শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদে ইমামতির যোগ্যতা

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান

শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদে ইমামতির যোগ্যতা

শরিয়তের মাসয়ালা হলো যার প্রতি মুসল্লিদের শ্রদ্ধা-ভক্তি বেশি থাকে এবং যিনি বড় আলেম ও নামাজের মাসয়ালা মাসায়েল সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তিনি ইমাম হওয়ার যোগ্য। সুতরাং ইমাম নির্বাচন করার সময় দেখা উচিত ইলম, আমল, আখলাক, তেলাওয়াতের সহিহ শুদ্ধতা এবং বয়স।

অর্থাৎ ইমামতির জন্য একাধিক লোক প্রার্থী হলে, তখন যিনি বড় আলেম তিনি অগ্রাধিকার পাবেন। কারণ নামাজবিষয়ক ইলম না থাকলে সে ইমামতির যোগ্য নয়। তার দ্বারা নামাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা মনে পড়ল।

জনৈক ইমাম সাহেব একাকী নামাজ পড়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই নামাজ পড়ে থাকেন, কিন্তু ইমামতি করতে গেলেই হেলতে-দুলতে শুরু করেন। একদা এক মুসল্লি জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর আপনি একা নামাজ পড়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই পড়ে থাকেন। কিন্তু ইমামতি করার সময় হেলাদোলা শুরু করেন কেন? ইমাম সাহেব মুসল্লির দিকে তাকিয়ে বললেন, কিতাবে লেখা আছে ‘যাব ইমামতি কারো তো হেলকে নামাজ পড়হো’ অর্থাৎ যখন ইমামতি কর তখন হেলে-দুলে নামাজ পড়বে। আসলে শব্দটি হেলকে নয়, হালকা। হালকা শব্দের অর্থ হলো সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ যখন ইমামতি করবে তখন নামাজ সংক্ষিপ্ত পড়বে। কারণ জামাতে অনেক অসুস্থ, দুর্বল, রোগী এবং হাজতমন্দ ও গরিব লোক থাকে, যাদের বিভিন্ন প্রয়োজন থাকতে পারে, তাই নামাজ সহজ ও সংক্ষিপ্ত করে পড়বে। সংক্ষিপ্ত এর আরবি হলো ‘তাখফীফ’ আর উর্দু হলো ‘হালকা’। উর্দুতে যেহেতু যবর-যের-পেশ ব্যবহার হয় না তাই তিনি হালকা শব্দটিকেই যবরের পরিবর্তে যের দিয়ে হেলকে পড়েছেন। যার অর্থ হলো হেলে-দুলে। তাই তিনি নামাজ পড়ানোর সময় হেলে-দুলো পড়াতেন। মূলত নামাজ সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই এরূপ হয়েছে। সুতরাং ইমামতির জন্য বড় আলেম হওয়া আবশ্যক। শুধু বড় আলেম হলেই চলবে না, মুত্তাবিয়ে সুন্নত হতে হবে এবং সহিহ-শুদ্ধ তেলাওয়াতকারী হতে হবে। এ গুণগুলোতে যদি একাধিকজন সমান সমান হয়ে যান, তাহলে যার বয়স বেশি, তিনি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। এতেও যদি সমান সমান হয়ে যান, তাহলে যিনি বুজুর্গ তিনি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। কারণ নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তাই এতে যেন ভুলত্রুটি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমামের প্রতি অধিকাংশ মুসল্লির সমর্থন নেই, তার ইমামতি করা ঠিক নয়। যদি মুসল্লিদের অসমর্থনের ন্যায়সঙ্গত কারণ থাকে, তাহলে এমন ইমামের প্রতি লা’নত পতিত হয়। এখন যদি কোনো মুসল্লি বলেন, আমাদের ইমামের পেছনে নামাজ পড়া যাবে না। কারণ, তিনি টেলিভিশন, সুদ-ঘুষ, ফটো ও কুলখানির বিরুদ্ধে কথা বলেন। ইমামের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মানুষ মুখে মুখে যাই বলুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সবাই এর পক্ষে, আল্লাহও এ বয়ানের পক্ষে। সুতরাং কমপক্ষে এ বিষয়ে ইমামের বিরুদ্ধাচরণ করা ঠিক নয়। ইমাম সাহেব যদি অপরাধ করেন, গোনাহ করেন, যেমন— দাঁড়ি কেটে এক মুঠোর কম রাখেন, তাহলে তার জন্য ইমামতি করা মাকরুহ। আবার যেসব ইমাম মহিলাদের সম্মুখে যান কিংবা মহিলারা তাদের কাছে বেপর্দা যাতায়াত করেন। তাদের পেছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী। মন তো মহিলাদের দেখতে চায় কিন্তু আমি যদি মহিলাদের দেখি। তাহলে এ মসজিদের (গুলশান আজাদ মসজিদ) দশ হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ানো আমার জন্য মাকরুহে-তাহরিমী হবে।  তবে অপারগ অবস্থার মাসয়ালা ভিন্ন। যেমন কেউ মৃত্যুপ্রায় অবস্থায়, আর মহিলা ডাক্তার ব্যতীত কোনো পুরুষ ডাক্তার নেই, সেখানে মহিলা ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করার অনুমতি শরিয়তে আছে।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর