দশ টাকার চাল নিয়ে যে চালবাজি চলছে, তা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। আশার কথা, এ ব্যাপারে প্রশাসন তাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে দেরিতে হলেও জেগে উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল ও দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। যাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করাও হয়েছে। ১০ টাকায় হতদরিদ্রদের মধ্যে চাল সরবরাহের কর্মসূচিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এতটাই ব্যাপক যে, পশম বাছতে গেলে কম্বল উজাড় হয়ে যাওয়ার কথা। সে বিবেচনায় ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল ও ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতান্তই তুচ্ছ ঘটনা। তারপরও সান্ত্বনা হলো বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে এবং তারা এ প্রকল্পের দুর্নীতি-অনিয়ম রোধের তাগিদ অনুভব করেছেন। সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, এ কর্মসূচি বিতর্কিত হোক তা তারা দেখতে চান না। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। বলেছেন, হতদরিদ্র নয় এমন যে সব ব্যক্তি কার্ড পেয়েছেন তাদের কার্ড বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০ টাকার চাল নিয়ে যে অজস্র অভিযোগ তা পাশ না কাটিয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যে অঙ্গীকারের কথা শোনানো হয়েছে আমরা তা প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখতে চাই। শুধু সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতাসীনদের নিজেদের স্বার্থেই ১০ টাকার চাল নিয়ে যে চালবাজি চলছে তার অবসান ঘটাতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের গড্ডলিকা প্রবাহের এ দেশে ১০ টাকার চাল বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকবে তা কেবল কল্পনাবিলাসীরাই কামনা করতে পারেন। আমরা সে প্রত্যাশায় না ভুগে এতটুকুই আশা করব এ কর্মসূচির সিংহভাগ যাতে হতদরিদ্রের কল্যাণে আসে। এটি নিশ্চিত হলে তা সরকারের শিরস্ত্রাণে সাফল্যের সোনালি পালক হিসেবে বিবেচিত হবে। হতদরিদ্র মানুষের সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে সরকারের পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেতে তা ভূমিকা রাখবে। সরকারের জন্য তা হবে এক বিরাট অর্জন। এ কর্মসূচির স্বচ্ছতা অর্জনে সরকার তাদের সাধ্যের সব চেষ্টাই করবে এমনটিই প্রত্যাশিত। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে সরকারি দলের সৎ নেতা-কর্মীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। চোরার দল এবং চাটার দল বলে কথিতদের প্রতিহত করতে তাদের অগ্রণী ভূমিকার বিকল্প নেই।