শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাকামে ইব্রাহিমের মরতবা

মাওলানা মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন

হজের সঙ্গে রয়েছে বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তদীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সম্পর্ক। আল্লাহর নির্দেশে তিনি কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন। জান্নাতের একটি পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কাবাগৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এ পাথরটি প্রয়োজন সাপেক্ষে ইব্রাহিম (আ.)-কে উপরে তুলে ধরত, আবার যখন ইব্রাহিম (আ.) নিচে কাজ করতেন, তখন পাথরখানা নিচে নেমে যেত। ইব্রাহিম (আ.)-এর পবিত্র পায়ের ছাপ এখনো পাথরের গায়ে দেখা যায়। হাজীরা মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে যে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন এই দুই রাকাত নামাজ হজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) অক্লান্ত পরিশ্রমের পর কাবা শরিফের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেন। কাবাঘর পুনর্নির্মিত হলে আল্লাহপাক হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে মাকামে ইব্রাহিমে দাঁড়িয়ে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফে হজব্রত পালন করার বিশ্বব্যাপী উদাত্ত আহ্বান জানানোর জন্য আদেশ করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! এই আহ্বান কি বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব?’ আল্লাহ প্রতি উত্তরে বলেন, ‘হে ইব্রাহিম! তোমার এই আহ্বান পৃথিবীর সব প্রান্তে এবং আজ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যারা হজ পালন করবে, তাদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু আহ্বানকারী, আহ্বান করা তোমার কাজ।’ আল্লাহতায়ালা সেই ডাক ওই সময়ের শুধু জীবিত মানুষই নয়, বরং যারা মায়ের গর্ভে, বাপের পৃষ্ঠ ও রূহ জগতে ছিল, যারা কেয়ামত পর্যন্ত এই দুনিয়াতে আসবে তাদের কানেও পৌঁছে দিলেন। আর এই ডাক যে যতবার শুনেছে, সে ততবারই আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজির হওয়ার তাওফিক লাভ করবে। সেই দিনকার এই আওয়াজে যারা ‘লাব্বাইকা আল্লাহুমা লাব্বাইকা’ বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের ভাগ্যেই আল্লাহতায়ালা হজ লিখে দিয়েছেন।

ইসলামী দর্শনে হাজীদের কাবা শরিফ তাওয়াফ বড়ই তাত্পর্যপূর্ণ। আল্লাহর আদেশ পালনই আল্লাহর ইবাদত। কাবা শরিফ সত্যই বায়তুল মামুরের প্রতিকৃতি। সমগ্র মানব জাতির জন্য এটা এক বিশেষ ইবাদতখানা। অদৃশ্য আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অন্বেষায় আজীবন মানুষ কাবাকে কেন্দ্র করে ইবাদত করে, আল্লাহ এবং মানুষের মধ্যে কাবা একটি যোগসূত্র সেতুবন্ধন।

আসমানবাসীর জন্য বায়তুল মামুর আর জগত্বাসীর জন্য কাবা শরিফ। কাবা শরিফ আল্লাহর ইবাদত ও নৈকট্যের প্রতীক। কাবার দিকে মুখ ফিরালে বায়তুল মামুরের দিকে মুখ ফিরানো হয়। আর বায়তুল মামুরের দিকে মুখ ফিরালে আল্লাহর দিকে মুখ ফিরানো হয়। তাই বিশ্বের সব মুসলমান উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম যে যেখানেই থাকেন না কেন— প্রত্যেকেই কাবাকে কেন্দ্র করে কেবলামুখী হয়ে নামাজ পড়েন। কাবার অলৌকিক আকর্ষণে দূর-দূরান্তের মুমিন বান্দাগণ জীবনের অর্জিত অর্থ ব্যয় করে আল্লাহর মহ্বতে ছুটে যান মক্কা মুয়ায্যমায় আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে।  আল্লাহ সদয় হয়ে যাদের ডাক দিয়ে থাকেন, তারাই আল্লাহর ঘরে হাজির হওয়ার তওফিক লাভ করেন, তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, লাব্বায়িকা আল্লাহুমা লাব্বায়িক।’

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর