মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্যাতন

আইনি সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে

গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন কোনো কোনো গৃহকর্ত্রী বা গৃহস্বামীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারাও যে মানুষ এ উপলব্ধিও হারিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে শিশু গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন যেভাবে বাড়ছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ১৭ শিশু গৃহপরিচারিকা নিহত হয়েছে নির্যাতনের শিকার হয়ে। ৮-১০ বছরের শিশুদের খুন্তি গরম করে ছেঁকা, হাত-পা থেঁতলে দেওয়াসহ এহেন নির্যাতন নেই যা থেকে তারা দূরে থাকছে। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া তো নারী গৃহপরিচারিকাদের একাংশের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। যারা শিশুদের ওপর কথায় কথায় নির্যাতন চালায়, তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন অসুস্থ মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গৃহপরিচারিকা বিশেষত শিশু গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে কেউই পিছিয়ে থাকছে না। সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যারা জড়িত, তারাও জড়িত হচ্ছে নির্যাতনের মতো বর্বরতার সঙ্গে। বাদ যাচ্ছেন না ক্রীড়া জগতের নন্দিত খেলোয়াড়রা। মুখে যারা মানবাধিকারের বুলি আওড়ান তাদের অনেকের ঘর শিশু নির্যাতনের আখড়া হিসেবে ব্যবহূত হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। এদের এক বড় অংশকে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দেশে শিশু শ্রমিকদের সুরক্ষায় আইন না থাকায় নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে তা ভূমিকা রাখতে পারছে না। কোনো কোনো নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত আপসের চোরাবালিতে তা ঢাকা পড়ে যায়। গরিব গৃহপরিচারিকা ও শিশু শ্রমিকদের অভিভাবকরা মামলা চালিয়ে আরও হয়রানি হওয়ার চেয়ে আপস করাকেই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন। গৃহপরিচারিকা ও শিশু গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে কড়া আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এ ব্যাপারে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগও নেওয়া দরকার।

সর্বশেষ খবর