রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপি ব্যর্থ হচ্ছে বলেই সরকার টিকে আছে

কাজী সিরাজ

বিএনপি ব্যর্থ হচ্ছে বলেই সরকার টিকে আছে

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশে এখন নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা চলে, রাজনৈতিক অঙ্গন এ নিয়ে বেশ সরগরম। মিটিং-মিছিলে, প্রতিবাদে-বিক্ষোভে মাঠে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে উষ্ণ আলোচনা সবাইকে নিশ্চয়ই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, দেশে এখনো রাজনীতি আছে। মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানা, গুম-হত্যা-ক্রসফায়ার ইত্যাদির খড়গ ঝুলিয়ে রাজনৈতিক মেঠো কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্তব্ধ করা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিন তা চালিয়ে যাওয়া যায় না।  সারা বিশ্বে এর উদাহরণ যেমন আছে, আমাদের ভূখণ্ডেও আছে। কথিত আছে, ব্রিটিশ দখলদারিত্বের আমলে তাদের হুকুম ছাড়া সূর্যও নাকি অস্ত যেত না। হ্যাঁ, সময় একটু বেশি লেগেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীকে এই মাটি থেকে তাড়িয়েছিল। পাকিস্তান আমলে আমাদের ভূখণ্ডের কথাই যদি ধরি তাও প্রেরণাময়। ক্ষমতাসীন একনায়কতান্ত্রিক শাসকরা কখনো ভাবে না, রাষ্ট্রীয় নানা বাহিনী ও অস্ত্র-গোলাবারুদ জনগণের শক্তির চেয়ে অধিক শক্তিশালী নয়। জনগণ কখনো পরাজিত হয় না। পাকিস্তানের এককেন্দ্রিক বিজাতীয় শাসক-শোষকরা, বিশেষ করে সামরিক স্বৈরশাসক আইউব-ইয়াহিয়া জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়েছিল। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু (তখন তাকে বলা হতো বঙ্গশার্দূল) শেখ মুজিবুর রহমানসহ ঢাকাসহ সমগ্র ‘পূর্ব বাংলার’ প্রায়-সব রাজনৈতিক নেতাকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, একমাত্র মিসেস আমেনা বেগম ছাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে ‘বাতি জ্বালানোর’ লোকও ছিল না। আইউবপন্থিরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলাবলি করত ‘সব ঠাণ্ডা করে দেওয়া গেছে’। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে তুষের আগুন জ্বলছিল ধিকি ধিকি করে গণবিচ্ছিন্ন শাসকচক্র তা অনুধাবন করতে পারেনি। তখনো এই বাংলার কিছু কবি আইউব খাঁর বন্দনা করে কবিতা লিখেছেন, লম্বা লম্বা নিবন্ধ লিখেছেন কত চাটুকার! স্তাবক-চাটুকারদের সবার মুখে একই কথা— ‘সব কুচ ঠিক হ্যায়।’ কিছুই যে ঠিক ছিল না ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছিল হঠাৎ গর্জে ওঠা বাঙালি। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয় তাকে। তিনি এক নম্বর আসামি। অনেকের ধারণা ছিল তার ফাঁসি নিশ্চিত। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কণ্ঠে পাকিস্তানি শাসকরা যেন সিংহের গর্জন শুনল। তিনি বললেন, মুজিবকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করব। ইতিমধ্যে গড়ে ওঠে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১১ দফা (এর ভিতর ২ ও ৩ নম্বর দফায় হুবহু ছয় দফাও অন্তর্ভুক্ত ছিল) কর্মসূচির ভিত্তিতে সারা ‘পূর্ববাংলাই’ জেগে উঠল। স্লোগান ধ্বনিত হলো লাখো কণ্ঠে— ‘জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনব’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। শেষ পর্যন্ত সব স্ল্লোগান একটি স্ল্লোগানে বাঙ্ময় হয়ে হয়ে ওঠে— ‘জয় বাংলা’। কোথায় গেল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, কোথায় উড়ে গেল আরও কত কি! যখন বুঝতে পারল তখন আর সময় ছিল না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরও আর কিছু করার থাকল না। শিক্ষাটা হচ্ছে, বাঙালির শান্ত, নিস্পৃহ ও ‘ঘুম ঘুম ভাব’ কখনো কখনো প্রচণ্ড ঝড়েরই পূর্বাভাস। বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে তা শতভাগ সত্য। স্বৈরাচার এরশাদের নয় বছরের প্রতাপী শাসনের পতন হতে নব্বই দিনও ঠিকমতো লাগেনি।

এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা আলোচনার বিষয়ের একটি পটভূমি। পটভূমিটা উল্লেখ করলাম আলোচ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পক্ষসমূহের মৃতপ্রায় চেতনাকে কোরামিন দিয়ে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নতুন কথা নয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তা হবেই। পুরাতন বিষয়ের, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত একটি নির্বাচন কমিশনই যাতে আবার গঠিত না হয়, সার্চ করে যাতে আবার দলীয় বা দলানুগত ব্যক্তিদের খুঁজে না আনে সে জন্যই আগাম সতর্কবার্তা বর্তমান আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর চার কমিশনারের পদও সাংবিধানিক পদ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান কমিশনের পাঁচজন কমিশনারের (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ) মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে কয়েক দিনের ব্যবধানে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের প্রধান পাঁচজনের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগের ব্যাপারে সাংবিধানিক কোনো বিপত্তি না থাকলেও তেমন নজির কিন্তু নেই। কেউ কেউ ভাবেন, বর্তমান কমিশন ক্ষমতাসীন সরকারকে যেভাবে ‘সার্ভ’ করেছে তাদেরই বহাল রেখে দেওয়া হতে পারে। এর আগের অর্থাৎ ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন সম্পর্কেও তেমন ভাবা হয়েছিল। কেননা, তারাও কর্ম সার্ভ করেছেন। কিন্তু নানা কারণে তাদের রাখা যায়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে এত বিতর্ক, এত বিরূপ সমালোচনা যে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকেও স্পর্শ করে। তাই বলা চলে কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনার প্যানেল পুনর্বহাল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শঙ্কাটা এখানেই যে, নতুন যে নির্বাচন কমিশন (পাঁচ কমিশনার) গঠিত হবে তাও বর্তমান নির্বাচন কমিশন বা তার চেয়ে আরও সরস ‘দলদাস’ হয় কিনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর চার কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। গতবার থেকে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে যে, রাষ্ট্রপতি আগে একটি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করবেন এবং এই কমিটি যেসব ব্যক্তিকে উপযুক্ত মনে করে রাষ্ট্রপতিকে জানাবেন তাদের মধ্য থেকেই তিনি যাদের উপযুক্ত মনে করবেন তাদের নিয়োগ দেবেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এই ‘সার্চ কমিটি’র ধারণাটি প্রবর্তন করেছেন। অথচ সংবিধানে ‘সার্চ কমিটি’ নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব নেই। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ স্পষ্ট যে, ‘সার্চ কমিটির’ বিষয়টি সম্পূর্ণই সংবিধানবহির্ভূত। অসাংবিধানিক এ কাজটি আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক রাষ্ট্রপতি যেমন করেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত বর্তমান রাষ্ট্রপতিও একই কাজ করবেন, অর্থাৎ তার পূর্বসূরিকে অনুসরণ করবেন বলে মিডিয়ায় জোর প্রচার হচ্ছে। আলোচনাও হচ্ছে সে কারণেই সংবিধান মতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নন। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করেই বলা আছে যে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’ ভয় ও আতঙ্কটা এখানেই যে, সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে হোক আর নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারই হোক, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সুইট ডিজায়ারের কথা পূর্ণ বিবেচনায় নিয়েই সব কিছু করবেন। সংবিধানে ‘আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে’ যে কথাটি লেখা আছে, সে অনুযায়ী কোনো আইন এখনো সংসদে পাস হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারও তা করেনি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আইন করলে এ ব্যাপারে একটা প্রিন্সিপ্যাল সেট হয়ে যাবে। সেই সেট প্রিন্সিপ্যালের বাইরে কেউ যেতে পারবেন না— প্রধানমন্ত্রীও না, রাষ্ট্রপতিও না। কিন্তু আইন ও আইনের নীতিমালা অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে সে কমিশন যদি ক্ষমতাসীন সরকারের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ না হয় তাহলে তো বিপদ। এ যাবৎকাল আমরা সরকারের অনুগত বা বশংবদ নির্বাচন কমিশনই দেখে এসেছি। সব সরকারই তা চেয়েছে। এসব নির্বাচন কমিশন লাখ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়েছে, ভোট জালিয়াতি, ব্যালট ছিনতাই, সিল মারামারিতে সহযোগিতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপ-নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন এবং শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন, তারপর স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনাযোগ্য নোংরা ভূমিকা সমগ্র জাতি এবং বিদেশিরাও প্রত্যক্ষ করেছে। প্রত্যাশার জায়গাটা এই জায়গায় যে, নতুন নির্বাচন কমিশন যেন পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ না করে। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সরকারপক্ষ বর্তমান পদ্ধতিতেই ইসি গঠনের পক্ষপাতী। লীগ সরকারের মন্ত্রী ও শাসক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ‘বিতর্কিত’ না করার জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলের অন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের’ কর্মকাণ্ড যদি জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, মানুষের ভোটাধিকার পূরণের প্রকাশ্য দৃশ্যাবলী দেখেও না দেখার ভান করে, দলবিশেষের স্বার্থে ভোটারবিহীন নির্বাচন (১৯৯৬ ও ২০১৪) অনুমোদন করে, পদে পদে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রাপ্ত ক্ষমতার সদ্ব্যবহার না করে সেই ক্ষমতা ফেরত দিতে চায়, তেমন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলা যদি ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ নিয়ে ‘বিতর্ক’ বা এ প্রতিষ্ঠানকে ‘বিতর্কিত’ করা বলে বিবেচনা করা হয়, সে কথার ‘শানে নজুল’ বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকারের স্তুতি গেয়ে এবং চাটুকারিতা করে যারা একমাত্র ‘সরকারি দলের লোক’— এই যোগ্যতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিসি, ডিজি, চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর পদ বাগিয়েছেন, রেডিও, টিভি চ্যানেলের মালিক হয়েছেন তারা পত্র-পত্রিকায় এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে নতুন করে আইন প্রণয়নের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা কমিশন গঠনে বর্তমান ব্যবস্থাটাই বলবৎ রাখার পক্ষে লড়ে চলেছেন। কার্যত তারা সরকারি ও সরকারদলীয় স্বার্থ রক্ষা করছেন।

দেশের প্রকৃত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের কথাই বলছে, কিন্তু কোনো রূপরেখা তারা এখনো দেয়নি। সিভিল সোসাইটি থেকে এ ব্যাপারে একটি স্থায়ী সমাধানের কথা বলা হচ্ছে। টিআইবিসহ অনেকেই এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কথা বলছে। সংবিধানে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে যে কথা বলা আছে, সেই আইনের বিধান প্রণয়নের কথা বলছেন বিষয়বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংবিধানবহির্ভূত যে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হচ্ছে প্রয়োজনবোধে আইনে ‘সার্চ কমিটির’ বিষয়টি রাখা যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে গঠনের ওপর নির্ভর করছে দেশে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ জন্যই সবাই নড়েচড়ে উঠেছেন। পত্র-পত্রিকা এবং টিভির পর্দা থেকে ইস্যুটি রাজপথে চলে যেতে পারে যদি সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করে। অর্থাৎ সরকার এ ব্যাপারে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে গেলে পরিস্থিতি এখন যেমন আছে তেমন না-ও থাকতে পারে। কারণ নতুন করে গড়া নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। বিএনপিসহ ছোট-বড় কোনো দলই এ ব্যাপারে সরকারকে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। বিএনপির সামনে এটা নতুন একটি ভালো রাজনৈতিক ইস্যু। আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ভোটের অধিকারের জন্য তুমুল আন্দোলন করেছিল ভুয়া ভোটার বাতিল ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। বিএনপির সামনেও এখন সেই একই ইস্যু। ২০০৮ সাল থেকেই কার্যত দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১৪ সাল থেকে তা একেবারেই দৃষ্টিকটু।  হারানো ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে বিএনপি কি যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবে? পারতে হলে দল নয়, তাদের নেতৃত্ব পুনর্গঠন করতে হবে।  সরকার এত ভুল করেও টিকে আছে বিএনপি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে। নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি ইস্যুতে জনগণ যদি জেগে ওঠে তাকে রুখবে কে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর