বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারী নির্যাতন

বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হোক

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়িয়ে চলছে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে দৃষ্টি কাড়া বলে অভিহিত করা হলেও প্রদীপের নিচে বিরাজ করছে ঘোরতর অন্ধকার। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে দেশের নারীদের দুর্বিষহ অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা ভয়াবহ। এতে বলা হয়, শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই পথ চলতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বখাটেদের বেপরোয়া উৎপাতের শিকার হতে হচ্ছে নারীকে। বাসগৃহ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে দুর্বৃত্তদের নির্লজ্জ আচরণে তাদের হতে হচ্ছে বিব্রত। লজ্জায় অনেকে পরিবারের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা লুকিয়ে রাখছে, ক্ষোভে আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে অনেকে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কেউ হচ্ছে ধর্ষণের শিকার। কেউবা দুর্বৃত্তের পৈশাচিক হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে। বখাটের ছুড়ে দেওয়া এসিডে ঝলসে যাচ্ছে কারও দেহ। বিবাহিত নারীদের অনেকে স্বামীর নির্যাতনে সম্পর্ক ছেদ করে আলাদা বসবাস শুরু করেও রেহাই পাচ্ছে না। প্রাক্তন স্বামী প্রতিশোধ নিতে তার ওপর হামলা চালাচ্ছে। বর্বরতার ক্ষেত্রে তারা যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াকেও হার মানাতে চলেছে এ চিত্র যেন তারই প্রমাণ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে বখাটে ও দুর্বৃত্তদের উত্ত্যক্ততা ও যৌন হয়রানির কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ২৯টি প্রাণ ঝরে পড়েছে। চলছে এসিড নিক্ষেপসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধের ঘটনা। একটা জাতি কতটা সভ্য তা নির্ভর করে নারীর প্রতি তাদের আচরণের মাধ্যমে। নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করার ক্ষেত্রে আমাদের কার্পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু নারীর প্রতি আচরণে মনে হয় যে এ গর্বের কোথাও যেন ঘাটতি আছে। নারীর প্রতি সদাচরণ এদেশে অনুসৃত প্রতিটি ধর্মের অনুশাসনের অনুসঙ্গ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সে অনুশাসনের প্রতি আমাদের আনুগত্য কতটুকু তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রতি পদে। অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি জাতিকে জিম্মি করে রেখেছে নারী নির্যাতন বন্ধে সে জিম্মি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে এমনটিই প্রার্থিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর