বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জন্মদিনের খোলা চিঠি

প্রিয় জনগণের নেত্রী, শুভ জন্মদিন

আরিফা রহমান রুমা

প্রিয় জনগণের নেত্রী, শুভ জন্মদিন

জীবনের প্রথম চিঠি, না তা কোনো প্রেমপত্র ছিল না। মাত্র দশে পা দেওয়া আমাকে লিখেছিলেন আপনি। চৌকোণো, নকশি কাঁথার ছাপ দেওয়া খামে এ চিঠি আমার পরিবারের কাছে আমাকে ভীষণ সম্মানিত আর গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল। আমার লেখা কোনো চিঠির জবাব নয় বরং আপনার লেখা চিঠির জবাব পেতে দেরি হওয়ায় লোক মারফত আপনিই তাড়া দিচ্ছিলেন বারবার। আজ যখন শীর্ষেন্দুকে লেখা আপনার জবাব নিয়ে দেশজুড়ে প্রশংসার ঢেউ আমি তখন মনে মনে ভাবি, প্রিয় নেত্রীকে জানতে দেশবাসীর এখনো ঢের বাকি। তাই ব্যক্তিগত চিঠিকে অবমুক্ত করতেই হলো জনসম্মুখে। ক্ষমা চাচ্ছি আপনার অনুমতি ছাড়াই তা প্রকাশের।

মফস্বলে বেড়ে ওঠা মাত্র ১০ বছরের অতি সাধারণ এক চঞ্চল কিশোরী তখন আমি, আর দশটি কিশোরীর মতোই পড়াশোনা, গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি আর খেলাধুলা করেই কাটে সারা বেলা। পার্থক্য বলতে পারিবারিক কারণেই কিছুটা রাজনৈতিক সচেতন ছিলাম হয়তো তা বয়সের তুলনায় খানিকটা বেশি। কিন্তু তার বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে এমন প্রাপ্তির কথা স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, আমার চলার পথের আলো হয়ে আজো যা আমাকে পথ দেখিয়ে চলছে।

১৯৮৬ সালের রাজনৈতিক সেই অস্থিরতার সময়ে, দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়ানোর সেকালে আপনার ফুরসত ছিল এ কথা ভাবার কোনো সুযোগই নেই। জিয়ার পথ ধরে স্বৈরাচার এরশাদের কুশাসন আর অত্যাচারে মানুষ যখন দিশাহারা তখন আপনার নেতৃত্বে এরশাদ পতনে গড়ে তোলা দুর্বার সেই আন্দোলনের ঢেউ আমাদের মফস্বল শহরগুলোতেও আছড়ে পড়েছিল। আমাদের মতো ছোটদেরও তখন বিকালে খেলার জায়গা করে নিয়েছিল এরশাদবিরোধী মিছিল। গণতন্ত্রের পথে দৃঢ় সে যাত্রায় আপনিই ছিলেন বৈঠা হাতে। অমন এক সময় এরকম একটি চিঠি এক সদ্য কিশোরীকে কতটা বদলে দিয়েছিল আপনার তা জানা আছে কিনা জানি না। তবে আমার অভিজ্ঞতায় আমি শীর্ষেন্দুর বদলে যাওয়া দেখতে পাচ্ছি দিব্য চোখে।

আপনার হাত ধরে আজ দেশের দুর্জনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া, দুর্নীতির কলঙ্ক গায়ে মেখে মাথা নুইয়ে থাকা দেশ আজ আকাশছোঁয়ার অপেক্ষায়। ইতিহাস আপনাকে নানাভাবে মূল্যায়ন করবে, আপনার কাজের স্বীকৃতিও আসবে নানাভাবে। পরিবারের সব হারিয়ে কেবলমাত্র দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদে যে আত্মত্যাগ তার মূল্যায়ন দেশের মানুষ করছে এবং করবে, সারা পৃথিবী আজ আপনার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেউ জানাবে আপনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কেউবা গবেষণা করবে আপনার প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে, আগুনের লেলিহান শিখায় সব হারিয়ে আপনাকেই পেল যারা মা হিসেবে, নিঃস্ব যে নারীর পরম আশ্রয় হয়ে উঠল আপনার হৃদয়ের উষ্ণতা তাদের মূল্যায়ন হবে অনেকটা আবেগিক, যে কিশোর বা কিশোরীটির জীবন শুরু হলো আপনার লেখা চিঠি পড়ে তাদের কাছে আপনি কেবলই এক উজ্জ্বল আলো, যার পথ ধরে চলতে শেখা, যার ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া, আজীবন ঠিক আপনার পথ ধরে মানুষের পাশে থাকার ব্রত নেওয়া।

দূরদর্শী রাজনীতিবিদ আর দক্ষ হাতে দেশকে এগিয়ে নেওয়া আপনার ভিতরকার এমন কোমল, ভালোবাসাময় স্নিগ্ধ একটি রূপের সম্মিলন আছে বলেই আপনি অন্য সবার থেকে একেবারেই আলাদা। নিশ্চয়ই বদলে যাওয়া দেশের সঙ্গে সঙ্গে আপনার ছোঁয়ায় বদলাবে দেশের মানুষ। ঠিক আপনার মতোই মানবতার জয়গানে মোহাচ্ছন্ন হবে সবাই, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই গেয়ে উঠবে ভালোবাসার গান। বাঙালি খুঁজে পাবে তার শেকড়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হবে তারুণ্য।  প্রিয় জনগণের নেত্রী, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাসহ শুভ জন্মদিন।   

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর