সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মালেক উকিলকে যেমন দেখেছি

অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ

মালেক উকিলকে যেমন দেখেছি

ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের সংগ্রাম, ’৭১ এ স্বাধীনতার যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের রাজনীতির উত্তাল ধারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে বিশাল রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছিল, সে বলয়ের কেন্দ্রিকতায় বঙ্গবন্ধু তার যে কতিপয় সহকর্মীকে নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য কমান্ড স্ট্রাকচার তৈরি করেছিলেন মরহুম আবদুল মালেক উকিল তাদেরই একজন হিসেবে দেশের অন্যতম জাতীয় নেতার মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন।

নোয়াখালী সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে ১৯২৪ খিস্টাব্দের ১ অক্টোবর তার জন্ম। তিনি ইন্তেকাল করেন ১৯৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর। তার পিতা ধর্মীয় শিক্ষায় আলেম ছিলেন। পিতার সিদ্ধান্তেই তিনি আহাম্মদিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে হাইস্কুল মানের শিক্ষালাভ করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। হাই মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অঙ্কে লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। মেধাবীরা স্বভাবতই সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। মালেক উকিল মেধাবী ছিলেন। তাই তিনি স্বভাবতই অতি সংবেদনশীল ছিলেন। সমকালীন রাজনীতির উন্মাতাল ঘটনাপ্রবাহ তার সংবেনদশীল মনে এক ধরনের চাঞ্চল্য ও প্রজ্বলন সৃষ্টি করেছিল।

এ সময়টি ছিল ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তিমকাল। ভারতীয় কংগ্রেস আন্দোলন করছিল ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসকের শৃঙ্খল ভেঙে ভারতকে স্বাধীন করতে। ভারতীয় মুসলিম লীগ ও ব্রিটিশ বিতাড়নের আন্দোলন করেছিল ঠিক। কিন্তু তদানীন্তন ভারতের হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না পেয়ে মুসলিম লীগ ভারতকে বিভক্ত করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেও আন্দোলন চালাচ্ছিল। একদিকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর দুর্দম আন্দোলন, অন্যদিকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম— এ জটিল ও ত্রিশঙ্কুু অবস্থায় ভারতের বৃহত্তম জনবহুল প্রদেশ অবিভক্ত বাংলাদেশের রাজনীতির উথাল-পাতাল ঢেউয়ে গ্রাম-গ্রামান্তর পর্যন্ত উদ্বেলিত, আলোড়িত ও আন্দোলিত হচ্ছিল।

এ সময়ে স্কুলের ছাত্র আবদুল মালেক উকিলের তরুণ মন ও সমকালীন রাজনৈতিক দুরন্ত ঘটনা প্রবাহে আন্দোলিত ও স্পন্দিত হয়ে ওঠে। মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে তার সংবেদনশীল মনে এক অনির্দিষ্ট স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে যাচ্ছিল। সে স্বপ্ন অনির্দিষ্ট ও অস্পষ্ট হলেও তার সংবেদনশীল মানসিকতার কারণে তিনি তা এড়াতে পারেননি।

ভালো ছাত্র, লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি পাবে— এটাই ছিল তার জন্য সহজ সরল ও নির্ধারিত পথ। কিন্তু স্বভাব নিহিত সংবেদনবোধ ও আবেগসম্পন্ন তরুণ হিসেবে মাটি ও মানুষের ডাকে ‘ভালো ছাত্র হিসেবে ভালো চাকরির নির্ধারিত পথ’ এড়িয়ে তিনি স্কুলজীবনেই তার সমকালীন রাজনীতির বিপজ্জনক ঘূর্ণাবর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মেধাবী ছাত্রের খ্যাতিবশত নোয়াখালী শহরে স্কুল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভে তিনি সক্ষম হন। কারণ, তখনকার রাজনীতিতে বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতিতে মেধার দারুণ কদর ছিল। সব ছাত্রেরই রাজনীতি করার সমান সুযোগ ছিল। কিন্তু নেতৃত্ব করবে যে ছাত্রটি সে ছাত্রটিকে অবশ্যই মেধাবী হতে হতো। ব্যাপারটা অনেকাংশে এমন ছিল যে, ছাত্র নেতৃত্ব যেন তখন মেধাবীদের সংরক্ষিত বিষয়ই ছিল।

সে যাই হোক কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা গমন করেন। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তখনো চলমান ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এবং ভারত বিভক্তির প্রশ্নে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দেশে এক চরম অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থাও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তাই কলকাতায় তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পেলেন না ঠিকই, কিন্তু এখানে তিনি ছাত্ররাজনীতির অন্যতম তুখোড় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে আসেন এবং বাংলার মাটি ও মানুষের স্বার্থ ও স্বাতন্ত্র্যবাদী যে একটা রাজনৈতিক ধারা অবিভক্ত বাংলাদেশে আগে থেকেই চলে আসছিল, আবদুল মালেক উকিল এ সময়ে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত বলতে হচ্ছে, অবিভক্ত বাংলাদেশ ভারতের কেবল বৃহত্তম জনবহুল প্রদেশই ছিল না, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনেরও প্রাণকেন্দ্র ছিল। প্রদেশ হিসেবে অবিভক্ত বাংলাদেশের প্রভাব প্রতিপত্তির বিষয়টিকে কী কংগ্রেস, কী মুসলিম লীগ সব দলের অবাঙালি নেতাগণ সংশয়, সন্দেহ ও বৈরিতার চোখে দেখতেন। রাজনীতিতে বাংলার মানুষের সাম্প্রদায়িক ঐক্যের সাধক পুরুষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রবক্তা নেতাজী সুভাস বসু প্রমুখ বাঙালি হিন্দু নেতা কংগ্রেসের অবাঙালি নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে যেভাবে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, অনেকটা সেভাবেই বাংলার সাধারণ মানুষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতির অমর প্রবক্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো অনেক বাঙালি মুসলিম নেতাও মুসলিম লীগের অবাঙালি নেতাদের চক্রান্তে দল থেকে বহিষ্কৃত ও পরিত্যক্ত হয়েছিলেন। ফলে রাজনীতি সচেতন অনেক বাঙালির মনে যে সংশয় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তাতে কংগ্রেসে যেমন মুসলিম লীগেও তেমন বাঙালিদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যমুখী একটা প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা তৈরি হয়। নিখিলবঙ্গ মুসলিম লীগে রাজনীতির এ ধারাটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও রাজনীতির তাত্ত্বিক নেতা আবুল হাসেমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল। ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে ওই ধারাটির নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একান্ত অনুসারী তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিব।

কলকাতায় এসে আবদুল মালেক উকিল সেই যে শেখ মুজিবের সাহচর্যে এলেন তারই অবকাশে বাংলাদেশের উপরোক্ত ধারার প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ ও স্বাতন্ত্র্যের বিষয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির এ অভিন্নতায় শেখ মুজিবের সঙ্গে সেদিনই তার এক আদর্শিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। সে সম্পর্ক তিনি শত উত্থান-পতনের মুখেও আমৃত্যু লালন ও ধারণ করেছেন।

সে যাই হোক আবদুল মালেক উকিল ১৯৪৭ সালে তদানীন্তন যশোর জেলার মাগুরা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্রনেতার সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন এবং ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কারারুদ্ধ জীবনযাপন করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার দাবিতে ছাত্রদের মিছিলে গুলি হয়েছিল, তাতে যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই শহীদদের স্মরণে যে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ বাঙালি জাতি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে এবং অনাগতকালও যা করে যাবে সে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ পরের দিন ভাষা আন্দোলনের অনেক সহযোদ্ধার সঙ্গে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। রাজনৈতিক কারণে তার কারাবাস ও কারাভোগের শুমারি এখানেই শেষ করার জন্য উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, মরহুম জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি সর্বশেষ গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন।

১৯৫২ সালে তিনি নোয়াখালী বারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি হাইকোর্ট বারের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫-৬৬ খ্রিস্টাব্দে মালেক উকিল পূর্ব পাকিস্তান এবং পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সদস্যও নির্বাচিত হন।

মরহুম মুজিবুর রহমান মোক্তারের মৃত্যুতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যের নোয়াখালী সদরের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ১৯৫৬ সালে তিনি এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন এবং সেবার আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতাও নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালেও তিনি তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন এবং ওই সময়ই পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে সংযুক্ত বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে আবদুল মালেক উকিলের পার্লামেন্টারি রাজনীতি শুরু হয়েছিল। সেই যে শুরু হলো সামরিক শাসনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার মতো দুঃসময়ের নিন্দিত বিরতি ছাড়া পার্লামেন্টারি রাজনীতির আলোকিত উদ্যানে তিনি পরাজিত হননি, ছন্দ হারায়নি এবং কখনো পথ হারাননি।

কী সংসদ সদস্য হিসেবে, কী মন্ত্রী হিসেবে, কী স্পিকার হিসেবে তিনি যখন পার্লামেন্টে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তার ধারা বিবরণী পাঠ করলে বলতে কারোরই দ্বিধা হয় না যে, আবদুল মালেক উকিল এক বিদগ্ধ গণতন্ত্রী ও প্রাজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন।

আবদুল মালেক উকিল ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৬৩ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ৯ সদস্যের আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশালের) ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং একই সালে তিনি গণঐক্য জোট নামে গঠিত সামরিক শাসনবিরোধী মোর্চার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১৯৭৪ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৮৬-তে তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং সেবার শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ বিরোধীদলীয় নেতা এবং তিনি উপনেতা।

বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনেও আবদুল মালেক উকিলের একটি ভূমিকা এবং পদচারণা ছিল। তিনি পাকিস্তান আমলে বিরোধী দলীয় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠন এবং স্বাধীনতার পর মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শান্তি সম্মেলনসহ নানা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে বহু দেশ সফর করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি জার্মানি, ব্রিটেনসহ নানা দেশের বিভিন্ন শহরে সাংগঠনিক সফর করেন।

আবদুল মালেক উকিলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অসংখ্য কর্মকাণ্ডের কিয়দংশ উপরে উল্লেখ করেছি। এসব তথ্যাবলি সামনে রেখে বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হয়, তার রাজনৈতিক আদর্শের আনুগত্যে তিনি সদা অবিচল ও অনড় ছিলেন। বার বার সুযোগ পেয়েও তিনি ক্ষমতার লোভে দল ত্যাগ করেননি, মন্ত্রী হননি।

বঙ্গবন্ধু তার যেসব রাজনৈতিক সহচরদের নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার চালিয়েছিলেন, তাদের অনেকের মতো আবদুল মালেক উকিলও ধন-সম্পদের জন্য কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তাই আবদুল মালেক উকিল ধনের বিচারে ধনী ছিলেন না। কিন্তু নীতির বিচারে ছিলেন নেতা এবং অনিন্দ্য দেশপ্রেম, অনন্য সততা ও অকুণ্ঠ আত্মত্যাগের মতো বহু বিরল গুণের বিচারে ছিলেন গুণী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ও পরের সংক্ষুব্ধ রাজনীতির ভয়ঙ্কর উত্থান-পতনের অনিশ্চিত ধারায় তৃণমূল থেকে এসে তিনি দেশের বৃহত্তম জনসমর্থিত ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পরবর্তী স্বৈররাজনীতির বিপজ্জনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পরিচালনার কাজটি যেভাবে করে গেছেন তাতে তার বিরল সাংগঠনিক শক্তি, অসাধারণ মেধা, গভীর প্রজ্ঞা এবং ব্যাপক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা নিঃসন্দেহে দেশের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যায়ন ও সংরক্ষণযোগ্য এক মূল্যবান উপাদান হয়ে থাকবে।

লেখক : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদের প্রাক্তন সদস্য

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর