সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

মানুষ শকুনদের ঠেকাতে হবে

অজ্ঞান পার্টি নামের মানুষ শকুনদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই থামছে না। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে ঠগি নামের একশ্রেণির প্রতারক পথিকদের সর্বস্ব লুটই শুধু নয়, তাদের জীবনও কেড়ে নিত। সাম্প্রতিককালে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে অজ্ঞান পার্টি নামের জঘন্য তস্কররা। তারা বাস, লঞ্চ, ট্রেনযাত্রীদের অজ্ঞান করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। অজ্ঞান করার ওষুধে অনেকে জীবন হারাচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা হকার সেজে যাত্রীবাহী বাসে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করে। টার্গেট করা যাত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে তার সর্বস্ব লুটে নেয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সহযোগী দৈনিকে বলা হয়েছে, অজ্ঞান পার্টির একেকটি দলে কমপক্ষে তিনজন এবং সর্বোচ্চ ১০ জন থাকে। তারা এমনভাবে কাজ করে  যে সন্দেহ হলেও টার্গেট ব্যক্তি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগই পায় না। পুলিশের তথ্যমতে, রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির ৪০টি গ্রুপে অন্তত ৪০০ সদস্য আছে। তাদের অনেকে আগে গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পেয়ে অপকর্ম করছে। চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির সদস্যরা কয়েকটি চেতনানাশক ওষুধ ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছে। আমদানি নিষিদ্ধ এটিভেন ট্যাবলেট ব্যবহার করে যাত্রীদের ঘায়েল করা হয়। এ ছাড়া তরল ওষুধ এপিট্রা, ঘুমের ট্যাবলেট মিডাজোলাম, নাইট্রাজিপাম, মাইলাম, ডর্মিকাম ও মিলান ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা। ক্লোরোফর্ম জাতীয় ওষুধ নাকে ধরেও পরিবহনের যাত্রীদের অচেতন করা হচ্ছে। আর মলম পার্টির সদস্যরা বিষাক্ত মলম ও মরিচের গুঁড়া চোখে মেখে বা ছিটিয়ে দেয়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই রাজধানীর মিটফোর্ড, শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শাহবাগ, গুলিস্তান, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায়  চেতনানাশক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। কোনো তদারকি না থাকায় এ ওষুধ যে কেউ চাইলেই কিনতে পারছে। অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্যে প্রায়ই সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। আইনের ফাঁকফোকড়ে এ জঘন্য অপরাধীরা গ্রেফতার হওয়ার পর নির্বিবাদে জামিন পেয়ে একই পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তারা। অজ্ঞান পার্টি নামের নব্য ঠগি মানুষ শকুনদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেমন তত্পর হতে হবে তেমনি তারা আইনের যে ফাঁকফোকড়ে জামিনে ছাড়া পাচ্ছে তা বন্ধেও উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর