বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইমান বিকিয়ে দেননি হোসাইন (রা.)

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইমান বিকিয়ে দেননি হোসাইন (রা.)

হিজরি ৬১ খ্রিস্টাব্দে ১০ মহররম ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে পাপিষ্ঠ এজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদে নিজের জীবন উৎসর্গ করে মুসলিম উম্মাহকে শিখিয়েছেন- ‘বাতিলের সামনে মাথা বিলিয়ে দেব, ইমান বিকিয়ে দেব না।’ সে দিন রাজতন্ত্রের জনক কুখ্যাত এজিদের কাছে বায়াত গ্রহণ না করার ফলে যুগ যুগ ধরে বিশ্ব মুসলমান ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক’ হিসেবে স্মরণ করছে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে। ইমাম হোসাইন (রা.) খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছেন, পাষণ্ড এজিদের দাবি মেনে নেওয়া মানে হলো ন্যায়-ইনসাফ ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী খেলাফতের কবর রচনা করা এবং স্বৈরাচার-জুলুমবাজ শাসনের গোড়াপত্তন ঘটানো। পাপিষ্ঠ এজিদের ক্ষমতারোহণের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্রের যে বিষবৃক্ষ রোপণ হয়েছে, তার সুদূরপ্রসারী ফল আজ বিশ্ব মুসলমান ভোগ করছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হয়েও আজ অশান্তির আগুন জ্বলছে বিশ্ব মুসলমানের ঘরে ঘরে। লাঞ্ছনা আর অপমানের বেড়ি ঝুলছে প্রত্যেক মুসলমানের গলায়। তবুও ঘুম ভাঙছে না কোরআন ভোলা কারবালা ভোলা মিল্লাতে ইবরাহীম উম্মতে মুহাম্মাদীর। যে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নবী পরিবারে দুগ্ধপোষ্য শিশু পর্যন্ত জীবন বিলিয়ে দিল, মুসলমান আজ সে সত্য ভুলে শিয়া-সুন্নিতে ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। 

কারবালার প্রান্তরে একা দাঁড়িয়ে ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, কেন তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? এ কথা শুনে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইল। এরপর ইমাম হোসাইন (রা.) বললেন, আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবে তোমরা? কী জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবীর (সা.) কাছে? এ কথা শুনেও তারা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আবার ইমাম বললেন, ‘হাল্ মিন্ নাসিরন্ ইয়ানসুরুনা?’ আমাদের সাহায্য করার মতো কি তোমাদের মাঝে একজনও নেই? এ কথা শুনেও ইয়াজিদের সৈন্যরা আগের  মতোই  দাঁড়িয়ে রইল। এরপর ইমাম হোসাইন (রা.) যে কথাটি বলেছিলেন তা খুবই হৃদয়স্পর্শী বেদনাবিধুর। ইমামের শেষ আহ্বানটি ছিল— ‘আলাম্ তাসমাও? আলাইসা ফি কুম মুসলিমু?’ আমার কথা কি শুনতে পাও না? তোমাদের মাঝে কি মাত্র একজন মুসলমানও নেই? গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে তা হবে খুবই বেদনাবিধুর। প্রকৃত পক্ষে বোঝা যায় ইমাম হোসাইন (রা.) আসল এবং নকলের পার্থক্যটা পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেছেন। তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের যারা শহীদ করতে এসেছিল, যারা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তারা ছিল নকল মুসলমান। তার একজনও খাঁটি মুসলমান ছিল না।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর