সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মৃত্যু চিন্তা মানুষকে দুনিয়াদারির মোহ থেকে দূরে রাখে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

মৃত্যুচিন্তা মানুষকে দুনিয়াদারির মোহ থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকতে সাহায্য করে। পার্থিব জগতের লোভ লালসা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে সবারই আখিরাতের কথা ভাবা উচিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকে আখিরাতের জীবনে দুুনিয়াদারির জীবনের জন্য জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। এ জবাবদিহিতা থেকে কেউই মুক্ত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (কিয়ামতের দিন) আদম সন্তানের পা (স্বস্থান থেকে) একটুও নড়তে পারবে না যতক্ষণ না পাঁচটি বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, ১. সে তার জীবনকালটা কী কাজে ব্যয় করেছে ২. তার যৌবনকাল কী কাজে ব্যয়িত হয়েছে ৩. সে তার ধন-সম্পদ কোন পন্থায় উপার্জন করেছে ও ৪. কোন কাজে ব্যয় করেছে এবং ৫. সে অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী কতটা আমল করেছে (তিরমিযী, আবওয়াবু সিফাতিল কিয়ামাহ)।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমি কবর জিয়ারত করতে তোমাদের নিষেধ করেছিলাম। (এখন) তোমরা তা জিয়ারত কর। কেননা কবর জিয়ারত পার্থিব জগতের প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি করে এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় (ইবনে মাজা, মিশকাত) আমরা দুনিয়াদারির জীবনকে কতই না মূল্যবান বলে ভাবি। অথচ এ জীবন ক্ষণস্থায়ী। যারা এ জীবনের মোহে ভুগবে তাদের পরকালে খেসারত দিতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন : দুনিয়াতে এমনভাবে বসবাস কর যেন তুমি একজন ভিনদেশি (আগন্তুক) অথবা মুসাফির। ইবনে উমর (রা.) বলতেন, তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিত থাকলে ভোরের অপেক্ষায় থেক না এবং ভোর পর্যন্ত জীবিত থাকলে সন্ধ্যার অপেক্ষায় থেক না, সুস্থাবস্থায় অসুস্থতার সময়ের জন্য (নেক কাজের পাথেয়) এবং জীবনকালে মৃত্যুর সময়ের জন্য (পুঁজি) সংগ্রহ করে নাও (বুখারি, মিশকাত, অনুচ্ছেদ : তামান্নাল মাওত)।

প্রতিটি মানুষ যদি সচেতন হয়, বর্তমান অবস্থার সদ্ব্যবহারে যত্নবান হয়, তবে তার পক্ষে অকল্যাণকে এড়ানো সহজতর হয়।

আমর ইবনে মায়মূন আল-আওদী (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বললেন : পাঁচটি অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে অতীব মূল্যবান মনে কর : (১) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবনকে (২) রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে (৩) দরিদ্রতার শিকার হওয়ার পূর্বে সচ্ছলতাকে (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকালকে (তিরমিযী, মিশকাত, কিতাবুর রিকাক)।  আল্লাহ আমাদের সবাইকে আখিরাতের জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার স্বার্থে দুনিয়ার জীবনে শুদ্ধভাবে চলার তাওফিক দান করুন।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর