শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মার্কিন নির্বাচন : জলে কুমির ডাঙায় বাঘ

প্রভাষ আমিন

মার্কিন নির্বাচন : জলে কুমির ডাঙায় বাঘ

এটিএন নিউজের সিইও ফিরোজ ভাই (সরকার ফিরোজ) আমার সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করেন, হিলারি না ট্রাম্প? আমি বলি, কোনোটাই না। দুটাই বদ। তবে ট্রাম্প হলো বদতম। মন্দের ভালো হিলারি। তাই হিলারি পাস করলেই আমি খুশি। তবে তাতে পৃথিবীর কোনো উপকার হবে না। আর ট্রাম্প যদি কোনো কারণে জিতে যান, তাহলে শুধু আমেরিকা নয়, গোটা পৃথিবীই এক অন্ধকার সময়ের কবলে পড়বে।  তবে এ সময়ে বেঁচে থেকে আমরা দুটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দেখেছি আমাদের সময়েই। সম্ভবত আমরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্টও দেখতে যাচ্ছি। ইতিহাসের এটুকু সাক্ষী হওয়া ছাড়া এবারের নির্বাচন থেকে বিশ্বের ইতিবাচক কিছু পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে বিশ্বের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে হয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখন বিশ্বের অঘোষিত মোড়ল। আসলে ‘অঘোষিত’ নয়, যুক্তরাষ্ট্র যা করে সব বলে কয়েই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তাতে মার্কিনিদের স্বার্থ যতটা, ততটা বিশ্ববাসীর। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এককেন্দ্রিক বিশ্বের কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিন নানা সময় হুঙ্কার দেন, চীনও অর্থনীতি দিয়ে চাপে রাখে বটে; তবে তাতে ভারসাম্য আসে না। এখনো বিশ্বের রাজধানী হোয়াইট হাউস। এমনকি জাতিসংঘও এখানে পুতুলমাত্র। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন মানেই বিশ্বজুড়ে আগ্রহ। এমনকি কখনো কখনো তা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। এই যেমন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে অনেক মাতামাতি। কিন্তু আমাদের বন্ধু-বান্ধব যারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গেছেন, তারা গিয়ে খুব অবাক। রাস্তাঘাটে নির্বাচনের কোনো আমেজ নেই। থাকার অবশ্য কথাও নয়। সেখানে তো আর পোস্টার, দেয়াল লিখন বা ব্যানার-তোরণ বানানোর ব্যাপার নেই। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের যত আগ্রহ, বেশির ভাগ মার্কিনির ততটা নেই। তারা নিজেদের নিশ্চিন্তির জীবন নিশ্চিত হলেই সন্তুষ্ট। বিশ্বরাজনীতি তো অনেক পরের ব্যাপার, হিলারি-ট্রাম্প-ওবামা-মিশেল-বুশ নিয়ে সাধারণ মার্কিনিদের আগ্রহ অনেক কম। তারা ইরাক, সিরিয়া, বাংলাদেশ চেনে না।

অভিজ্ঞতাকে যদি মাপকাঠি ধরেন, তবে হিলারি অনেক এগিয়ে। ফার্স্টলেডি হিসেবে অনেক দিন হোয়াইট হাউসে কাটিয়েছেন। প্রেসিডেন্সি দেখেছেন কাছ থেকে। বারাক ওবামার সঙ্গে মনোনয়নের লড়াই করেছেন। পরে আবার ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে হিলারির অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাই তার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং আইএসের উত্থানের জন্য তাকে দায়ী করা হয়। লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলাকেও বিবেচনা করা হয় তার ব্যর্থতা হিসেবে। হিলারির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় ই-মেইলের অপব্যবহার। গুরুতর অভিযোগ সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প বলেই পার পেয়ে যাচ্ছেন হিলারি।

কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী যখন ট্রাম্প, তখন হিলারি যেন স্বর্গের দূত। তবে মানুষ কখনো ফেরেশতা হয় না, দোষে-গুণেই মানুষ। কিন্তু একজন মানুষের যতগুলো বদগুণ থাকতে পারে, তার সবগুলোই আছে ট্রাম্পের মধ্যে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু ট্রাম্প ইসলামবিদ্বেষী, বর্ণবিদ্বেষী, অভিবাসীবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী, বিকৃত মানসিকতার একজন। তবে নারীদের নিছক ভোগ্যপণ্য মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমন মানুষ ট্রাম্প একা নন। বরং সংখ্যাটা অনেক বেশি। কিন্তু নিজেরা দুশ্চরিত্র হলেও তারা আশা করে তাদের প্রেসিডেন্ট হবেন দুধে ধোয়া তুলসীপাতা। বরং ট্রাম্পকে আপনি সৎ বলতে পারেন, কারণ তিনি তার যৌনজীবন এবং নারীদের ব্যাপারে তার কুিসত দৃষ্টিভঙ্গি খোলামেলা বলেছেন। তবে নিজ কন্যার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করে, মেয়ে না হলে তার সঙ্গে ডেট করার আকাঙ্ক্ষার কথা বলে ট্রাম্প শ্লীলতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি আসলে পারভার্টেট। এমন একজন মানুষ যুক্তরাষ্ট্র কেন কোনো দেশেরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের একমাত্র যোগ্যতা তিনি একজন ‘সফল’ ব্যবসায়ী। কিন্তু তার ব্যবসা হলো ক্যাসিনো আর রিয়েল এস্টেট। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি নিজেকে সফল দাবি করলেও আসলে তা নয়। তার ক্যাসিনো ব্যবসায় ধস নেমেছে। আর হাউজিং ব্যবসা তো মার্কিন অর্থনীতিকেই ডোবাতে বসেছিল। ট্রাম্প উদ্যোক্তা নন, ফাটকাবাজ। নিজে তো বারবার দেউলিয়া হয়েছেনই, কাজ করিয়ে টাকা না দিয়ে পথে বসিয়েছেন আরও অনেককে। হিলারি তার আয়কর নথি প্রকাশ করলেও ট্রাম্প রাজি হননি। সবার ধারণা আয়কর নথি প্রকাশ করলেই তার সাফল্যের ফাঁকা বেলুন চুপসে যাবে। এখন জানা যাচ্ছে, শুধু তাই নয়, ট্রাম্প বছরের পর বছর আয়কর দেননি।

এরকম একজন ব্যর্থ ও বিপজ্জনক ব্যবসায়ী এবং নিম্ন নৈতিক চরিত্রের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য কিনা, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। এমনকি রিপাবলিকান দলেই শেষ মুহূর্তেও তার মনোনয়ন বদল করা সম্ভব কিনা সেই অসম্ভব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

আলোচনা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন প্রায় উন্মাদ লোক মনোনয়ন যুদ্ধ পেরিয়ে এত দূর এলেন কীভাবে? তবে কি টাকায় কথা বলার নীতি সব দেশেই প্রযোজ্য। এখন যত দিন যাচ্ছে, ততই একা হয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সাধারণ ভোটাররা তো পরে, রিপাবলিকান নেতারাই রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ট্রাম্পের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। সুখের খবর হলো, সব জরিপ, দুই দফা বিতর্ক সব কিছুতেই হিলারি এগিয়ে। ট্রাম্পের জয়ের আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। ট্রাম্পের ডলারের ঝনঝনানিতে বুঁদ হয়ে যারা ট্রাম্পকে নির্বাচনের ট্রেনে তুলে দিলেন, তারা আসলে রিপাবলিকান দলের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করেছে। কারণ পরপর তিন মেয়াদ হোয়াইট হাউসের বাইরে থাকা প্রায় নিশ্চিত এখন।

ট্রাম্পের স্লোগান হলো, ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। স্লোগানে চমক আছে। তার মানে আমেরিকা গ্রেট নয়, তাকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে আবার গ্রেট বানাতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। আমেরিকা এখন বিশ্বের জন্য যতটা বিপজ্জনক, ট্রাম্প জিতলে তার চেয়ে শতগুণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ট্রাম্পকে কেউ বলছেন হিটলার, কেউ বলছেন মুসোলিনি। তিনি কোনোভাবে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলে আমেরিকা কতটা অতলে যাবে, বিশ্ব কতটা বিপাকে পড়বে; তা নিয়েই শঙ্কিত সবাই। সবচেয়ে চালু জোকস হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ভিক্ষুকরা গলায় কার্ড ঝুলিয়ে বসে থাকে। তাতে লেখা থাকে— ‘আমাকে এক ডলার দাও, নইলে আমি ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে দেব।’

আবারও সামনে আসে সেই প্রশ্নটি, ট্রাম্প এতই যদি খারাপ হবেন, তাহলে এত দূর এলেন কীভাবে? জরিপে পিছিয়ে আছেন বটে, তবে এখনো তো মার্কিন ভোটারদের একটা বড় অংশ তাকে সমর্থন করছে। পাস হয়তো করবেন না, কিন্তু অনেক ভোট পাবেন, এটা নিশ্চিত। তাহলে কারা তাকে ভোট দেবেন? যারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন তারাও তো মানুষ ভালো হওয়ার কথা নয়। আসলে আমরা ট্রাম্পকে বিবেচনা করছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কিন্তু মার্কিনিরা তো দেখছেন তাদের অবস্থান থেকে। সেখানেই ট্রাম্পের সাফল্যের চাবিকাঠি। আমেরিকানরা নিজেদের যতই সভ্য, মানবিক দাবি করুক; তাদের সবার অন্তরে লুকিয়ে আছে একেকজন ট্রাম্প। তারা নিজেদেরই শ্রেষ্ঠ মনে করে। মুসলমানরা, কৃষ্ণাঙ্গরা, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে; এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, এমন মার্কিনির সংখ্যা কিন্তু কম নয়। ট্রাম্প শুধু সেই আমেরিকানদের অন্তরে ভদ্রতার আবরণে লুকিয়ে থাকা বর্ণবাদী চরিত্রটি উসকে দিয়েছেন। ট্রাম্প যেমন বলছেন, তিনি নির্বাচিত হলে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেন না। অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। সত্যি সত্যি যদি তেমনটা করেন, তাহলে কী হবে? এটা ঠিক নাইন-ইলেভেনের পর থেকে ইসলাম খুব স্পর্শকাতর ইস্যু। ইসলামের নাম দিয়ে অল্প কিছু অমানুষ সন্ত্রাসী তত্পরতা চালালেও যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে মুসলমানদের বিমানবন্দরে বা রাস্তাঘাটে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে উচ্চ মূল্যবোধের কথা বলে, সেখানে তো মানুষকে ধর্ম বা বর্ণ দিয়ে বিচার করার কথা না। আর ‘ল্যান্ড অব ইমিগ্র্যান্টস’ যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প কোন যুক্তিতে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবেন? ইসলামের মতো অভিবাসনও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি খুব জনপ্রিয় ও স্পর্শকাতর ইস্যু। সবাই এ দুটি ইস্যু নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। তারা যে অভিবাসীদের ঘৃণা করেন, সে প্রমাণ আমি নিজেই দেখে এসেছি। বছর পাঁচেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে সে দেশ সফরে গিয়েছিলাম। আমাদের সেই সফরের মূল থিম ছিল ‘ইলিগ্ল্যাল ইমিগ্যান্টস’। দলে দলে অবৈধ অভিবাসীরা এসে তাদের চাকরি দখল করে নিচ্ছে, তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করছে, তাদের সুন্দর দেশ ধ্বংস করে ফেলছে— অভিযোগের কোনো শেষ নেই আমেরিকানদের। তাদের বেশি ক্ষোভ মেক্সিকানদের ওপর। অ্যারিজোনার কনক্রাইট স্কুল অব জার্নালিজমে এক অধ্যাপক অবৈধ অভিবাসন নিয়ে অনেক লম্বা বক্তৃতা দিলেন। পরে আমি তাকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম, ধর, কাল সকালে সব অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে গেল, তখন কী হবে? অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে সেই অধ্যাপক স্বীকার করলেন, সব অবৈধ অভিবাসী একদিনে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র কলাপ্স করবে। কারণ তারা যে কাজগুলো করে, সেই কাজগুলো করার মতো আমেরিকান বেশি নেই। মুচি, মেথর, ক্লিনার— সব মেক্সিকান। আরেক অধ্যাপক জানালেন মজার তথ্য। মেক্সিকান অভিবাসীদের স্রোত ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বিশাল ওয়াল তুলেছে। সেই ওয়াল মাটির উপরে যতটা, নিচেও ততটা; যাতে কেউ মাটি খুঁড়েও ঢুকতে না পারে। মজার তথ্যটা হলো, এই ওয়াল নির্মাণকারীদের অধিকাংশই অবৈধ অভিবাসী! কারণ অবৈধ অভিবাসীদের শ্রম কেনা যায় কম ডলারে। মার্কিনিরা কতটা মানবিক তার একটা গল্প শুনুন। অ্যারিজোনায় যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের একটা বড় অংশজুড়ে মরুভূমি। সাধারণ সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত ওয়াল গড়লেও মরুভূমি এলাকায় সীমান্ত ফাঁকা, অরক্ষিত; কোনো ওয়াল নেই। কেন জানেন? কারণ শত মাইল বিস্তৃত সেই মরুভূমি পেরিয়ে কারও পক্ষেই স্বপ্নের যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবুও অনেকে সেই অসম্ভবে পা রাখেন। তাদের অধিকাংশই সেই মরুভূমিতে ধুঁকে ধুঁকে মরেন। খুব ভাগ্যবান দুয়েকজন হয়তো বাঁচে। এটা যেন আমেরিকানদের রিয়েলিটি শো।

যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়, ল্যান্ড অব ইমিগ্যান্টস। বৈচিত্র্যই এর বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ট্রাম্পের মতো ‘ট্রু আমেরিকান’রা মনে করেন অন্যরা এসে তাদের দেশটাকে নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু অল্প কিছু আদিবাসী ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশই তো অভিবাসী; কেউ আগে, কেউ পরে। ব্যাপারটা এমন সবাই ওখানে যেতে চায়, কিন্তু গিয়েই দরজা বন্ধ করে দেয়, যাতে আর কেউ সেখানে ঢুকতে না পারে।

ট্রাম্পকে সমর্থন করা যেতে পারে, একটা বিবেচনায়। ট্রাম্প জিতলে আমেরিকানদের আসল কুিসত চেহারাটা বিশ্ব আরও ভালো করে দেখতে পেত। এমনিতেই আমেরিকা সারা বিশ্বে ছড়ি ঘোরায়। তবে এখনো তাতে কিছুটা সভ্যতা-ভব্যতার মিশেল থাকে। কিন্তু ট্রাম্প এলে সেই মোড়লীপনায় মিশে যাবে বর্ণবাদ আর ঘৃণাও। এই যে ব্রেক্সিটের নামে যুক্তরাজ্যে স্বার্থপরতার জয় হলো, তার পেছনেও অনেকে ট্রাম্পের উত্থানকে দায়ী করেন।

বাংলাদেশে অবশ্য হিলারি নিয়ে দুই মত আছে। এমনিতে হিলারি জিতলে বাংলাদেশের জন্য ভালো। তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ড. ইউনূসের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ভাবনা ইতিবাচকই মনে হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্কই তার সম্পর্কে দ্বিধায় ফেলেছে কাউকে কাউকে। বিশেষ করে ড. ইউনূসের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের বিদ্বেষমূলক আচরণ, প্রভাব ফেলতে পারে হিলারি সম্পর্কে তাদের মনোভাবেও। কিন্তু ট্রাম্প এতটাই দানব যে, হিলারিকে মানতে আওয়ামী লীগেরও আপত্তি না থাকারই কথা।

৮ নভেম্বরের নির্বাচনে কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে গোটা বিশ্বের মানুষ দম আটকে অপেক্ষা করছে ট্রাম্পকে ঠেকাতে; বিশ্বের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, সভ্যতার স্বার্থে। মার্কিন রাজনীতিতে যে সহনশীলতা-ভদ্রতার আবরণ থাকে, এবার যেন তা খুলে যাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রাম্প আর হিলারি একে অপরকে আক্রমণ করছেন, অভূতপূর্ব অশ্লীলতায়। দ্বিতীয় বিতর্কে দুই প্রার্থীই একটা সত্য অভিযোগ করেছেন। দুজনই বলছেন, প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নয়। তৃতীয় বিতর্কে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচনের ফলাফল তিনি নাও মানতে পারেন। হায় হায়, হেরে গেলে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের এই বুদ্ধি ট্রাম্প পেলেন কোথায়? তিনি তো কখনো বাংলাদেশ আসেননি। লেখাটা শেষ করছি আমার পাশের টেবিলের সহকর্মী কাজী তাপসের একটা মন্তব্য দিয়ে। তাপস বলছেন, একটা হলো শয়তান আরেকটা মোনাফেক। এখন আপনাকে বেছে নিতে হবে এদের মধ্য থেকেই। মন্দের ভালো যে বেছে নিতে হবে তাকেই।  মার্কিন ভোটারদের বিপদটা কম নয়।

     লেখক : সাংবাদিক।

     [email protected]

সর্বশেষ খবর