শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আন্তরিকতার সঙ্গে আমল করতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আন্তরিকতার সঙ্গে আমল করতে হবে

হজ পালনে এখলাস বা আন্তরিকতার সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। সব  ইবাদতের ক্ষেত্রেই এখলাসের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ইবাদত কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা এখলাসের ওপর নির্ভরশীল। কারণ আল্লাহর খুশির জন্য যদি নেক আমল করা হয়— কেবল তাহলেই তা কবুল হবে। আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে। নতুবা অনেক ভালো কাজ করেও তা বিফলে যাবে। মানুষকে খুশি করার জন্য যত ভালো কাজই করি না কেন তাতে কোনো সওয়াব হবে না। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সব কাজকর্ম নিয়ত অনুযায়ীই হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তাই পায়। কাজেই যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দিকে (উদ্দেশ্যে) হবে, ফলত তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (দিকে) পরিগণিত হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া লাভে কিংবা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেদিকে গণ্য হবে। যার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। বোখারি ও মুসলিম। লোক দেখানোর আমলকে নবী (সা.) শিরক বলেছেন। হজরত শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) বলেন, আমি রসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ল সে শিরক করল। যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য রোজা রাখল সে শিরক করল। যে ব্যক্তি দেখানের জন্য দান খয়রাত করল সে শিরক করল। আহমদ। নবী করিম (সা.) আরও ইরশাদ করছেন, যে ব্যক্তি অন্যকে শোনানোর জন্য কিছু করে আল্লাহতায়ালা তা অন্যকে শোনাবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে দেখানোর জন্য কিছু করে আল্লাহতায়ালা  তা অন্যকে দেখাবেন। বোখারি ও মুসলিম। লোক দেখানোর জন্য বড় বড় আমলও বিফলে যাবে। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ একটি লম্বা হাদিস বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য পেশ করা হবে সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর এজলাসে উপস্থিত করা হবে। তারপর আল্লাহপাক তাকে (দুনিয়ার প্রদত্ত) নিয়ামতসমূহের কথা প্রথমে স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহতায়ালা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আচ্ছা বলত শুনি! এতসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতার বিনিময়ে দুনিয়াতে তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরের সঙ্গে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি শহীদ হয়ে গেছি। তখন আল্লাহ পাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে লড়াই করেছ যেন তোমাকে বীর বাহাদুর বলা হয়। (আর তোমার অভিপ্রায় অনুসারে) তোমাকে দুনিয়াতে তাও বলা হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে, তখন তাকে উপুড় করে টানাহেঁচড়া করতে করতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর সেই ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দীনি ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ পাকের দরবারে হাজির করা হবে। তাকে প্রথমে তার নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। তারপর আল্লাহতায়ালা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এই সব নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি নিজে স্বয়ং ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকেও শিক্ষা দান করেছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কোরআন পাক অধ্যয়ন করেছি। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই জন্য বিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ করেছ যেন তোমাকে বিদ্বান বলা হয়। তারপর (এবং এই তোমার অভিপ্রায় অনুসারে) তোমাকে বিদ্বান ও কারী বলাও হয়েছে। তারপর (ফেরেশতাদের) তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহপাক বিপুল ধনসম্পদ দান করে বিত্তবান বানিয়েছেন, তাকে আল্লাহতায়ালা প্রথমে প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর সে তখন সব নিয়ামতের কথা অকপটে স্বীকার করবে। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এই নিয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, যে সব ধনসম্পদ ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে এমন একটি পথও আমি হাতছাড়া করিনি। সুতরাং তোমার সন্তুষ্টি জন্য তার সবকটাতেই আমি ধনসম্পদ ব্যয় করেছি। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টি জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে তা করেছিলে যাতে তোমাকে বলা হয় সে একজন দানবীর। সুতরাং তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী (দুনিয়াতে) তোমাকে দানবীর বলা হয়েছে। তারপর (ফেরেশতাদের) তার সম্পর্কে বলা হবে। সুতরাং নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। মুসলিম। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এখলাস দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর