রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জালনোটের অশুভ চক্র

অপরাধীদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিন

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পল্টন, লালবাগ ও কোতোয়ালি থেকে এ চক্রের ১০ সদস্যকে ১ কোটি ১৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ৮ হাজার ভারতীয় রুপি এবং জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়। এক দিনে সর্বাধিক জালনোট ধরা পড়ার ঘটনা সম্ভবত এটিই প্রথম। রাজধানীতে জালনোট তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে কমপক্ষে ৫০টি গ্রুপ জড়িত বলে ধারণা করা হয়। সারা দেশেই রয়েছে জালনোট চক্রের তত্পরতা। দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি হওয়া সত্ত্বেও জালনোট চক্রের সদস্যদের সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। জালনোট সংক্রান্ত অপরাধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। কিন্তু মামলার দুর্বলতায় জালিয়াতকারীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। পুলিশ এ ব্যাপারে যাদের সাক্ষী করে প্রায়ই তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। ফলে মামলার নিষ্পত্তি অসম্ভব হয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, জাল নোট ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কারণে তাদের জামিন দেওয়ার জন্য আইনি তত্পরতা চালাতে আইনজীবীদের কেউ কেউ মুখিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে তারা জামিন পান আইনের ফাঁক গলিয়ে। চার্জশিটের দুর্বলতায় অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি জাল করা হয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের ৬ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকার জালনোট ধরা পড়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত এক বছরে সারা দেশে জালনোট-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৬ হাজার ২৫৭টি। আগের বছরের একই সময়ে মামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৩৩।  স্মর্তব্য, জালনোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। ১৯৮৭ সালে তা রহিত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়। মৃত্যুদণ্ডের পুনঃপ্রবর্তন না হোক, এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জামিন-অযোগ্য করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানাসংবলিত নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।  প্রয়োজনে এ অপরাধের বিচারে বিশেষ আদালত গঠনের কথা ভাবা যেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর