মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্বার তারুণ্য, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

কেয়া চৌধুরী

দুর্বার তারুণ্য, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

আমরা শৈশবে অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখি। অনেক বিখ্যাত একজন হওয়ার তীব্র বাসনা লালন করি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্বপ্নের ডালপালা মেলতে থাকে। কিন্তু সবার সেই লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় না। হয়তো সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য যতটুকু শ্রম বা সাধনা দরকার তা করি না। তবে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে, তাদের পক্ষেই সম্ভব নিজের উদ্যোগে কিছু একটা করা। ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এবারের যুব দিবস, ২০১৬-এর প্রতিপাদ্য হলো— ‘আত্মকর্মী যুবশক্তি, টেকসই উন্নয়নের মূলভিত্তি’। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ১০ লাখ। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, এ হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে প্রায় ৮০-৯০ লাখ লোক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রবাসে থাকা এই বিপুলসংখ্যক লোকও কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখে চলেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বাংলাদেশের লোকসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী নাগরিক মোট লোকসংখ্যার ২৩ শতাংশ। ১০ থেকে ২৪ বছর ধরলে ৩১ শতাংশ। যে কোনো দেশের জন্যই এই বয়সের নাগরিকরা হচ্ছে বড় সম্পদ। গত ২১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছিল— ‘কিশোরীদের জন্য বিনিয়োগ, আগামী প্রজন্মের সুরক্ষা তাই যথার্থ’। এখানে শুধু কিশোরীদের জন্য বলা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার একইভাবে কিশোর ও তরুণদের প্রতিও মনোযোগী। আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, সুস্থ-সবলভাবে তারা বেড়ে উঠলে, যথার্থ শিক্ষা পেলে বিশ্বসমাজে বাংলাদেশকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বাংলার যুবসমাজ যথার্থ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। অর্থনীতি ও জনসংখ্যা বয়স বিন্যাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান কালপর্ব হচ্ছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের, যাদের শ্রমে মেধায় গড়ে উঠতে পারে উন্নত সমৃদ্ধ সমাজ। এ সময়ের নিজেদেরই পরবর্তী সময়ে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেমন বাংলাদেশ পাবে, তাও বহুলাংশে নির্ভর করছে বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরী-তরুণদের ওপর। তাদের পেছনে বিনিয়োগ প্রকৃত মানবিক বিনিয়োগ, লাভজনক বিনিয়োগ। এতে বিন্দুমাত্র অবহেলার সুযোগ নেই। প্রখর দীপ্ত যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধের সুমহান আদর্শে উদ্দীপ্ত করে তোলা চাই। ধর্মান্ধতা কূপমণ্ডূকতার অশুভ ছায়া তাদের ওপরে যেন বিন্দুমাত্র না পড়ে তা নিশ্চিত করা চাই। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। তারা উপযুক্ত শিক্ষা না পেলে, ন্যায়নীতি ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত না হলে দেশকে কীভাবে সবকিছু উজাড় করে দেবে? নতুন প্রজন্মকে যথাযোগ্যভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব কেবল রাষ্ট্রের নয়, সব পরিবারকে এজন্য এগিয়ে আসতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিল। ’৭১ সালে তারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। এ মহান সংগ্রামে লাখ লাখ তরুণ জীবন উৎসর্গ করেছিল। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মও ইতিহাস-নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে থাকবে কেন? জাতীয় যুবনীতি অনুসারে বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে যুুবক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ বয়সসীমার জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা আনুমানিক ৫ কোটি। জনসংখ্যার প্রতিশ্রুতিশীল, উৎপাদনমুখী ও কর্মপ্রত্যাশী এই যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে, শেখ হাসিনার সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদফতর নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশের জনসংখ্যার সম্ভাবনাময় এ অংশকে জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে তাদের মাঝে গঠনমূলক মানসিকতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার অনুকূল ক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশ্যে যুব উন্নয়ন অধিদফতর শুরু থেকেই বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল ইতিমধ্যে জাতীয় কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে।

দুর্বার গতিতে তরুণরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের যুগোপযোগী দিকনির্দেশনার আলোকে চলমান নিয়মিত ৭২টি প্রশিক্ষণ ট্রেডের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ট্রেড প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে যুবকদের দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে যুব উন্নয়ন অধিদফতর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫১ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক ও যুব মহিলা তাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরাসরি আবদান রাখছে; যা গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মকর্মী যুবকরা লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করে। তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক যুবকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭৮ জন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার কর্মসূচি।

তরুণ বয়সে অনেকেই নিজ সমাজের জন্য, দেশের জন্য গঠনমূলক কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। আবার স্বপ্ন পূরণের পর অনেক তরুণ পথও হারান। ‘আমিত্ব’-এর  মধ্যে পথহারা তরুণরা স্বপ্নকে আটকে রাখেন। নিজের পদমর্যাদা, প্রতিপত্তি বৃদ্ধির সঙ্গে তারা কেবল নিজের স্বার্থ ও নিজের সম্পদ বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়েন। নিজের সুখ-শান্তির প্রাপ্তিতে বিভোর হয়ে ওঠেন। কিন্তু তারা ভুলে যান, একই সমাজে একই রাষ্ট্রের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সত্যিই পিছিয়ে পড়া। সেই জনপদের কাছে হয়তো সঠিক নেতৃত্বের অভাবে, সরকারেরর সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ভোগে, পদমর্যাদায় আর ক্ষমতা আচ্ছাদনে আমাদের তরুণসমাজ যেন সত্যিকারভাবে সাহায্যপ্রার্থীদের ভুলে না যায়।

লেখক : সংসদ সদস্য, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর