বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আগামীর বাংলাদেশ

তাসনুভা তাবাসসুম লাবণ্য

বাংলার আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মৌলিক রূপ আলোচনায় নেওয়া হলে বর্তমানে সর্বপ্রথম যে স্থাপনার কথা আসে তা হলো গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। বেসরকারি সাহায্য সংস্থার জন্য নির্মিত একটি বহুমুখী কমপ্লেক্স যা সবার নজর কেড়ে নিয়েছে। ভবনটি একাধিক ব্লকে বিভক্ত, যার মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সব ভবন থেকে আলাদা; কারণ পুরো ভবনটি মাটির নিচে। সবুজ ঘাসে ছেঁয়ে থাকা ছাদ ভবনটিকে প্রকৃতির অংশ করে দিয়েছে। প্রকৌশল দুনিয়ার অত্যন্ত মর্যাদাবান আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৩৮৪টি স্থাপনাকে পেছনে ফেলে সেরা ১৯ তালিকায় রয়েছে স্থপতি কাশেফ মাহবুবের ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার (সূত্র: প্রথম আলো, ১৮ জুন ’১৬)। স্থপতি কাশেফ মাহবুব বলেছেন, ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি পুন্ড্রবর্ধনের বৌদ্ধবিহারের নকশার দ্বারা উদ্বুদ্ধ। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি পাল আমলের বৌদ্ধ বিহারগুলোর মৌলিক ও নিজস্ব ডিজাইনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভবনটি পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত হওয়ার কারণে আধুনিক বাঙালি স্থাপত্যে তা স্বপ্নের রূপ পেয়েছে। ক্ষুদ্র আয়তনের ও ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে মাটির নিচে বাসভবন নির্মাণ করার চিন্তাটি একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ভবনটি মাটির নিচে হওয়ার কারণে পরিবেশ ঠাণ্ডা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, যা পরিবেশবান্ধবও বটে। স্বল্প জায়গায় অধিক লোকের বসবাস ও গ্রামীণ জনপদে উঠান বাড়ির মতো স্বল্প খরচে করা মাটির উপরে ভবনের ছাদ হতে পারে শাকসবজি রোপণের জায়গা। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে এ স্থাপনার মতো করে বাসভবন নির্মাণ করার দিকে দৃষ্টি দেওয়া। স্থপতি কাশেফ মাহবুবকে তার আগা খান পদকে চূড়ান্ত মনোনীত হওয়া এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যের স্বাক্ষর স্থাপনে সক্ষম হওয়াকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। অতীতের যাবতীয় গৌরব ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়ে এ স্থাপনা আমাদের মতো তরুণ স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের অনেক অনুপ্রাণিত করে। যদিও এর আগে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম নিজের সার্বিক কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ মর্যাদাবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা কাশেফ মাহবুবের চিন্তার সঙ্গে মিল রেখে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ডিজাইন গ্রহণ করতে পারি। যেমন, বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৯০ শতাংশজুড়ে রয়েছে গ্রাম। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭২ শতাংশ এখনো গ্রামে বসবাস করছে (সূত্র : ইত্তেফাক, ২৩ জুন’ ১৬)। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সব সরকারই কম-বেশি ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সে কারণে বলা হয়, আগামী ২০৫০ সালের আগেই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নগরীয় সুযোগ-সুবিধার মধ্যে এসে যাবে। আরও জানা যায়, সে সময় এদেশের জনসংখ্যা হবে প্রায় তিন কোটি। সেজন্য কৃষিজমি, খাল-বিল, নদ-নদী তথা সমগ্র পরিবেশকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন দেশোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। অধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাবে। সে কারণে জাতীয় সড়কগুলো উঁচু করে নির্মাণ করতে হবে এবং স্থানীয়দের চলাচলের জন্য মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে নিচু করে সড়ক নির্মাণ করতে হবে। তাছাড়া সমগ্র দেশে দ্রুত চলাচলের জন্য পাতাল রেলও নির্মাণ করতে হবে।     লেখক : শিক্ষার্থী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর