রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নেসাবের মালিকদের কোরবানি ওয়াজিব

মাওলানা আবদুর রশিদ

পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নেসাবের মালিক হবেন, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের মালিক হওয়ার অর্থ হলো সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা সে পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হওয়া। একইভাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সে মূল্যমানের অর্থসম্পদের মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত হিসেবে কোরবানি দেওয়া হয়। আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী রসুলের শরিয়তে কোরবানির বিধান ছিল। রসুল (সা.) প্রতিবছরই কোরবানি দিতেন। জীবনের সর্বশেষ বছর তিনি ১০০ উট কোরবানি দেন। জায়দ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই কোরবানি কি? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এতে আমাদের লাভ কি? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক লোমের পরিবর্তেই পুরস্কার রয়েছে। কোরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা নিছক মাংস খাওয়ার প্রতিযোগিতা নয়। কোরবানি লৌকিকতার বিষয় নয় এটি একটি ইবাদত। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। কোরবানির মাধ্যমে আমরা যদি আল্লাহতায়ালার দাসত্ব প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে সেটা ইবাদত হবে না, নিছক পশু জবেহ হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘কোরবানির মাংস, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং এর মাধ্যমে তাকওয়া তথা যে দাসত্ব আল্লাহর জন্য পেশ করা হয় তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে।’

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি করার সময় দুটি আয়াত পাঠ করতেন। একটির অর্থ হলো আমি আমার মুখকে যিনি আকাশ জমি সৃষ্টি করছেন তার অভিমুখী হলাম এবং আমি মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই আয়াত তিলাওয়াতের মাধ্যমে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শিরকমুক্ত হতে হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আয়াত তেলাওয়াত করতেন, যার অর্থ— ‘আমার নামাজ, আমার সব ইবাদত, আমার জীবন-মৃত্যু একমাত্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার জন্য উৎসর্গকৃত। তার কোনো অংশীদার নেই।  এর জন্য আমি আদিষ্ট’। এই আয়াতটি তিলাওয়াত করে তিনি উম্মতকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধু পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে না বরং নৈকট্য অর্জনের জন্য পুরো জীবন-মৃত্যু আল্লাহতায়ালার জন্য উৎসর্গ করতে হবে।

              লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর