বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়

হাফেজ মাওলানা মনিরুজ্জামান

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে স্মৃতির মাস জিলহজ। এ মাসের অন্যতম একটি ইবাদত হচ্ছে কোরবানি। যা অন্যান্য মূল ইবাদতের মতো হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রত্যেক নবী রসুলই বাস্তবায়ন করেছেন। একজন মানুষ কীভাবে আল্লাহভীতি অর্জন করবে তা শিক্ষা দেয় কোরবানি। কারণ অন্তরের কোরবানি হলো আসল কোরবানি। আল্লাহ সব সময় দেখেন কার অন্তরের ভিতরে আল্লাহর ভয় বেশি। যার অন্তরের মধ্যে আল্লাহর ভয় বেশি মহান আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন বেশি। কার অন্তরের মধ্যে আল্লাহর ভয় এটা প্রমাণ হয় কোরবানির মধ্য দিয়ে। কারণ কোরবানির আসল অর্থই হচ্ছে মনের কোরবানি। কোরবানির মাধ্যমেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মনটা পরীক্ষা করতে চান। আল্লাহ দেখতে চান বান্দার মনের ভিতরে সম্পদের মায়া বেশি না আল্লাহর ভয় বেশি। যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় পাওয়া যাবে আল্লাহ তাদের জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহপাক সূরা জুমারের ৭৩নং আয়াতে বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা ওই লোকদের ধাক্কা দিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন দুনিয়াতে যারা আল্লাহকে ভয় করে জীবন কাটিয়েছেন। ‘তাহলে বোঝা গেল জান্নাতে যাবে ওই সব লোক যাদের অন্তরের মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকবে। আর কার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে এটা প্রমাণিত হবে কোরবানির দ্বারা। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের জন্য বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর, এর কারণ যে তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করিয়েছেন। সুতরাং সৎ কর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সূরা হজ-৩৭নং আয়াত)। সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম কোরবানির গোশত, রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছেই পৌঁছায় না, আল্লাহপাক এ কোরবানির মাধ্যমে মানুষের অন্তরটা পরীক্ষা করেন। আল্লাহপাক হজরত ইবরাহীম (আ.) এর মন পরীক্ষা করার জন্য তাকে মহা পরীক্ষা করেছিলেন। এখানে ধৈর্য ও আল্লাহভীতির পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সূরা সাফফাতে আল্লাহপাক অনেক সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন— ইবরাহীম (আ.) তার আদরের সন্তান ইসমাইল (আ.) কে বললেন—

‘প্রিয় পুত্র, আমি স্বপ্নে দেখেছি, তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার মতামত বল। সে বলল হে আমার পিতা আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা-ই করুন। যখন পিতা-পুত্র দুজনই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে কোরবানি করার জন্য শায়িত করল, তখন আল্লাহপাক তাকে ডাক দিয়ে বললেন হে ইবরাহীম তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে, আমি এভাবেই সৎ কর্মশীলদের প্রতিদান দেই। নিশ্চয় এটা একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। তার পরিবর্তে আল্লাহপাক দিলেন এক মহান জন্তু (সূরা-সাফফাত আয়াত নং ১০১-১০৭)। এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহপাকের একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর মন পরীক্ষা করা। হজরত ইসমাইলের কোরবানি হোক এটা আল্লাহ চাননি। আল্লাহ এটাই দেখতে চেয়েছেন যে ইবরাহীমের অন্তরে প্রিয় সন্তান ইসমাইলের মায়া বেশি না আল্লাহর ভয় বেশি। কিন্তু হজরত ইবরাহীম এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, এ জন্য আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিয়েছেন। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিন পিতা-পুত্রের চরম আনুগত্যের নিদর্শন বিশ্ববাসীর সামনে স্থাপন করে দিলেন।

সত্যান্বেষীরা যুগ যুগ ধরে এখান থেকে আনুগত্যের সবক নেবে। স্থুল বিচার বিবেচনায় উপরে কীভাবে মহান রাব্বুল আলামিনের আদেশ পালনে প্রাধান্য দিতে হয় তার শিক্ষা নেবে। আল্লাহর আদেশের সামনে সব জাগতিক স্বার্থকে কীভাবে কোরবান করতে হয় তার জীবন্ত দৃষ্টান্ত চোখের সামনে দেখতে পাবে। পরিশেষে বলতে চাই, আমরাও যদি এরকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি তাহলে আল্লাহও আমাদের প্রতিদান দেবেন ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের তার নৈকট্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন—  আমিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সবজান নেসা মহিলা কামিল মাদ্রাসা, ফরিদপুর

সর্বশেষ খবর