সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনিরাপদ খাদ্য

নকল ভেজাল রোধে উদ্যোগী হোন

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার অঢেল টাকা খরচ করলেও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে তারা কতটুকু মনোযোগী তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। জনবলের অভাবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। স্মর্তব্য, সরকার দেশবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ নামে একটা আইনের অধীনে আনে। এর আওতায় গঠন করা হয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। মনে হচ্ছে আইন প্রণয়ন করেই সরকার আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। কর্তৃপক্ষের প্রায় এক হাজার জনবল থাকার কথা থাকলেও মাত্র আটজন দিয়ে কাজ সারা হচ্ছে। তারাও আবার বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রেষণে এসেছেন। মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবার নিজ নিজ সংস্থায় ফিরে যেতে চাচ্ছেন। ফলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাদের কাজ তাদের শুধু দালানকোঠা সাজিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এ বিষয়ে গবেষণার কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে ভেজালমুক্ত খাদ্য আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া যেন সমার্থক শব্দ। এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই যেখানে ভেজাল নেই। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। চার দশকে আগের চেয়ে মানুষ প্রায় দ্বিগুণ খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা ছিল যে দেশের নিত্য সহচর তা ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। এ সাফল্য সত্ত্বেও বাংলাদেশের খাদ্যের মান নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। খাদ্য নিরাপত্তাকে পাশ কাটিয়ে এখন আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপদ খাদ্য। খাবারে ভেজালের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায়ই খাদ্য চালান ফেরত আসছে নিরাপত্তার অজুহাতে। খাবারে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। ফল দ্রুত পাকাতে দেওয়া হচ্ছে কারবাইড। সবজিতেও ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট দেশের ৫০ শতাংশ খাদ্যপণ্যে ভেজাল পেয়েছে। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে জীবনীশক্তি অর্জন ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য মানুষের জীবনীশক্তি কেড়ে নেয়। সুস্থতার বদলে অসুস্থতা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়ায়। অনিরাপদ খাদ্য বাংলাদেশে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।  জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ বিপদ কাটাতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণেও উদ্যোগী হতে হবে। জনস্বার্থে এটি সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর