সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আয়কর ফাঁকির মহোৎসব

পেশাজীবীদের সুমতি নিশ্চিত করুন

আয়কর ফাঁকির মহোৎসবে পেশাজীবীদের এক বড় অংশ জড়িত বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী সবাই যেন একাট্টা। এনবিআরের তদন্তে পেশাজীবীদের কর ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়েছে। কর ফাঁকিবাজের তালিকায় রয়েছেন রাজনীতিবিদরাও। বর্তমানে উচ্চ আদালতে চলমান ২৫ হাজার মামলায় ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকা পড়েছে এবং এর অধিকাংশ করফাঁকি সংক্রান্ত। আয়কর ফাঁকিবাজরা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছেন এমন অভিযোগও ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এনবিআরের একজন সাবেক চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আয়ের উৎস পেশাজীবীরা প্রকাশ করতে চান না। সরকার চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত ফির চেয়ে তারা বেশি নেন। একইভাবে আইনজীবীরা তাদের মক্কেলের কাছ থেকে কত টাকা নেন এরও হিসাব অন্য কেউ রাখেন না। শিক্ষকরা স্কুল-কলেজের বাইরে প্রাইভেট পড়ালেও নৈতিকতা দেখিয়ে সে আয়ের তথ্য প্রকাশ করেন না। এক কথায়, আইনজীবী ও শিক্ষকদের ফিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনকি তাদের লেনদেনের কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়াও নেই। দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের যে সাফল্য তা ব্যবসায়ীনির্ভর। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ে তারা যতটা সক্রিয়, ততটাই নিষ্ক্রিয় পেশাজীবীদের কাছ থেকে আদায়ে। ফলে দেশের লাখ লাখ পেশাজীবী এখনো আয়করের আওতায় আসেনি। তাদের নেই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন। এমনকি দেশে কতজন পেশাজীবী করদাতা আছেন, কোন পেশার করদাতা কী পরিমাণ আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছেন, এরও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আয়করের ওপর সরকারের রাজস্ব আয় অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকার পরিচালনা ও দেশের উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় হয়। পেশাজীবীদের আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকায় সরকার প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে এমন অসংখ্য কোটিপতি রয়েছেন যাদের নাম আয়কর দাতাদের তালিকায় নেই। যাদের নাম তালিকায় আছে তারা প্রকৃত আয় অনুযায়ী আয়কর দেন কিনা সেটিও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। বিশেষত ঘুষ বা উেকাচ বাবদ যারা লাখ লাখ টাকা আয় করেন তাদের সিংহভাগের নামই আয়কর দাতাদের তালিকায় নেই। দেশের উন্নয়ন ও জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে আয়কর ফাঁকির বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর