বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিনয় মুমিনের অপরিহার্য ভূষণ

হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক

বিনয় মুমিনের অপরিহার্য ভূষণ

বিনয়ী হওয়া একটি মানবিক গুণ। বিশ্বে আজ যে হানাহানি ও অশান্তির দাবানল জ্বলছে তা থামাতে একের প্রতি অন্যকে অসহিষ্ণু হওয়ার বদলে বিনয়ী হতে হবে। অহংকার ও হিংসার পথ থেকে সরে আসতে হবে। চৌদ্দশত বছর আগে আরব জাতি সংঘাতপ্রবণতার জন্য নিন্দিত ছিল। হিংসা-বিদ্বেষ, খুন-রাহাজানি, হত্যা, লুণ্ঠন, জিনা-ব্যভিচার ছিল মজ্জাগত বিষয়। সে বিভীষিকাময় মুহূর্তে মরুর প্রান্তে আবির্ভূত হলেন— বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি, খাতামুন্নাবিয়্যীন সাইয়্যেদুল মুরসালীন মুহাম্মাদে আরাবি (সা.)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে শিক্ষা দিলেন— হে রসুল, আপনি ঘোষণা করে দিন, আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা বিনয়ের সঙ্গে দুনিয়াতে চলাফেরা করে। (সূরা ফুরকান : আয়াত-৬৩)।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন— যে আল্লাহর জন্য বিনয় হয় আল্লাহ তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন। বিনয় এমন একটি গুণ, কোনো ব্যক্তি যদি দুনিয়ার জন্যও বিনয়ী হয়, তাতেও অন্তত এতটুকু ফায়দা আছে যে, দুনিয়ার জীবন তার সুখময় হবে। প্রচলিত প্রবচন হলো ধৈর্যের ফল শান্তি আর বিনয়ের ফল সম্প্রীতি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিনয়ের মূর্ত প্রতীক। যে বুড়ি তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখত, সেই বুড়ি যখন অসুস্থ হলো রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। যে বুড়ি মুহাম্মদ (সা.)-এর ভয়ে মদিনা ছেড়ে মক্কায় যাচ্ছিল, সেই বুড়ির মাথার বোঝা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই বহন করলেন। এ জন্যই তাকে মহামানব বলা হয়। এই বিনয়ের কারণে তিনি মক্কা-মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। বিনয় এমন একটি গুণ যা মানুষের মন জয়ে ভূমিকা রাখে। বিনয়ী মানুষ তার চারপাশের মানুষের মধ্যে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়। এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। একবার বছরখানিক আগে ঘটনাক্রমে ডেমরায় মাদরাসাতুল ইহসানে যাই। যাওয়ার পর আমি একজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই; আপনাদের মাদ্রাসার বড় হুজুর কে? সে আমাকে বলল, ভাই, হুজুর ভিতরে আছেন, আপনি আমার সঙ্গে আসুন। অতঃপর আমি তার সঙ্গে ভিতরে গেলাম। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দাঁড়িয়ে আমার সালাম দেওয়ার আগেই আমাকে সালাম দিলেন। আমি তো অবাক! ইতিপূর্বে তিনি আমাকে কখনো দেখেননি, আমিও উনাকে কোনো দিন দেখিনি এবং চিনিও না। যা হোক, তারপর আমি তার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথাবার্তা বললাম। আর আমি খেয়াল করলাম যে, প্রতিটি কথাই তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলছেন, সঙ্গে সঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই বাণীটি আমার মনে পড়ল— সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে অসহায় ও উপায়হীন না হয়েই বিনয় অবলম্বন করে। যাই হোক, তার বিনয় আমাকে এ পরিমাণ আকৃষ্ট করেছে যে, আজও প্রতিটি ক্ষণে সেই হুজুর মাওলানা লুত্ফর রহমান (দা.বা.)র কথা মনে পড়ে। পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরা সবাই বিনয় অবলম্বন করি। তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম হব। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

     লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর