সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ

মেয়র আনিসুল হক

এবারের কোরবানি ঈদে পশুর বর্জ্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দিলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।  এ সময় তিনি কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ডিএনসিসির পরিকল্পনা ও সার্বিক কার্যক্রম কী হবে, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক— গোলাম রাব্বানী

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কোরবানির জন্য কতটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে?

মেয়র আনিসুল হক : কোরবানি দেওয়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪৮টি। এর মধ্যে ১৯৬টি স্থানে মাওলানা, কসাইসহ যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। পশু জবাইয়ের পর ফিনাইল ও স্যাভলন মিশ্রিত পানি দিয়ে প্রতিটি স্থান পরিষ্কার করা হবে। এ ছাড়া জবাইয়ের প্রতিটি স্থানে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী নিযুক্ত করে মনিটরিং করা হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কখন থেকে অপসারণ কার্যক্রম শুরু হবে?

আনিসুল হক : গত বছরের ন্যায় এবারও ঈদের দিন বেলা ২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত শহর পরিষ্কার করা হবে। ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশা করছি নগরবাসী ও মিডিয়ার সহযোগিতায় আমরা পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা শহরের পশুবর্জ্য সম্পূর্ণ অপসারণে সক্ষম হব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুতি কেমন?

আনিসুল হক : বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১৩০টি আধুনিক বর্জ্যবাহী ট্রাক, ১৬টি ডাম্পার, ৮টি পেলোডার, ৩টি টায়ার ডোজার, একটি প্রাইম মুভার, ২টি ট্রেইলর, ১টি এক্সকেভেটর ও ৩টি চেইন ডোজার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজার ৫০০ টন বর্জ্যের পাশাপাশি কোরবানি উপলক্ষে আরও ৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হবে। অতিরিক্ত বর্জ্য অপসারণে আরও ৭০টি ট্রাক, ৬টি ডাম্পার, একটি প্রাইম মুভার, ২টি এক্সকেভেটর ও ১টি চেইন ডোজার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণে ডিএনসিসির দুই হাজার ২২৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার পাঁচশ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিযুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্জ্য দ্রুত অপসারণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

আনিসুল হক : সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের সুবিধার্থে দুই লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। ডিএনসিসির প্রতিটি ঘরেই তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি এলাকায় থাকছে পর্যাপ্ত ভ্যান সার্ভিস ব্যবস্থা। পশুর বর্জ্য সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে অসমর্থ হলে তা ডাস্টবিনে ফেলতে ভ্যান সার্ভিসের সহায়তাও নিতে পারবেন নগরবাসী। এ জন্য ইতিমধ্যে মাইকিং শুরু হয়েছে। সাড়ে পাঁচ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। টেলিভিশন, পত্রিকা, রেডিও এবং ভ্রাম্যমাণ প্রচারণার জন্য ৬টি গাড়ির সাহায্যে ৭ দিনব্যাপী ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চলবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরবাসীর প্রতি আপনার চাওয়া কি?

আনিসুল হক : নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— এলাকার প্রধান সড়কগুলোর ওপরে যেখানে সেখানে কোরবানির পশু জবাই না করে আমাদের দেওয়া নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করুন। আমরা যে পলিব্যাগ সরবরাহ করেছি, আপনারা সেই ব্যাগে পশুবর্জ্য ভরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য রেখে দিন। এতে আমাদের পক্ষে যেমন সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পূর্ণ নগরী পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হবে, তেমনি আপনারা পাবেন একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত ঈদ উদযাপনের আনন্দ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কোরবানির ঈদে বর্জ্যের পরিমাণ কেমন হতে পারে?

আনিসুল হক : এমনিতে ডিএনসিসিতে দৈনিক আড়াই হাজার টন বর্জ্য হয়। তবে এবারের কোরবানি ঈদে ডিএনসিসিতে মোট বর্জ্য হবে নয় হাজার টন। এই বর্জ্যগুলো পরিষ্কারের জন্য ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ঈদে ৩ হাজার ২৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কোরবানির সব বর্জ্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পশুর হাটের বর্জ্য কীভাবে অপসারণ হবে?

আনিসুল হক : ঈদে ডিএনসিসি এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট ছাড়া আরও আটটি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। ঈদের দিন বেলা ২টায় উত্তরা অথবা বনানীর কোনো একটি অস্থায়ী পশুর হাট পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হবে। এসব পশুর হাটে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মোবাইল টিম থাকবে। হাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নেতৃত্বে বর্জ্যবাহী পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করবে। এ ছাড়া হাটের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য ব্লিচিং, ফিনাইল ও স্যাভলন মিশ্রিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণে ঈদের আগের রাতে ১০টি ট্রাক নিয়োজিত করা হবে। পশুর হাট ও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে ডিএনসিসির পানির গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নৌবাহিনীর থেকে ৭টি পরিবাহী গাড়ি ঈদের দিন সকাল থেকেই নিয়োজিত রাখা হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : অপসারণ কার্যক্রম কীভাবে মনিটরিং হবে?

