মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

কার স্বার্থে বিদেশি কাগজ আমদানি

বাংলাদেশ কাগজশিল্পে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০টি দেশে এ দেশের কাগজ রপ্তানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিকমানের কাগজ উৎপাদনেও সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের কাগজ কলগুলো। কিন্তু নিজ দেশেই উপেক্ষার শিকার হচ্ছে বিকাশমান এ শিল্পটি। দেশে আন্তর্জাতিকমানের কাগজ উৎপাদিত হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস ১ লাখ ৭০ হাজার রিম বিদেশি ‘ডাবল এ’ বা সমমানের কাগজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দেশের কাগজশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে সব ধরনের কাগজের বার্ষিক চাহিদা ৬ থেকে ৮ লাখ টন। দেশের কাগজ কলগুলোর বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ১৪ টন। অর্থাৎ দেশের কাগজশিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকই অব্যবহৃত থাকছে। দেশে উৎপাদিত কাগজ ২৫ থেকে ৩০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশকে দ্রুত শিল্পায়ন তথা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সরকার যেখানে দেশীয় শিল্প সুরক্ষার চিন্তা করছে সেখানে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস কী উদ্দেশ্যে বিদেশি কাগজ আমদানির দরপত্র আহ্বান করছে, তা কাগজশিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যেও প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, এ দেশে যে মেশিন ও উপকরণ বা কাঁচামাল দিয়ে কাগজ উৎপাদন হয়, বিদেশিরাও একইভাবে কাগজ উৎপাদন করে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কাগজের চেয়েও উন্নতমানের কাগজ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনিলিভার, বিভিন্ন দূতাবাস বাংলাদেশে উৎপাদিত কাগজ কিনছে। সেখানে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কাগজ কেনার ক্ষেত্রে কেন উৎসাহ দেখাচ্ছে তা রহস্যজনক। সরকার যেখানে দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীতের জন্য কাজ করছে, সেখানে দেশীয় শিল্পকে বিপাকে ফেলার অপচেষ্টা রহস্যজনক। দেশীয় কাগজশিল্পের উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানটির উচিত বিদেশি কাগজের কথা না  উল্লেখ করে দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। কাগজশিল্পের সঙ্গে পরোক্ষভাবে ১৪ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের এই শিল্পের স্বার্থে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে এমনটিই কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর