সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নগরায়ণের এদিক সেদিক

আয় বৈষম্য কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে

নগরায়ণ ও উন্নয়ন অনেকাংশেই সমার্থক শব্দ। সভ্যতার বিকাশই ঘটেছে নগরায়ণের মাধ্যমে। উন্নয়নের সোপানে মানুষের পা রাখার পেছনে নগরায়ণ নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশকে এক সময় ভাবা হতো বিরাট এক গ্রাম। এই জনপদে হাজার বছর আগে নগরায়ণ শুরু হলেও তার প্রক্রিয়া ছিল মন্থর। স্বাধীনতার পর এ ক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবছর নগর এলাকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ৬ শতাংশ হারে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নগর এলাকার দরিদ্রজনের সংখ্যা। গ্রামের দরিদ্রজনরা জীবন-জীবিকার সংগ্রামকে সহজতর করতে ব্যাপকভাবে শহরমুখী হওয়ায় গ্রামীণ দরিদ্র লোকের সংখ্যা হ্রাস পেলেও নগর এলাকায় তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের বক্তারা বাংলাদেশে নগরায়ণের হার দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নগর এলাকায় গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে নগর থেকে। জিডিপিতে শুধু রাজধানী ঢাকার অবদান ৩৬ শতাংশ। গ্রামের ব্যাপক সংখ্যক গরিব মানুষ নগরে চলে আসায় ১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে নগর এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ২০ লাখ। একই সময়ে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে ৯০ লাখ। দেশে নগরায়ণের গতি দ্রুততর হওয়া জাতীয় অগ্রগতির জন্য সুসংবাদ বলে বিবেচিত হলেও নগরে দরিদ্রজনের সংখ্যা বৃদ্ধি দুঃসংবাদের নামান্তর। নগর ও গ্রামের মধ্যে আয় বৈষম্য থাকায় গরিব মানুষ নগরে ঠাঁই নিলেও জীবনযুদ্ধে তাদের অনেকেই সুবিধা করতে পারছে না। স্বভাবতই তার প্রভাব পড়ছে নগর জীবনে। রাজধানী ঢাকা ক্রমেই অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে। রাজধানীকে বসবাসের যোগ্য নগরীতে পরিণত করতে হলে দরিদ্রজনদের ভাগ্যোন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। আবাসনসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দরিদ্রজনদের জন্য সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে নিস্পৃহ  থাকার মনোভাব বিপর্যয়ের সূচনা করবে। নগর এলাকার আইনশৃঙ্খলাসহ সব কিছুতেই তার অশুভ প্রভাব পড়বে। যা কাম্য হওয়া উচিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর