বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুন

বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যে দেশটি ছিল দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গার দেশ সে দেশ খাদ্যে এখন আর পরনির্ভর নয়। ব্রিটিশ আমলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে অবিভক্ত বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়। স্বাধীনতার পরও দুর্ভিক্ষের ধকল সইতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সেই দেশ ইতিমধ্যে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ বছর রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অন্তত এক শতাংশ বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। শুধু ধান নয়, গম, ভুট্টা, আলুসহ প্রায় প্রতিটি খাদ্যশস্য উৎপাদনেই রেকর্ড করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফল ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হার বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছে। কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও সময়োপযোগী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বিশ্বে পথিকৃৎ বলে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে। চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কৃষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক নানা পদক্ষেপের কারণেই খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। স্মর্তব্য, ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্য উৎপাদন ছিল এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল না। গত ৪৩ বছরে একদিকে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, আর আবাদি জমি কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ দেশে এখন চাল উৎপাদন হচ্ছে তিন গুণ বেশি; অন্যান্য সব খাদ্য মিলিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ এখন পাঁচ কোটি মেট্রিক টনের বেশি। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের এ সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব এ দেশের কৃষকের। অথচ তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা করা সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত। উৎপাদন বৃদ্ধির প্রবণতাকে টেকসই করার ক্ষেত্রে যার বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর