সড়ক দুর্ঘটনা এ দেশে নিত্যদিনের ঘটনা। দুনিয়ার যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া বাস-ট্রাকের নিচে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা এ দেশে প্রতিদিন ঘটলেও হাসপাতাল চত্বরে বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্সের চাকায় প্রাণহানি সাম্প্রতিক সময়ে দূরের কথা, দূর অতীতেও ঘটেনি। গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন এক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচজন। শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয়ের মালিকানাধীন একটি অ্যাম্বুলেন্স হঠাৎ করেই চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আগত লোকজনের ওপর চড়াও হয়। আর তাতেই মারা যায় এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাসহ চারজন। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পেটে অস্ত্রোপচার করে মৃত এক শিশুকে বের করে আনা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত এক পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো রোগী ছিল না। কোনো হর্ন না বাজিয়েই সেটি দ্রুতবেগে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে। অল্পের জন্য তিনি নিজেও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান। ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডবয়দের ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দেওয়ার ইতিহাস অনেকের জানা। কিন্তু তাদের অনেকেই যে অ্যাম্বুলেন্সসহ অনেক কিছুর মালিক সে বিষয়টি স্পষ্ট হলো এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান, পিয়ন, লিফটম্যানরা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। রোগীদের স্বজনরা তাদের কাছে জিম্মি। ঘাতক অ্যাম্বুলেন্সটি যখন হাসপাতাল চত্বরে মানুষ চাপা দেয়, তখন চালকের সহকারী সেটি চালাচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহৃত হয় রোগী আনা-নেওয়া তথা রোগী বাঁচানোর জন্য। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল চত্বরে সেই অ্যাম্বুলেন্সের চাকায় পাঁচজনের প্রাণ গেল চালকের বদলে সহকারীর দ্বারা চালানোর কারণে। দুর্ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স চাপা দিয়ে পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিই শুধু নয়, ওয়ার্ডবয়দের অ্যাম্বুলেন্সের মালিক বনে যাওয়ার পেছনে কী রহস্য জড়িত তাও উদ্ঘাটন করা হবে। ঢাকা মেডিকেলকে কর্মচারীদের জিম্মি অবস্থা থেকে বের করে আনার স্বার্থে সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমনটিও কাম্য।