আনিসুল হক : ঈদ উদযাপন স্বাচ্ছন্দ্য করতে আমরা সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়োগ করেছি। এবারের ঈদে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। এ ছাড়া ডিএনসিসির পাঁচটি অঞ্চলে একটি করে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমে আমাদের দুজন কর্মকর্তা প্রতিনিধিত্ব করছেন। ঈদের দিন দুপুর ১২টা থেকে বনানী কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ) অফিস রুমে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে, যা বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ফোনে অভিযোগ করার ব্যবস্থা থাকছে?

আনিসুল হক : ডিএনসিসিকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে পাঁচটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে কন্ট্রোল রুমে ফোন করলেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

ঢাকা উত্তরে বর্জ্য সরাতে ফোন করুন কন্ট্রোল রুমে।

অঞ্চল-১ এর আওতায় রয়েছে উত্তরা, কুড়িল, খিলক্ষেত, টানপাড়া, জোয়ারসাহারা, নিকুঞ্জ, আজমপুর, আবদুল্লাহপুর। এই এলাকার বাসিন্দারা ০১৭১৭-১০২০২৫ নম্বরে ফোন করলে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা পাবেন।

অঞ্চল-২ এর আওতায় মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা, পল্লবী, মিরপুর-১, ১০, ১২ ও ১৪ নম্বর। অঞ্চল-২ এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭১১-৫৭৭৪৭৪।

অঞ্চল-৩ এর আওতায় গুলশান, বনানী, বাড্ডা, নর্দা, নাখালপাড়া, মগবাজার, রামপুরা ও বনশ্রী। এসব এলাকার বাসিন্দারা ফোন করবেন ০১৯২৩-১১৩৬৩৬ নম্বরে, পাওয়া যাবে সমাধান।

অঞ্চল-৪ এর আওতায় রয়েছে শেওড়াপাড়া, রোকেয়া সরণি, কল্যাণপুর, দারুস সালাম। এ অঞ্চলের কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭১২-৫৮৪০৮৬।

অঞ্চল-৫ এর মধ্যে এলাকা রয়েছে কাওরানবাজার, ফার্মগেট, মণিপুরীপাড়া, তেজকুনী বাজার, লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকা। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা ০১৭১১-৩১৩২৮৯ নম্বরে ফোন করে পেতে পারেন সুবিধা।

দুটি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এর একটি মিরপুর, নম্বর ০২-৯০০৪৭৩৪ এবং গুলশান এলাকার কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৮৬১৩৯৩। এর বাইরে কেউ চাইলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমেও ফোন করতে পারেন।  যার নম্বর ৯৮৫৬৭০৯ ও ৯৮৫৮০০৬।

 

 

মেয়র সাঈদ খোকন

এবার কোরবানির ঈদে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ার্ডগুলোতে পশু জবাই করার জন্য মোট ৫০৪টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণের কাজ ঈদের দিন দুপুরেই শুরু হবে; যা চলবে ঈদের তৃতীয় দিনের দুপুর পর্যন্ত। দক্ষিণে মোট আট হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন। এমনকি কোরবানির বর্জ্য ফেলার জন্য নগরবাসীর বাড়িতে বিনামূল্যে আড়াই লাখ ব্যাগও পৌঁছে দিয়েছে ডিএসসিসি। এবার ঈদের পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক— জিন্নাতুন নূর

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কোরবানির ঈদের বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি কেমন?

মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজ সমাধায় আমরা এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তার জন্য মনিটরিংও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিক্রেতারা পশু মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়াচ্ছেন কিনা এবং কোরবানির পশু সুস্থ কিনা তা নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা পশুর হাটের প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করেছি। আর এ নজরদারির কাজ বৃহস্পতিবারই শুরু করেছি। গতবার বর্জ্য অপসারণে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হলেও এবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বিষয়টি সুুষ্ঠুভাবে সমাধার জন্য সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাউন্সিলরসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে দফায় দফায় মতবিনিময়ও করেছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এবার কোরবানির ঈদে ঢাকা দক্ষিণে কতসংখ্যক পশু জবাই হতে পারে এবং কয়টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : এ বছর ডিএসসিসিতে আড়াই লাখের বেশি পশু জবাই করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর দক্ষিণ সিটিতে পশু জবাইয়ের জন্য মোট ৫০৪টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্জ্য অপসারণে আপনাদের গৃহীত পদক্ষেপ কী কী?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : আমরা ঈদে পশুর হাট থেকে শুরু করে কোরবানির পর বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছি। এজন্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া হাটগুলোর বর্জ্য অপসারণে বুলডোজার ও পেলোডার ইত্যাদি ভারী যন্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পশুর হাটগুলোয় ক্রেতাদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকছে?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : পশুর হাটে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং যে কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রম যাতে না হয় তা নজরদারি করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আমাদের সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে গরুর হাটগুলোয় জাল টাকার বিষয়টি তদারকির জন্য ঢাকা দক্ষিণের হাটগুলোয় পুলিশ সদস্যরা তত্পর থাকবেন। এর পাশাপাশি ক্রেতাদের সুবিধার্থে আমাদের হাটগুলো এমন স্থানে বসানো হয়েছে যাতে তারা অল্প দূরত্বের মধ্যেই এটিএম বুথ ব্যবহার করতে পারেন। হাটগুলোয় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংযোগেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সহযোগিতায় আরও থাকছে ফায়ার সার্ভিস বাহিনী।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম কখন শুরু হবে?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : এবার কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের কাজ ঈদের দিন দুপুরেই শুরু হবে। আর এবার ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছি। বর্জ্য অপসারণে মোট ২৪টি গাড়ি ব্যবহার করছি। আর আমিসহ এবার দক্ষিণে মোট ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কোরবানির পশুর ময়লা অপসারণে কাজ করবেন। সাধারণত ঈদের দিন দুপুরেই শতকরা ৪০ ভাগ পশু কোরবানি সম্পন্ন হয়ে যায়। অবশিষ্ট পশু কোরবানি হয় ঈদের দ্বিতীয় দিনে। তবে তৃতীয় দিনে সাধারণত পশু কোরবানি কম হয়। আর আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আমরা ঈদের তৃতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এবার দক্ষিণে কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোয় কী কী সুবিধা থাকছে?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : দক্ষিণের নির্ধারিত কোরবানির স্থানগুলোয় এবার ইমাম ও কসাই থাকবেন। পশু জবাই করার জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোয় বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে তাঁবু ও শামিয়ানা টাঙানো হচ্ছে। ফলে নগরবাসী এ স্থানগুলোয় স্বাচ্ছন্দ্যে পশু কোরবানি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কোরবানির পর বর্জ্য অপসারণে নাগরিকদের কীভাবে সিটি করপোরেশন সাহায্য করছে?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : আমরা এবারও ঈদের বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রতিটি বাড়ি বিনামূল্যে আড়াই লাখ ব্যাগ পৌঁছে দিয়েছি। নগরবাসী এই ব্যাগে পশুর বর্জ্য ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে আসবেন বলেই আশা করছি। এ ছাড়া পশু জবাইয়ের পর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার ও দুর্গন্ধ দূর করতে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অফিসগুলোতে ব্লিচিং পাউডারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নগরীর অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্জ্য অপসারণে নাগরিক সচেতনতার কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করছেন?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : আমরা এবারও ঈদের বর্জ্য অপসারণের অংশ হিসেবে গণমাধ্যমগুলোয় প্রচার চালিয়েছি। পত্রপত্রিকায় বর্জ্য অপসারণসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছি। এবার দ্বিতীয়বারের মতো আমরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করতে যাচ্ছি। বর্জ্য অপসারণে মানুষকে সচেতন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এতে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা আশা করছি আরও চার থেকে পাঁচ বছর পর কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে পুরোপুরি সুফল পাব। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নগরবাসী অনেক সচেতন হয়েছেন। আশা করছি ধীরে ধীরে ঢাকার মানুষ এ কার্যক্রমে আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করবেন। এ বিষয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ সচেতনতা গড়ে তুলতে সমাজের সব শ্রেণির নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতামূলক র‌্যালিও করেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজধানীতে কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য আধুনিক কোনো ব্যবস্থার কথা ভাবছেন কি?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : ঢাকা শহরের দক্ষিণ অংশে গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়। আর এত বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য আমাদের যে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরি করতে হবে তার নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর এটি চট করে নির্মাণ করা সম্ভবও নয়। আমরা দেখেছি সৌদি আরবে আধুনিক জবাইখানায় একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি দেওয়া হয়। সৌদির মতো এ ধরনের আধুনিক জবাইখানা তৈরি করা সময়সাপেক্ষ। যেহেতু কোরবানির ঈদ শুধু একটি দিনের জন্য তাই সৌদির মতো শুধু কোরবানির এমন জবাইখানা নির্মাণ আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প। তবে সাধারণ সময়ে সিটি করপোরেশনের জবাইখানাগুলোয় যে পশু জবাই করা হয় তার জন্য আমরা দুটি আধুনিক জবাইখানা তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর একটি হবে কাপ্তানবাজারে আর অন্যটি হাজারীবাগে। এ জবাইখানাগুলোয় একসঙ্গে দুই হাজার পশু জবাই করা যাবে। আশা করছি এর কাজ আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে শুরু করা হবে। আর এর নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রতি ঈদেই কোরবানির পশুর দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন : সাধারণত ভারত থেকে পশু আমদানি বেশি হলে হাটে পশুর দামও কম থাকে। আর এ বিষয়টি তদারকির কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। স্বাভাবিক কারণেই হাটে পশুর দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সিটি করপোরেশনের হাতে নেই।

সর্বশেষ খবর