং দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার দলের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই প্রেসিডেন্ট জিয়াকে শাহাদাতবরণ করতে হয়। যে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ ও বহিরাক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার অঙ্গীকার রয়েছে, সে দলের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অপ্রত্যাশিত নয়। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলেছিলেন, জিয়াবিহীন বিএনপির শূন্য অবস্থান হবে (Minus Zia, BNP will be zero)| কিন্তু শহীদ জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি বেগম খালেদা জিয়া ১০ জানুয়ারি ১৯৮৪ তারিখে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণিত করে দলকে আরও শক্তিশালী করতে সমর্থ হয়েছে। বিএনপিকে ভাঙতে বা দুর্বল করার লক্ষ্যে একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এরশাদের সামরিক শাসনামলে ‘হুদা মতিন বিএনপি’ প্রতিষ্ঠা করে এবং ওয়ান-ইলেভেনের ‘ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকারের’ সময়ে বিএনপি মহাসচিব আ. মান্নান ভূঁইয়াকে ব্যবহার করে ‘সংস্কারপন্থি বিএনপি’ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে ভাঙার অপচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু শহীদ জিয়ার আদর্শের তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের মুখে সব ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়েছে। বর্তমানেও বিএনপিকে মামলা, হামলা, গুম, খুন ও মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে বিএনপি গ্রিক উপাখ্যানের ‘ফিনিক্স পাখির’ মতো মৃত্যুঞ্জয়ী। ‘ফিনিক্স পাখির’ যেমন মৃত্যু নেই, বিনাশ নেই, তেমনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলেরও ধ্বংস নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলের ইতিহাস বারবার এ কথাই প্রমাণ করেছে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ‘বাকশাল’ পূর্ব ও পরবর্তী সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশে এখন গণতন্ত্র অনুপস্থিত, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত এবং দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। জঙ্গি ভীতিতে আতঙ্কিত জনপদ। দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আজ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুটের মহোৎসব চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও ডাকাতি হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার নজির নেই। সমাজের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি স্থায়ী বাসা বেঁধে বসেছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায় প্রকল্পগুলোতে বর্তমানে ‘পুকুর চুরি হয় না, সাগর চুরি’ হয়। সরকার বর্তমানে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করেছে। দেশে চলছে অলিখিত ‘বাকশালী’ শাসনব্যবস্থা। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ‘বাকশালী’ শাসনব্যবস্থা যেভাবে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল এবং দেশে একটি ক্রান্তিকাল সৃষ্টি করেছিল, আজ ঠিক একই অবস্থা বিরাজ করছে। বাকশাল সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে যে দলটি শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমান রাজনৈতিক শূন্যতা ও সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র শহীদ জিয়ার আদর্শের দল বিএনপি। এ বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পৃথিবীর কোনো দেশে স্বৈরাচার, একনায়কত্ব এবং ফ্যাসিবাদী সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশেও তার কোনো ব্যতিক্রম হবে না।

দেশের জনগণকে এ সরকারের জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার ঐতিহাসিক দায়িত্ব জনগণের বিশ্বস্ত ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের। বর্তমান ক্রান্তিকালে দলকে আরও সুসংগঠিত, সাংগঠনিকভাবে অধিকতর শক্তিশালী এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে অনির্বাচিত, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা আজ সময়ের দাবি। ‘স্বৈরাচার হঠাও, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানকে ধারণ করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান

সর্বশেষ খবর